মহসিন কবির: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ তিন মাসের স্থগিত করেছেন। এ সময় শুল্ক ন্যূনতম ১০ শতাংশ কার্যকর হবে। অবশ্য চীনের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেটা কমাননি।
তিন মাসের জন্য স্থগিত করায় বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে সাময়িক স্বস্তি মিলেছে। তবে অনিশ্চয়তা কাটেনি।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের স্থগিতাদেশ যেহেতু সাময়িক, সেহেতু এ বিষয়ে আমাদের দীর্ঘমেয়াদে কাজ করতে হবে। যেন পরবর্তীকালে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। এক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ওপর ভিত্তি করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক (ট্যারিফ) বৃদ্ধির ঘোষণার পর থেকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছিল। এর ফলে অনেক মার্কিন ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে পোশাকের কিছু কিছু শিপমেন্ট স্থগিতও করেছিলেন। বেশকিছু ক্রেতা উৎপাদিত পণ্যে ডিসকাউন্টও চাইছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন এদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা। এমতাবস্থায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার ৯০ দিনের জন্য নতুন শুল্কারোপ স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সামাজিকমাধ্যম এক্স-এ তাদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে শুল্ক আরোপ ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমরা আপনার বাণিজ্যনীতির সমর্থনে আপনার প্রশাসনের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব।’
এ বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, আলহামদুলিল্লাহ, ভেরি গুড। আমাদের বাণিজ্যের মধ্যে স্থিরতা দেখা দেবে। তিনি আরও বলেন, বুধবার ইউএসটিআরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের মিটিং হয়েছে অনলাইনে। আমরা আমাদের কর্মসমষ্টিগুলো নিয়ে কাজ করছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা নিজেরাও যুক্তরাষ্ট্রে যাব, গিয়ে আমাদের অবস্থান তুলে ধরব।
বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, স্থগিতাদেশ তো সাময়িক সময়ের জন্য। এ বিষয়ে আমাদের দীর্ঘ মেয়াদে করণীয় আছে। তাদের আকাক্সক্ষা তো শেষ হয়ে যায়নি। সেই আকাক্সক্ষাগুলোকে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ওপর ভিত্তি করে কতটুকু কী করতে পারব- সেই বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করছি এবং সেই অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নেব। তিনি বলেন, মূল আকাক্সক্ষা হচ্ছে বাণিজ্য ঘাটতি সমন্বয় করা। আমরা সেই পরিপ্রেক্ষিতেই কাজ করছি।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিভিন্ন দেশের পণ্যে যে পৃথকভাবে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, সেই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করাটা সাময়িক স্বস্তির বিষয়। এক্ষেত্রে সরকারও সঠিক সময়ে উদ্যোগী হয়েছে। নতুন করে শুল্কারোপের ফলে চরম পরিণতির দিকে যেতে পারতাম, সেখান থেকে ফেরা গেছে ঠিক। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিপদ এখনও পুরোপুরি কাটেনি। এজন্য সরকারকে নিবিড় যোগাযোগ রাখতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ গণমাধ্যমকে বলেছেন, আগামী ৯০ দিনের বিরতিতে সাময়িক স্বস্তি মিলেছে। তবে উদ্বেগ থেকেই গেছে। কারণ স্থায়ী সমাধান দৃশ্যমান হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি কৌশলগতভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। সেখানকার বায়ারদের কাজে লাগাতে হবে। বাজার ভিত্তিক সমাধানে অতিরিক্ত শুল্ক ভাগাভাগি করতে হবে। এ ছাড়া সক্ষমতা বাড়াতে হবে, কস্ট অব বিজনেস কমাতে হবে। অন্যান্য দেশ নেগোসিয়েশনের জন্য লবিস্ট নিয়োগ করবে। সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, আগামী তিন মাসে অনেক পরিবর্তন আসবে। তিন মাস সময় পাওয়া গেছে। আশা করি, এর আগেই সমস্যার সমাধান হবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হিসাবের সাথে আমাদের হিসাবে মিল নেই। প্রকৃত হিসাব তুলে ধরতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ধাক্কা দিয়ে আমাদের সচেতন হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এই শিল্পের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে আগামী ৯০ দিনে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কতটা কার্যকরভাবে দরকষাকষি করতে পারছে এর ওপর। এ ছাড়া এখন সময় এসেছে রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনার।
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গণমাধ্যমকে বলেছেন, এ ধরনের উদ্যোগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানাই। দ্রুততার সাথে প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেছেন। এ যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে হবে। চীনা পণ্য আমদানির ওপর যুক্তরাষ্ট্র শুল্কারোপ করায় বাংলাদেশ সেই সুযোগ যাতে নিতে পারে, সে জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।