নিজস্ব প্রতিবেদক : মার্চেন্ট পাওয়ার প্লান্ট পলিসি হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ বিক্রি করা সহজ হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ। তিনি বলেন, তখন চট্টগ্রামের কোন উদ্যোক্তা চাইলে নিজের উৎপাদিত বিদ্যুৎ তৃতীয়পক্ষের কাছে বা দিনাজপুরের গ্রাহকের কাছে সহজে বিক্রি করতে পারবেন। রোববার সামরিক জাদুঘরে বিডব্লিউজিইডি ও ক্লিন এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী সবুজ জ্বালানি অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠানের সমাপনি দিনে এ মন্তব্য করেন তিনি। এ আয়োজনে দেশের ১৫০টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪৯০০ শিক্ষার্থী অংশ নেন।
প্রতিযোগিতাটি ছয়টি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে অংশগ্রহণকারীদের জ্ঞান, বিশ্লেষণ এবং যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়। তাদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন, রানার আপসহ শীর্ষ ৫০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।
বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, মার্চেন্ট পাওয়ার প্লান্ট পলিসি নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারে অনেক ভূমিকা রাখবে। এর আওতায় কোন উদ্যোক্তা নিজের উৎপাদিত বিদ্যুৎ তৃতীয়পক্ষের কাছে বিক্রির সুযোগ পাবেন। জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে দেশের যে কোন প্রান্তে বিক্রি করতে পারবেন। এতে উদ্যোক্তারা বাজার খুজে নিতে পারবেন ফলে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য বলতে আমরা সোলারকে বুঝে থাকি। কিন্তু আমাদের কক্সবাজারে বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে একটি কোম্পানি। তারা নতুন করে আরও ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার পরিকল্পনা করছে। তার অর্থ হচ্ছে খাতটি সম্ভাবনাময়।
তিনি বলেন, আমার প্রোফাইলে দেখবেন আমি একজন ফটোগ্রাফার। আমি মাঠে ঘাটে থাকি পাহাড়ে থাকি, প্রতিবছর একই জায়গায় যাচ্ছি, জায়গাগুলোর পরিবর্তন দেখতে পাই, আমরা ধ্বংস করছি পরিবেশ ও প্রতিবেশকে। আমি হাওরাঞ্চলের বাসিন্দা, আগে হাওরে গেলে যে পরিমাণ পাখির দেখা মিলতো এখন আর দেখা যায় না। আমাদের দায়িত্ব পৃথিবীটাকে সুন্দর রেখে যাওয়া।
তিনি বলেন, আমরা যখন গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিই তখন বৈষম্যের প্রশ্ন এসেছিল, আমি জবাব দিইনি। আমি মনে করি সুযোগ সৃষ্টি করবে। বিকল্প যদি সহজলভ্য হয় তাহলে লোকজন সেদিকে যাবে। ভারতে ৪ থেকে ৫ সেন্টসে সৌর বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। তাদের সরকার জমি ও সঞ্চালন লাইন করে দিচ্ছে। আমরা জমি দিতে না পরলে ৭ থেকে ৮ সেন্টস হওয়া উচিত। ২০২৬ সালের মধ্যে সকল গার্মেন্টে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল বসবে।
এটা করতে পারলে বড় অগ্রগতি হবে। ৭৫ টাকায় গ্যাস আমদানি করে ১২-১৭ টাকায় বিক্রি করা কোনোভাবেই টেকসই সমাধান নয়। এর চেয়ে অনেক বেশি টেকসই ও ব্যয়সাশ্রয়ী হবে যদি আমরা সৌরবিদ্যুতের দিকে যেতে পারি। গ্রিন এনার্জি নিয়ে তরুণদের উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের সম্পৃক্ততা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এখন সময় এসেছে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে যথার্থ গুরুত্ব দেওয়ার।
পাওয়ার সেলের উপ-পরিচালক সেলিম উল্লাহ খান বলেন, গ্রিন এনার্জিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির যে টাগের্ড ছিল অর্জন করতে পারিনি। তবে সরকার আর ফসিল ফুয়েলের নতুন কোন প্রকল্প নিচ্ছেনা। শুধু সংস্কার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট জাহিদুল আলম বলেন, সোলার হোমস সিস্টেমে আমরা বিশ্বে রেকর্ড করেছিলাম। চাহিদা এখন আরও বেড়ে গেছে। সোলার প্যানেল সবচেয়ে সাশ্রয়ী অবস্থায় চলে এসেছে। পনের বছর আগে যার দাম ছিল ১ ডলার এখন সেটি কমে ৯/১০ সেটসে চলে এসেছে। আমাদের বিনিয়োগের সমস্যা নেই।
সঞ্চালনা করেন উপকূলীয় জীবনযাত্রা এবং পরিবেশ কর্মজোর্টের (ক্লিন) প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জ্বালানি ভবিষ্যৎ কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রশ্ন নয়, এটি ন্যায্যতা, পরিবেশ এবং প্রজন্মান্তরের নিরাপত্তার প্রশ্ন। এখনই সময়, বিদেশনির্ভর জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে এসে স্থানীয় ও টেকসই উৎসকে কেন্দ্র করে ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তরের পথে এগিয়ে যাওয়ার। জ্বালানি সেক্টরে তরুণদের স্বতঃস্ফুর্ত সম্পৃক্ততা এখন আবশ্যক বিষয়।