বিশ্বজিৎ দত্ত: প্রস্তাবিত বাজেটের উপর পর্যালোচনা করে শুক্রবার এ মন্তব্য করেন সিপিডির পরিচালক তৌফিক ইসলাম খান।
তিনি বলেন, বাজেটে সাধারণ মানুষের আকাক্সক্ষার স্থল ছিল, নিত্যপণ্যের দাম কমাতে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু পুরো বাজেটে সরকার এই বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছে। নিত্যপণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য একমাত্র বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে দায়ি করা হয়েছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায়ের ব্যর্থতা, ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ, টাকার অবমূল্যায়ন, বাজার মনিটরিংয়ে অব্যবস্থাপনা। এসব কারণেও যে মুল্যস্ফীতি হয়েছে এই বাজেটে তা একেবারেই অনুপস্থিত।
সিপিডি জানায়, সরকার মূল্যস্ফীতিকে ৬ এর নিচে নামিয়ে আনার যে ঘোষণা বাজেটে করেছে তা অবাস্তব। তাদের মনে আগামীতে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে।
বাজেট সম্পর্কে সিপিডি জানায়, সরকার বৈদেশিক দায়গুলো কীভাবে পরিশোধ করবে তার বিষয়ে বাজেটে কিছু বলেনি। রপ্তানি ফান্ড নিয়ে কোন কথা নেই। প্রাইভেট সেক্টরের বৈদেশিক ঋণ নিয়ে কোন কথা নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার কত ঋণ নিবে এ বিষয়েও কোন বক্তব্য নেই। রিজার্ভ কীভাবে বৃদ্ধি পাবে, হুন্ডি, মূদ্রা পাচার বন্ধে সরকারের কী পদক্ষেপ- এ নিয়েও কোন বক্তব্য নেই বাজেটে। সব মিলিয়ে বাজেটে গরীব মানুষের যে আকাক্সক্ষা ছিল তা পূরণ হয়নি। গরীব মানুষের জন্য যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিষয়টি ছিল তাতেও প্রহসন করা হয়েছে। ১ কেজি থেকে ২ কেজি চালের মূল্য বাড়িয়ে গরীব মনুষের সামাজিক নিরাপত্তা দেয়া যায় না।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আরো জানিয়েছে, প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ও বিনিয়োগ সূচকের ক্ষেত্রে যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে, তার সঙ্গে বাস্তবতার তেমন মিল নেই। দেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থায় লক্ষ্যগুলো বেশ উচ্চাকাক্সক্ষী। অনুমিতি বা প্রক্ষেপণের দুর্বলতার কারণে পরে বাজেট বাস্তবায়ন হোঁচট খাবে। তাতে শেষ পর্যন্ত হয়তো লক্ষ্য বাস্তবায়নও হবে না।
রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে গতকাল শুক্রবার সকালে বিস্তারিত বাজেট প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে সিপিডি। এ উপলক্ষে আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে পর্যালোচনা তুলে ধরেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, আগামী অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশ ধরা হয়েছে। আবার ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির অনুপাতে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ ছিল ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগ বাড়িয়ে ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে দেশের অর্থনীতি যেভাবে চলছে, সে আলোকে এসব লক্ষ্যমাত্রাকে উচ্চাকাক্সক্ষী বলে মনে হয়েছে।
এসব অনুমিতিগুলোর সঙ্গে বাস্তবতার আসলে কোনো মিল নেই উল্লেখ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, এসব লক্ষ্য অর্জন করা অনেক কঠিন হবে এবং শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হবে না বলে আমার ধারণা। চলমান সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো পুরোপুরি অনুধাবন করতে এবং সে অনুযায়ী সমাধান খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে বাজেটে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেই। আমরা মনে করি বাজেটে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা দিয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।’
সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগেও আমরা দেখেছি, সংকটের মূল কারণগুলো অনুধাবন না করে বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। এ জন্য শেষ পর্যন্ত অনুমিতিগুলো সত্য হয় না। বাস্তবতাকে বিবেচনায় না নিয়ে আকাক্সক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে বাজেট করলে এমন অবস্থা হয়।
মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দেশের অর্থনীতি ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ বৈশ্বিক সংকট তৈরি হওয়ার পরে সেটাকে বিবেচনায় না নিয়ে গত বছর বাজেট করা হয়েছে। এর ফলে বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটেও বর্তমান বাস্তবতাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এই উচ্চ আকাক্সক্ষার বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে রাজস্ব আয় চলতি বছরের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়াতে হবে। আর লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় না হলে তখন ঘাটতি মেটাতে হয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে বা এডিপি কাটছাঁট করতে হবে। তা না হলে বৈদেশিক ঋণ নিতে হবে। ফলে অনুমিতির দুর্বলতার কারণে পরে অর্থনীতি প্রতিটি জায়গায় হোঁচট খাবে।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এবারের বাজেটে সবচেয়ে দুর্বলতম জায়গা হচ্ছে মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো উদ্যোগ ঘোষণা করতে না পারা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে যে প্রত্যাশা রয়েছে, সে আকাক্সক্ষা মেটাতে এ বাজেট ব্যর্থ হয়েছে। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব
আপনার মতামত লিখুন :