শিরোনাম
◈ পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার কাজের অগ্রগতি কেমন? ◈ দেশের রিজার্ভ বেড়ে ২৬ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার ◈ আরও ৭ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন ◈ স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম আগের বছরের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার ছোট হচ্ছে ◈ স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে নারী বিশ্বকা‌পের মূলপর্বের দ্বারপ্রা‌ন্তে বাংলাদেশ ◈ আমরা খেলেছি গাজার জন্য, আন্ডারডগ হ‌য়েও চ্যাম্পিয়ন ফিলিস্তিনের মেয়েরা ◈ ১৫ বছর পর পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠকে বসছে ঢাকা-ইসলামাবাদ ◈ আমাদের পূর্ণ গতিতে এগোতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা ◈ বজ্রপাতে নেত্রকোনায় তিনজন নিহত ◈ বাংলাদেশে ফের পূর্ণ সক্ষমতায় আদানির  দুই ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে

প্রকাশিত : ১৫ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:৩২ রাত
আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ০৪:০৮ সকাল

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

গ্যাস ও সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে সাধারণ মানুষ, অযৌক্তিক বলছেন রাজীতিবিদরা

মহসিন কবির: গ্যাস ও সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েবেন সাধারণ মানুষ। জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। রমজানের পর নিত্যপণ্যের দাম কয়েক দফা বেড়েছে। এরপর আবার গ্যাস ও সয়াবিন তেলের। এটা যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। 

নতুন শিল্পে বিকাশের স্বার্থে গ্যাস এবং সয়াবিন তেলের মুল্যবৃদ্ধির অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ‘গ্রাহক পর্যায়ে সয়াবিন তেলের মূল্য লিটার প্রতি ১৪ টাকা এবং নতুন শিল্পে গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিট ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করেছে তা অযৌক্তিক।’

সরকারের ভর্তুকি কমিয়ে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দামের সাপেক্ষে দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তবে এই মূল্যবৃদ্ধি সাময়িক। তিনি বলেন, বাজারে সরবরাহ ও প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে দাম কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। শিল্পের বয়লারে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ঘনমিটার প্রতি ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা, এবং ক্যাপটিভে ৩১.৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪২ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

নতুন শিল্পের পাশাপাশি এখন যারা অনুমোদিত লোডের বেশি গ্যাস ব্যবহার করছেন- সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকেও ৩০ টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকা দরে বিল দিতে হবে। নতুন দর চলতি এপ্রিল মাসের বিল থেকেই কার্যকর হবে। রোববার (১৩ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন দর ঘোষণা করেন বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য মিজানুর রহমান, সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া, আব্দুর রাজ্জাক ও শাহীদ সারোয়ার।

ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টে গ্যাসের নতুন হার: বিইআরসি জানায়, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ শ্রেণির ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম একই হারে বাড়ানো হয়েছে। ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের প্রতি ঘনমিটারে ৪২ টাকা দিতে হবে, যা পূর্বে ছিল ৩১ টাকা।

এছাড়া বর্তমান গ্রাহকরা যদি তাদের অনুমোদিত লোডের ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করেন, তবে তাদেরও প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের জন্য দিতে হবে ৪২ টাকা। অন্যদিকে, ৫০ শতাংশের কম ব্যবহার করলে গ্যাসের মূল্য হবে প্রতি ঘনমিটার ৩১.৫০ টাকা।

শিল্প খাতে গ্যাসের নতুন হার: শিল্প খাতের নতুন ভোক্তাদের জন্য গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগে ছিল ৩০ টাকা। যেসব পুরাতন শিল্প গ্রাহকরা তাদের পূর্বের অনুমোদিত লোডের চেয়ে ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করবেন, তাদের ক্ষেত্রেও গ্যাসের দাম হবে প্রতি ঘনমিটার ৪০ টাকা। তবে যারা ৫০ শতাংশের কম ব্যবহার করবেন, তাদের জন্য গ্যাসের দাম পূর্বের মতোই ৩০ টাকা থাকবে।

