দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে বিদেশি ল ফার্মের সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের সম্মেলন কক্ষে ‘অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও সমসাময়িক ব্যংকিং ইস্যু’ বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা জানান।
গভর্নর বলেন, ‘বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে আমরা বিদেশি ল ফার্ম নিয়োগ করেছি। কারণ আমরা সিস্টেমেটিক্যালি এ ধরনের সমস্যা আগে ফেস করিনি। করলেও এ ধরনের প্রচেষ্টা আগে নেয়া হয়নি। এই প্রথম আমরা এই উদ্যোগ নিচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা দেশের আইনে শুধু হবে না, বিদেশিদের সঙ্গে আমাদের সংযোগ স্থাপন করতে হবে। আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আর দেশের কয়েকটি পরিবার ও গোষ্ঠী দেশের বিপুল টাকা পাচার করেছে। পাচার করা টাকা ফেরত আনা একটি জটিল প্রক্রিয়া। এসব অর্থ ফেরত আনতে এক বছরের বেশি সময় লাগবে।’
প্রথম ধাপে পাচার হওয়া সম্পদকে স্থিতিশীল অবস্থায় আনার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে মনসুর বলেন, ‘আমরা অ্যাসেটগুলোকে ফ্রিজ করার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং মিউচুয়াল লিগাল অ্যাসিস্ট্যান্সের বিষয়ে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ল ফার্মের সঙ্গে কথা বলেছি এবং খুব শিগগিরই তাদের হায়ার (নিয়োগ) করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা এমন ল ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, যারা অ্যাসেট ট্রেসিংয়ের কাজ করে।’
‘যদিও আমরা কিছু তথ্য জানি, তবে সেগুলো ভাসা ভাসা। স্পেসিফিক, এক্স্যাক্ট ডকুমেন্টেশন ছাড়া কোনো তথ্য কোর্টে গ্রহণযোগ্য হবে না’ বললেন গভর্নর।
এই কাজের জন্য বিদেশি অ্যাসেট ট্রেসিং ফার্মগুলোর সহায়তা নেয়া হবে জানিয়ে এইচ মনসুর বলেন, ‘তাদের সহায়তায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, কোম্পানি বা সম্পদের সুনির্দিষ্ট তথ্য শনাক্ত করতে হবে। আমরা এখনই কিছু সহযোগিতা পাচ্ছি, তবে কাজটা মোটেও সহজ নয়। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমাদের লক্ষ্য আগামী ছয় মাসের মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশের অ্যাসেট ফ্রিজ করা। এটাকে আমরা ইনিশিয়াল অ্যাচিভমেন্ট হিসেবে দেখছি। একবার ফ্রিজ হলে এরপর বিষয়টি কোর্টে যাবে, সেখানে মামলা মোকদ্দমা হবে। এরপরই সেই অ্যাসেট ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।’
দেশে আগে মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে দেখানো হত জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ৯-১০ শতাংশ দেখানো হত। কিন্তু প্রকৃতভাবে দেখা গেছে ১৩-১৪ শতাংশ। গত মাসে সেটি দেখা গেছে ৮-৯ শতাংশে রয়েছে। সামগ্রিকভাবে মুদ্রাস্ফীতি স্বস্তির দিকেই আছে। আগামী বছর সেটিকে ৫ শতাংশ বা তার নিচে নামিয়ে আনতে পারব।’
দেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে এখন আর কোনো ঘাটতি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশাল ঘাটতি ছিল, সেটা আমরা মিটিয়ে এনেছি। আমাদের রিজার্ভও এখন স্থিতিশীল এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। আমাদের রফতানি বাড়ছে। বিভিন্ন রকমের গোলযোগ, আন্দোলন ইত্যাদি সত্ত্বেও রফতানি মুখ থুবড়ে পড়েনি। গত আট-নয় মাসের তথ্য বলছে, এখনও রফতানি ডাবল ডিজিট প্রবৃদ্ধি দেখাচ্ছে।’ উৎস: সময়নিউজটিভি।