শিরোনাম
◈ মুসলিম দেশগুলো গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবিতে একমত ◈ সৌদি রাষ্ট্রদূত ও মডেল মেঘনার পরিচয় আট মাসের, চার মাসে ‘বাগদান’ ◈ ‘মহাকাশ প্রযুক্তিতে সহযোগিতা বাংলাদেশ-তুরস্কের জন্য লাভজনক হবে’ ◈ ডিসেম্বরে ভোট ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি ◈ আজকের এই সমাবেশ কেবল প্রতিবাদ নয়,  একটি অঙ্গীকার, একটি শপথ ◈ আরও ৬ হাজার টন চাল এলো ভারত থেকে ◈ শোবার ঘরে সিসি ক্যামেরা: শার্শার সেই ফাতিমাতুজ্জোহরা মহিলা ক্বওমী মাদ্রাসা বন্ধের নির্দেশ ◈ অভিষেকের ব‌্যা‌টিং তাণ্ড‌বে হায়দরাবাদের সহজ জয় ◈ বিকল্প ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশিদের ভিসা দিতে সম্মত রোমানিয়া ◈ পহেলা বৈশাখে আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণে ডিএমপির নির্দেশনা

প্রকাশিত : ১২ এপ্রিল, ২০২৫, ০১:৩৬ দুপুর
আপডেট : ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ০২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভারতের তৈরি পোশাক বাজারে বাংলাদেশের আধিপত্য ক্রমেই সুসংহত হচ্ছে

ভারত বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করার পর দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে আলোচনা ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তে পরিমাণে কম হলেও আর্থিক প্রভাব পড়তে পারে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক খাতে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্রের (আইটিসি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত তিন বছরে ভারতের তৈরি পোশাক আমদানিতে বাংলাদেশের অংশ ছিল গড়ে ৪১ শতাংশের বেশি। ২০২২ সালে ভারত তৈরি পোশাক আমদানি করেছিল ১৭৩ কোটি ডলারের, যার মধ্যে ৭১ কোটি ১০ লাখ ডলারের পণ্য যায় বাংলাদেশ থেকে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালেও একই প্রবণতা বজায় ছিল। বিকেএমইএ ও বিজিএমইএ সূত্র বলছে, ভারতের বাজারে বাংলাদেশের নিট ও ওভেন পোশাকের প্রতিযোগিতামূলক মূল্য, মান এবং সরবরাহ সক্ষমতা এখনও আকর্ষণীয়।

পরিসংখ্যান বলছে, ভারতের তৈরি পোশাক বাজারে বাংলাদেশের আধিপত্য ক্রমেই সুসংহত হচ্ছে। 

আইটিসি-এর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে ভারত বিশ্ববাজার থেকে ১৭২ কোটি ৫৫ লাখ মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করে। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে যায় ৭১ কোটি ৯ লাখ ডলারের পণ্য, যা ভারতের আমদানির ৪১.২০ শতাংশ। ২০২৩ সালে দেশটির আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫৬ কোটি ৪৪ লাখ ডলারে, যার মধ্যে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ ডলারের পোশাক যায় বাংলাদেশ থেকে— অর্থাৎ বাংলাদেশের অংশীদারত্ব ৪২ দশমিক ৩১ শতাংশ। ২০২৪ সালে ভারতের মোট তৈরি পোশাক আমদানির পরিমাণ ছিল ১৫৪ কোটি ৫৮ লাখ মিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ৬৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ, দখলে রাখে ৪১ শতাংশ বাজার। অর্থাৎ তিন বছর ধরেই ৪০ শতাংশের ওপরে অবস্থান করে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের জন্য এটি একটি বড় অর্জন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। 

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক এবং বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা ও গ্রহণযোগ্যতার প্রতিফলন। ভারতের মতো বিশাল ও বৈচিত্র্যময় বাজারে আমাদের পণ্যের প্রতি আগ্রহ আগামী দিনে আরও সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি করছে।’

তিনি বলেন, ‘রাজনীতি যাই হোক, ভারতের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক চাহিদা কমবে না। বরং এখন আরও কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় হতে হবে।’

তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল সরাসরি পোশাক রফতানিতে প্রভাব না ফেললেও এটি দুই দেশের ব্যবসায়িক আস্থায় ঘাটতি তৈরি করতে পারে। ভবিষ্যতে স্থায়ী ও নিরবচ্ছিন্ন বাণিজ্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি বলে মত তাদের।

অপরদিকে ইপিবির হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ভারতের বাজারে ১২৫ কোটি ১৭ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করেছে, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ কোটি ২৯ লাখ ডলার বেশি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে ৪৭ কোটি ৮২ লাখ ডলার, যা এই সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি—১৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের মতো বিশাল বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের গ্রহণযোগ্যতা ক্রমাগত বাড়ছে, যা দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার পরিধিকে বিস্তৃত করছে।

নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ-এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ভারতে আমাদের পোশাকের ভালো বাজার তৈরি হয়েছে। একসময় রফতানি ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল, পরে কিছুটা হোঁচট খেলেও আবার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে। এই গতি ধরে রাখতে হলে কূটনৈতিকভাবে আরও সক্রিয় হতে হবে।’

২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতকে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছিল ২১৩ কোটি ডলার, যা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। তবে পরের অর্থবছরে কিছুটা ভাটা পড়ে রপ্তানি কমে আসে ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ডলারে। 

বাণিজ্য ঘাটতি কত?

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রতিবছর ভারতে ২ বিলিয়ন ডলারের কম পণ্য রফতানি করলেও আমদানি করে প্রায় ৮ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। অর্থাৎ, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভারতে বাংলাদেশের বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে পণ্য আমদানি করে প্রায় ৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসেই (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ভারতের বাজারে রফতানি করেছে ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। রফতানি পণ্যের মধ্যে তৈরি পোশাক, পাটজাত পণ্য, চামড়া ও প্লাস্টিক সামগ্রী রয়েছে। অন্যদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য আসছে প্রধানত চাল, গম, নানা প্রকার কৃষিপণ্য, অটোমোবাইল যন্ত্রাংশ, কাঁচামাল ও বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য।

ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল হলেও চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের সুবিধা নিচ্ছে ভারত 

২০২০ সালের ২৯ জুন ভারত ‘ব্যবসা সহজীকরণ’ নীতির আওতায় বাংলাদেশকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেয়। এর আওতায় পণ্য বেনাপোল-পেট্রাপোল দিয়ে ভারতের ভূখণ্ড অতিক্রম করে কলকাতার দমদম বিমানবন্দর কিংবা সমুদ্রবন্দর হয়ে তৃতীয় দেশে যেতো। কিন্তু গত ৯ এপ্রিল ভারতের সিবিআইসি আকস্মিকভাবে ওই সুবিধা বাতিল করে। ফলে একইদিন বেনাপোলে আটকে যায় তৈরি পোশাক খাতের তিনটি প্রতিষ্ঠানের চারটি ট্রাকভর্তি রফতানিযোগ্য পণ্য। এসব পণ্য স্পেনে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস ট্রাকগুলোকে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ায় তা ফেরত নিতে হয়।

তবে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমতি এখনও বলবৎ আছে ভারতের জন্য। ২০১৮ সালের চুক্তির আওতায় ২০২৪ সালের ২৪ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একটি আদেশ জারির মাধ্যম ভারতের আমদানি-রফতানিকারকরা এ সুবিধা পাচ্ছেন। উৎস: বাংলাট্রিবিউন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়