শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৫ মার্চ, ২০২৫, ০৭:০৩ বিকাল
আপডেট : ২৬ মার্চ, ২০২৫, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

রূপপুরে টার্বাইন স্থাপনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ও চূড়ান্ত ধাপ সম্পন্ন

মনজুর এ আজিজ : বাংলাদেশের পাবনা জেলার রূপপুরে নির্মাণাধীন দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে টার্বাইন স্থাপনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ও চূড়ান্ত ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। এই ধাপে টার্বাইন সেটটিকে বারিং গিয়ারের ওপর নির্ভুলভাবে বসানো হয়েছে বলে জানা গেছে। স্থাপন পরবর্তী পরীক্ষাকালে টার্বাইনের শ্যাফট ধীর গতিতে ঘোরানো হয়। স্টার্ট-আপ এবং শাটডাউনের সময় টার্বাইন রোটরের যথাযথ অ্যালাইনমেন্ট ও ভারসাম্য নিশ্চিত করে এই বারিং গিয়ার, যা নিরাপত্তা এবং দক্ষ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জরুরি। পরীক্ষাকালে বিশেষজ্ঞরা টার্বাইন সেটের সংযোজনের উচ্চমান এবং নিখুঁত এলাইনমেন্টের ব্যাপারে নিশ্চিত হন।

জানা যায়, বাংলাদেশের পাবনা জেলার রূপপুরে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রকল্পটিতে প্রতিটি ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি পাওয়ার ইউনিট থাকছে। ইউনিটগুলোতে স্থাপিত হয়েছে ৩+ প্রজন্মের ভিভিইআর রিয়্যাক্টর। শিগগিরই জ্বালানি লোডিং এবং তৎপরবর্তী স্টার্টআপের জন্য প্রথম ইউনিটের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি চলছে। রূপপুর প্রকল্পের জেনারেল ডিজাইনার এবং কনট্রাক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে রসাটম প্রকৌশল শাখা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৩ এ প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা ছিল। বিগত সরকারের সময়ে রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাণিজ্যিক উৎপাদনের তারিখ এক বছর পিছিয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। আর দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে উৎপাদনে আসার কথা। কিন্তু সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শেষ না হওয়ায় দফায় দফায় সময় পেছানো হচ্ছে।

পিজিসিবি সূত্র জানিয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঞ্চালন লাইনের দৈর্ঘ্য ৬৬৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৪৬৪ কিলোমিটার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন ও ২০৫ কিলোমিটার ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন। ২০ কিলোমিটার রয়েছে নদী পারাপার। এর মধ্যে ৪০০ কেভি ১৩ কিলোমিটার ও ৭ কিলোমিটার ২৩০ কেভি লাইন। পদ্মা ও যমুনার মতো বড় নদী পারাপার রয়েছে। যে কাজটি বেশ জটিল এবং সময় সাপেক্ষ। নদী পারাপার কাজে অর্থায়ন করা হচ্ছে দেশীয় তহবিল থেকে। ডলার সংক্রান্ত জটিলতায় ঠিকাদারকে যথা সময়ে অর্থ দিতে না পারায় কাজটি বিলম্বিত হয়েছে। ফলে প্রকল্পের অন্যান্য কাজ শেষ হলেও নদী পারাপারের কাজ শেষ হতে বেশি সময় লাগছে।

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল এ প্রকল্পে সিংহভাগ অর্থায়ন দিয়েছে রাশিয়া। ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে রাশিয়ার অর্থায়ন রয়েছে ৯৩ হাজার কোটি টাকা। পরমাণু বিদ্যুতে সবচেয়ে সুবিধার দিক হচ্ছে ৬০ বছর এর দর কোন ওঠা-নামা করবে না। একই দরে ৬০ বছর নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।

অন্যদিকে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং তেল ভিত্তিক বিদ্যুতের দর উঠানামা করে। তুলনামূলক সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব হিসেবে পরিচিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উৎপাদনে গেলে তেল ভিত্তিক ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিতে চায় বাংলাদেশ। এতে গড় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমে আসবে বলে মনে করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। তবে ঝুঁকির বিষয় হচ্ছে পরমাণু বিদ্যুতের উপযোগী লাইন তৈরি করা এবং চাহিদা ও উৎপাদনের সঙ্গে ভারসাম্য নিশ্চিত করা।

পৃথিবীর ৩০টি দেশে ৪৪৯টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলো থেকে উৎপন্ন বিদ্যুতের পরিমাণ মোট উৎপন্ন বিদ্যুতের প্রায় ১২ শতাংশ। ১৪টি দেশে আরও ৬৫টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। ২০২৫ সাল নাগাদ ২৭টি দেশে ১৭৩টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া চলমান। এগুলোর মধ্যে ৩০টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রই নির্মিত হচ্ছে পরমাণু বিশ্বে নবাগত দেশসমূহে, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকল্পের ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলেক্সি দেইরী বলেন, রূপপুর প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের টার্বাইন স্থাপনের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে যা স্টার্টআপের পূর্বে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। বারিং গিয়ারের ওপর টার্বাইন সেটের স্থাপন এবং কন্ট্রোল পরীক্ষার মাধ্যমে যন্ত্রপাতির সংযোজনের উচ্চমান এবং এগুলোর নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করা গেছে। এখন বাকি কাজ দ্রুত সম্পাদন করা সম্ভব হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়