শিরোনাম
◈ সরকার যেসব শর্ত দিয়েছে মানবিক করিডোরের জন্য  ◈ কাঙ্ক্ষিত বাণিজ্যের জন্য পাকিস্তান-বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসতে হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা ◈ আমরা আরেকটা গাজা হতে চাই না: রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ প্রসঙ্গে ফখরুল (ভিডিও) ◈ অভিনেতা ইরেশ জাকেরের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল যা বললেন ◈ প্রথম আলোর ঈদ কার্টুন ইস্যুতে সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন, ৪ মে আদেশ ◈ সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য বেতন গ্রেড নিয়ে সুখবর ◈ বিল পরিশোধ না করায় ইউনাইটেড গ্রুপের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন ◈ ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক ◈ ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ না পড়াতে আইনি নোটিশ ◈ ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগরে আধিপত্য নিয়ে দুই পক্ষ মুখোমুখি, আহত-২০

প্রকাশিত : ২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০৮:১৭ রাত
আপডেট : ২৯ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:০৪ রাত

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

গ্যাস সংকটে শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত, দাম বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ উদ্যোক্তারা

মনজুর এ আজিজ : গ্যাস সংকটে শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অনেক কারখানার উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। মারাত্নক এ গ্যাস সংকটের মধ্যে আবার নতুন করে ৩৩ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধিতে ক্রমেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন উদ্যোক্তারা। তাছাড়া গ্যাস সংকটের কারণে ইতোমধ্যে কয়েক শ’ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কমেছে রপ্তানি আয়, থমকে দাঁড়িয়েছে বিনিয়োগের চাকাও। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জাতীয় গ্রিডে দুই বছর আগেও দিনে প্রায় ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো। বর্তমানে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ২  হাজার ৬৯৮ মিলিয়ন ঘনফুটে। এতে দৈনিক ঘাটতি পড়ছে অন্তত ৩০২ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে শিল্প-কারখানার উৎপাদন হ্রাসের সঙ্গে সিএনজি স্টেশন, আবাসিক খাতসহ সব ক্ষেত্রেই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ সময় (৩-৪) ঘন্টা লাইনে থেকেও গাড়িতে গ্যাস নিতে পারছেন না প্রাইভেটসহ বিভিন্ন পরিহন মালিকরা। সিএনজি স্টেশনে গ্যাসের চাপ না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিভিন্ন শেণি-পেশার মানুষ। গ্যাস সংকটে অনেক সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখা হচ্ছে। এছাড়া গ্যাস সংকটে সিরামিক, ইস্পাত, রি-রোলিং মিল ও টেক্সটাইল খাতের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে।

জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েক বছর ধরে দেশীয় কূপগুলোয় গ্যাসের উৎপাদন কমছে। চাহিদা সামাল দিতে অন্তর্বর্তী সরকার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়িয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো হলেও চাহিদামতো গ্যাস পাচ্ছে না বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি)। ফলে সরাদেশে গরমের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের লোডশেডিং।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীর শিল্প-কারখানাগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ায় উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। গ্যাসের চাপ কম থাকায় এসব এলাকার শিল্প-কারখানা কখনো চলছে, কখনো বন্ধ থাকছে। গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিজস্ব ব্যবস্থা থাকলেও গ্যাস সংকটে শিল্প-কারখানাগুলো তা চালাতে পারছে না। অনেকে বাধ্য হয়ে বিকল্প জ্বালানি এলপিজি ব্যবহার করছেন। এতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গিয়ে উদ্যোক্তাদের মুনাফা কমছে। পাশাপাশি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। 

পেট্রোবাংলা সূত্রের বরাত দিয়ে একটি জাতীয় দৈনিক জানায়, বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে রোববার গ্যাস সরবরাহ করা হয় ২ হাজার ৬৯৮ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে ঘাটতি ছিল প্রায় দেড় হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। মোট ২ হাজার ৬৯৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে ১ হাজার ৮৪২ মিলিয়ন ঘনফুট ও আমদানীকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) থেকে ৮৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়।

বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, সিরামিক খাতসহ শিল্পে গ্যাসসংকট বাড়ছে। সিরামিক খাতের প্রধান জ্বালানি গ্যাস। দীর্ঘদিন ধরে চলা গ্যাসসংকটে সিরামিক খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এরই মধ্যে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে গ্যাসের স্বল্প চাপের কারণে গাজীপুর ও নরসিংদী অঞ্চলের কারখানাগুলোর ৫০ শতাংশ উৎপাদন কমে গেছে। তবে গ্যাসের চরম সংকট বিরাজ করছে সাভার ও ধামরাই অঞ্চলের কারখানাগুলোতে। এসব এলাকার সিরামিক কারখানার উৎপাদন প্রায় ৭৫ শতাংশই কমে গেছে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন ডিভিশন) প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, আমরা চাহিদামতো গ্যাস পাচ্ছি না। বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি গ্যাস সরবরাহ দিতে হচ্ছে। ফলে শিল্পে ও আবাসিকে প্রভাব পড়েছে। আশা করছি আগামী মাসের শুরুতে এলএনজির সরবরাহ কিছুটা বাড়বে, তখন গ্যাসের সংকট কিছুটা কাটবে।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, আমাদের গ্যাসের উৎপাদন কমে যাচ্ছে, আবার এলএনজি আনতে যে আর্থিক সামর্থ্য প্রয়োজন, তাও কম। তাই চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস দেওয়া যাচ্ছে না। আর গ্যাস সংকটে বিদ্যুতের উৎপাদনও কিছুটা কম হচ্ছে। ফলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তবে এ লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। এবার শহর ও গ্রামে একই পরিমাণ লোডশেডিং দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়