জিল্লুর রহমান, চবি: [২] চটগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর ফের কয়েক দফায় হামলা করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এঘটনায় দুইজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। নারী শিক্ষার্থীদেরকে শারীরিকভাবে হেনস্তা ও প্রক্টরের সামনে বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করার ও অভিযোগ উঠেছে।
[৩] সোমবার পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালনের উদ্দেশ্যে দুপুর আড়াইটার শাটল ধরার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশনে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। এসময় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ এসে শাটলের চাবি কেড়ে নেয় ও আন্দোলনের সমন্বয়ক সহ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের সামনে ফের প্রক্টরের উপস্থিতিতে কোটা সংস্কারপন্থীদের মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীরা।
[৪] কোটা সংস্কারপন্থী শিক্ষার্থীরা বলেন, দুপুরে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশনে জড়ো হই ষোলশহরে যেয়ে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য। তখন ছাত্রলীগ কর্মীরা এসে শাটলের চাবি নিয়ে নেয় ও আমাদের ওপর হামলা করে। এসময় তারা তালাত মাহমুদ রাফি সহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জিম্মি করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যায়। তখন আন্দোলনকারী জিম্মি হওয়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে যাওয়ার পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে তাদেরকে আটকে বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তারা এসময় রাস্তায় ফেলিয়ে বাঁশ-তক্তা দিয়ে এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করে ও ছাত্রীদেরকে হেনস্তা করেন। এসময় গুরুতর আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ২০-২১শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. মাহবুবুর রহমান।
[৫] ছাত্রীরা জানান, শহীদ মিনারের আমাদেরকে হেনস্তার প্রতিবাদে প্রক্টর কার্যালয়ে অভিযোগ দিতে যাই। এসময় ছাত্রলীগ আমাদের পথ রোধ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। আমরা প্রক্টর অফিসের ভিতরে ঢুকতে গেলে তারা দরজা আটকে থাকে ও আমাদেরকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করে। প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরদের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ আমাদের সাথে খুব খারাপ আচরণ করেছে। আমাদের দেখে নেওয়ার কথা বলেছে। আমরা নিরাপত্তা জনিত শঙ্কায় ভুগছি।
[৬] প্রক্টর অফিসের সামনে মারধরের শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমরা প্রক্টরের অফিসে ঢুকতে চাইলে ছাত্রলীগ বাধা দেয়, দরজা লাগিয়ে দিতে চায়। তখন আমি দরজা আটকালে তারা আমার পায়ে একাধিক লাথি মারেও হাতে আঘাত করে। আমাদের সব ছাত্রীর সঙ্গে তারা খারাপ আচরণ করেছে। তারা প্রক্টর অফিসের সামনেই আমাদের উপর হাত তুলেছে, বিশ্রী ভাষা ব্যবহার করেছে। প্রক্টররা সবকিছু দেখেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি উল্টো তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমাদেরকে ধমক দেন।
[৭] ছাত্রলীগের একাংশের নেতা সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব সোপান বলেন-
[৮] গতকাল যখন সার্বজনীনভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে তখন একটি পক্ষ হঠাৎ করে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ও জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বাজে স্লোগান দিতে থাকে, তখন প্রথমে তাদের ভিতর দ্বিধাবিভক্ত হয়ে নিজেরাই বাকবিতন্ডায় জড়ায়, পরে যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে স্লোগান দিচ্ছিল তখন ছাত্রলীগের ছেলেরা এসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থানকারীদের সমর্থন দেয় ও ধাওয়া পাল্টা শুরু হয়। তার ধারাবাহিকতায় আজকে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রলীগ। রাজাকার দাবি করা কোন গর্বের বিষয় না। বাংলার মাটিতে রাজাকারের কোন স্থান হবে না, আমরা প্রস্তুত স্বাধীনতা বিরোধী সকল অপশক্তিকে মোকাবেলা করতে।
[৯] বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. অহিদুল আলম বলেন, গতকাল রাতে যে বিশৃঙ্খলা হয়েছিল আমরা সে বিষয়ে অবগত ছিলাম না। যার জেরে আজ এঘটনা ঘটেছে। আমরা তদন্ত করে দেখব কারা দোষী।
[১০] এর আগে রোববার রাতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের ক্ষোভে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাঝরাতে 'তুমি কে, আমি কে- রাজাকার রাজাকার' স্লোগানে মিছিল করলে ক্যাম্পাসের কাটাপাহাড় রোডে পেছন থেকে অতর্কিত হামলা করে ছাত্রলীগ। এতে আহত হয় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।
এসবি২
আপনার মতামত লিখুন :