মাঝারি শিল্পে মূল্য বৃদ্ধি: মাঝারি শিল্প খাতে গ্যাসের দাম ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়েছে। যদি কোনো ভোক্তা পূর্বের অনুমোদিত লোডের চেয়ে ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করেন, তবে অতিরিক্ত ১০ টাকা হারে গ্যাসের মূল্য বাড়বে। এর আগে বিদ্যমান গ্রাহকদের দর (শিল্প ও ক্যাপটিভে গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৩০ ও ৩১ দশমিক ৭৫ টাকা) অপরিবর্তিত রেখে নতুন ও প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে পেট্রোবাংলা। প্রস্তাবের ওপরে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি গণশুনানি হয়। সেখানে পেট্রোবাংলার দাবি ছিল, দাম না বাড়ালে বছরে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তবে পেট্রোবাংলার ওই দাবির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট অংশীজনেরা প্রতিবাদ জানান।
 
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ ডিডাব্লিউকে বলেছেন, হঠাৎ করে এই মূল্যবৃদ্ধিতে দেশে-বিদেশে খারাপ বার্তা যাবে। নতুন বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ দেখাবেন না। ফলে দেশে শিল্প কলকারখানা স্থাপনে স্থবিরতা নেমে আসবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এমনিতেই আমাদের পণ্যে সাড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। এর সঙ্গে সম্প্রতি আরও ১০ শতাংশ যোগ হয়েছে।

এতেই আমরা অনেক বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছি। এরপর গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি আমাদের দারুণভাবে হতাশ করেছে। আমরা এমনিতেই প্রতিযোগিতা থেকে পিছয়ে পড়ছি, এতে আমাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা আরও কমে যাবে। এখন তো সরকার ঠিকমতো গ্যাসই দিতে পারছে না। প্রায়ই মিটার জিরোতে চলে আসে। উৎপাদন ঠিক রাখতে আমাদের ডিজেলের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে কী পরিমাণ খরচ বাড়বে, সেটা এফোর্ট করার সক্ষমতা কি আমাদের আছে?

তবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ডিডাব্লিউকে বলেছেন, এতে কোনো বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে না। বরং বিনিয়োগকে মজবুত করবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, গ্যাসের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। আমরা সেই ঘাটতি মেটানোর জন্য এলএনজি আমদানি করছি। এটা আমদানির মূল্য হচ্ছে ৭০ টাকার মতো। এখন শিল্পে গ্যাসের দাম ৩০ টাকার মতো।

এখন ৪০ টাকা ভর্তুকি দিয়ে আপনি কতদিন চালাবেন? জ্বালানি খাতে ভর্তুকির পরিমাণ এখনই ২০ হাজার কোটি টাকা। এটা দিন দিন বাড়ছে। এখন গ্যাসের এই বৃদ্ধির ফলে দাঁড়িয়েছে ৪০ টাকার মতো। তারপরও ৩০ টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। এই মূল্যবৃদ্ধিটা একটা সিগন্যাল এই কারণে যে, গ্যাস কমে যাচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীরা প্ল্যান করবেন, গ্যাস এফিসিয়েন্ট মেশিন তারা আনবেন, গ্যাসের বিকল্প হিসেবে এলপিজি ব্যবহার করবেন। এখনই যদি আমরা এই সিগন্যাল না দেই তাহলে আরো শিল্প কলকারখানা হলো কিন্তু তাদের তো আমরা ৭০ টাকা দিয়ে এলএনজি আমদানি করে ৩০ টাকায় দিতে পারবো না।  

সরকারের নীতিনির্ধারকরা দেশের কারখানা বন্ধ করে দেশটাকে আমদানি নির্ভর করতে চান বলে মনে করেন কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম। 

ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, কাদের পরামর্শে এটা করা হচ্ছে? যারা পরামর্শ দিচ্ছে তারাও জানেন এগুলো করলে ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে। দেশটাকে আমদানি নির্ভর করা যাবে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে নতুন কারখানা তো হবেই না, পুরনো কারখানাগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। সরকার যেটা চাচ্ছে এলএনজির মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করতে। দেশে গ্যাস উৎপাদনের কোনো আগ্রহ নেই, আমদানি নির্ভর করতে পুরোপুরি এলএমজির উপর নির্ভরশীল করা চেষ্টা হচ্ছে। আমরা গণশুনানিতে সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে যুক্তি তুলে ধরেছিলাম। কিন্তু তারা কিছুই শোনেনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়