আশরাফ চৌধুরী রাজু, সিলেট: [২] সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলেছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সোমবার রাত সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
[৩] এতে কোটা আন্দোলনকারী তিনজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। এরা হলেন, ইংরেজী বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন শিশির, রসায়ন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ গালিব ও গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাফিজুল ইসলাম। তিনজনই সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
[৪] আহত শিক্ষার্থীরা হলেন, ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন শিশির, রসায়ন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ গালিফ এবং গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাফিজুল ইসলাম।
[৫] এ ঘটনার প্রতিবাদে গত কাল সোমবার বেলা ১১টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তিনটি দাবির কথাও বলেছেন তাঁরা। দাবিগুলো হলো- শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলার বিচার, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ ও হামলায় জড়িতদের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে।
[৬] প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকারীদের অবমাননা করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে রাত সাড়ে ১১টায় প্রধান ফটক থেকে ক্যাম্পাসে দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ছাত্রী হলের দিকে গেলে দুই শ থেকে তিন শ ছাত্রীও এতে যোগ দেন। পরে মিছিলটি ছাত্রীদের আবাসিক হল হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে আসে। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘তুমি কে আমি কে/ রাজাকার, রাজাকার’, ‘মেধা না কোটা/ মেধা মেধা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
[৭] বিপরীত দিক থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সজিবুর রহমানের নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মীও শাহপরাণ হল থেকে একটি মিছিল নিয়ে আসেন। তাঁরা স্লোগান দেন ‘আমার সোনার বাংলায় রাজাকারের ঠাঁই নাই’।
[৮] এসময় দুইপক্ষই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মুখোমুখি হলে ছাত্রলীগ কোটা আন্দোলনকারী এক হাজারের অধিক শিক্ষার্থীদেরকে মানবপ্রাচীর তৈরি করে বিক্ষোভ করতে বাধা দেন। এসময় শিক্ষার্থীরা বাধা উপেক্ষা করে যেতে চাইলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কয়েকজনকে মারধর করেন। এতে একজন শিক্ষার্থী মাথায় আঘাত পেয়ে রক্তাক্ত হন। তিনি গুরুতরভাবে আহত হন। পরবর্তীতে মিছিলটি ছাত্রলীগের বাধা উপেক্ষা করেই ছাত্রদের আবাাসিক হলে যায়। এরপর পুনরায় এসে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ মিলিত হয়।
[৯] এসময় আসাদুল্লাহ আল গালিফ অভিযোগ করে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে আমরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করছিলাম। আমরা খবর পাই মিছিলে আসতে আগ্রহী হলের কিছু ভাইকে ছাত্রলীগ আসতে বাধা দিচ্ছে। তাই আবাসিক ছাত্র হল অভিমুখে গেলে পথিমধ্যে ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসবাহিনীর সদস্যরা আমাদের মিছিলে বাধা দেয়। এক পর্যায়ে তাঁরা হামলা করে। আমাদের বোনদের আঘাত করে, নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়েছে। আমাদের তিনজন গুরুতর আহত হন। এছাড়া নারী শিক্ষার্থীসহ ২০ থেকে ২৬ জন শিক্ষার্থীও আহত হয়েছেন। অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।’ এখান থেকে নতুন কর্মসূচিও ঘোষণা করেন তিনি।
[১০] তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। সবার কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে, তা দেখলেই বুঝা যাবে। বরং আমরা সড়কের পাশে গিয়ে তাঁদের যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে এই অভিযোগ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
[১১] এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘দুইপক্ষ মুখোমুখি হলে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে তা স্বাভাবিক হয়ে যায়। কেউ আহত হয়েছে কিনা শিক্ষার্থীরা এমন কোনো বিষয়ে জানাননি।’ বর্তমানে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানান তিনি।
[১২] এর আগে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সৈয়দ মুজতবা আলী হলের দিকে ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি বঙ্গবন্ধু হল হয়ে শাহপরান হলের সামনে গেলে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা বাধা দেন। সম্পাদনা: এ আর শাকিল
প্রতিনিধি/এআরএস
আপনার মতামত লিখুন :