মনজুর এ আজিজ : জ্বালানির চাহিদা মেটানো ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নতুন বিনিয়োগ খুঁচছে সরকার। এজন্য বিনিয়োগকারীদের উদ্বুদ্ধ করতে জ্বালানি খাত বিষয়ক প্রেজেন্টেশন তৈরি করে বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে সরকার। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের উদ্বুদ্ধ করতে নানা কৌশলে জ্বালানি বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের কৌশলগত বিনিয়োগের গন্তব্য হতে পারে বাংলাদেশ। এতে উভয় দেশই লাভবান হবে। পাশাপাশি তাদের বিনিয়োগকৃত মূলধনও ফিরিয়ে নিতে পারবে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ কেন লাভজনক হবে তাও তুলে ধরেছে জ্বালানি বিভাগ। জানা গেছে, ‘ইওর স্ট্রাটিজিক ইনভেস্টমেন্ট ডেসটিনেশন/এনার্জি ল্যান্ডস্ক্যাপ অব বাংলাদেশ/ইওর ক্যাপিটাল, আওয়ার গ্রোথ-এ উইনিং পার্টনারশিপ’ নামে এক প্রচারণার মাধ্যমে এই বিনিয়োগ আহ্বান করা হচ্ছে।
আগামী পাঁচ বছরের জ্বালানি চাহিদার তথ্য তুলে ধরে এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জ্বালানি খাত বিনিয়োগের জন্য খুবই সম্ভাবনাময়। এক্ষেত্রে জ্বালানির চাহিদা সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা চলছে। বলা হচ্ছে- বর্তমানে দেশের প্রধান জ্বালানি গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে দৈনিক সরবরাহ করা হচ্ছে ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে দৈনিক ঘাটতি থাকছে ১২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। ফলে ব্যাপকভাবে এখানে বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া বলা হচ্ছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দেশে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে হবে ৬ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট, আর ২০৩০ সালে তা গিয়ে দাঁড়াবে সাড়ে ৮ হাজার মিলয়ন ঘনফুটে। বিশাল এই গ্যাসের চাহিদা মেটাতে সরকার ২০০ নতুন কূপ খনন করার উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি এলএনজি আমদানি করে অভ্যন্তরীণ চাহিদার এক বড় অংশ মেটানোর চেষ্টা করছে সরকার। ফলে এলএনজি বাণিজ্য এবং অভ্যন্তরীণ গ্যাস উপাদন দুই জায়গাতেই ব্যাপক বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে দেশে প্রতিবছর জ্বালানি তেলের চাহিদা ৪ ভাগ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন বছরে ৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। তবে মোট চাহিদার ২০ শতাংশই ইআরএল (ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড) এর মাধ্যমে পরিশোধন করা হয়। ইআরএল বছরে দেড় মিলিয়ন মেট্রিক টন জ্বালানি পরিশোধন করে। এর বাইরে বাকি পরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়। বিনিয়োগকারীদের বলা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে তরল জ্বালানির চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ১২ মিলিয়ন মেট্রিক টন।
পাশাপাশি এক দশমিক ৩ মিলিয়ন টন বার্ষিক চাহিদার এলএনজি ২০৩০ এ গিয়ে ঠেকবে ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টনে। এর বাইরে কয়লার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। যদিও দেশের কয়লাচালিত বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র আমদানিনির্ভর। এখন বিশ্ববাজারে কয়লার দাম টন প্রতি ৬২ ডলারে নেমে এসেছে। যে কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফের কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রর দিকে নজর দিয়েছে। কয়লার দাম কমাতে কয়লা বিদ্যুতের দাম গত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ কমে এসেছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ এবং তার আগের বছর ২০২৩ এ কয়লার দাম টন প্রতি ২০০ ডলার অতিক্রম করে। তবে সম্প্রতি কয়লার বাজার পড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশও খরচ কমাতে কয়লার প্রতি বিশেষ নজর দিচ্ছে। যদিও জ্বালানি বিভাগের এই প্রচারণায় দেশীয় খনির মজুদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) এস এম মঈন উদ্দীন আহম্মেদ গণমাধ্যমকে বলেন, জ্বালানির চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ক্রমবর্ধমান এই জ্বালানি চাহিদা পূরণ করতে হলে বৈদেশিক বিনিয়োগ ছাড়া সম্ভব নয়। আমাদের বেশ কিছু প্রজেক্ট আছে যেগুলোর জন্য আমরা বিনিয়োগ খুঁজছি। যেমন অনেক বছর ধরেই ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের আলোচনা চলছে, কিন্তু এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন। এ টাকা কোত্থেকে কিভাবে আসবে তা নিয়ে আমরা চিন্তিত! এজন্য মোটা দাগে আমাদের অনেক বিনিয়োগ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা কাতারের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করেছি। এ রকম অনেক অনেক প্রকল্প আছে যেখানে আমাদের বিনিয়োগ প্রয়োজন। আমরা পরিকল্পনা করেছি। পরিকল্পনা করেই এগোতে চাই। যাতে আমাদের বিনিয়োগ বাড়ে।