আগামী অর্থবছরের (২০২৫-২৬) জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বাজেটের এই আকার চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কমায় আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার ছোট হচ্ছে।
স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম আগের বছরের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার ছোট হচ্ছে। মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকুচিত মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি ব্যয় কমানো ও বাজেট ‘বাস্তবায়নযোগ্য’ করতেই আকার কমানো হচ্ছে- বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, বাজেটের আকার কমানো হলেও সমাজে বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপে নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে সামাজিকীকরণ সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগী ও কিছু ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ থাকছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে। একই সঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও বাজেট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভায় বাজেটের এই আকার নির্ধারণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ভাচ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত এ সভায় আগামী বাজেট বিষয়ে একটি উপস্থাপনা দেন অর্থসচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার।
সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা, বাণিজ্য উপদেষ্টা, খাদ্য উপদেষ্টা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যোগ দেন।
আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশ ধরতে পারে। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অবশ্য বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এডিবির পূর্বাভাস হলো- এবার প্রবৃদ্ধি এর চেয়ে অনেক কম হবে।
এদিকে আগামী অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। চলতি অর্থবছরেও একই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। তবে গত মার্চ মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
সাধারণত প্রতি অর্থবছরেই বাজেটের আকার আগের অর্থবছরের তুলনায় বড় রাখা হয়। তবে এবার বাজেট ঘাটতি কমিয়ে রেখে বাজেট ছোট কারার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধারা হতে পারে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে যা ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য যে ঘাটতি ধরা হচ্ছে, সেই ঘাটতির অর্ধেকেরও বেশি বিদেশি উৎস থেকে এবং বাকিটা ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রাণালয় সূত্র জানা গেছে, নতুন বাজেটের আকার কমলেও পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে এ খাতের ব্যয় ধরা হতে পারে ৫ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা।
অনুন্নয়ন ব্যয় বাড়লেও কমবে উন্নয়ন ব্যয়। নতুন অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হতে পারে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হতে পারে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। এর এডিপি-তে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেওয়া বেশিরভাগ মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে। আর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মেগা প্রকল্প গ্রহণ না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া, বিগত সরকারের সময় রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া প্রকল্পগুলো বাতিল করায় আগামী অর্থবছর প্রকল্পের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে নতুন অর্থবছর উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় কমবে।
এদিকে, রাজস্ব আহরণে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হওয়া এবং বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান কমে যাওয়ায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দিয়ে আগামী অর্থবছরের ব্যয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, বাজেটের আকার কমলেও এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হচ্ছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরের মাধ্যমে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হতে পারে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আহরণ অনেক কম হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়। সার্বিকভাবে এনবিআরের পক্ষ থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে এনবিআরের কাঁধে রাজস্ব আদায়ের ভার বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। উৎস: জাগোনিউজ২৪