শিরোনাম
◈ হামজা চৌধুরী আমাদের জন্য হুমকি: ভারতীয় কোচ ◈ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে সব রাজনৈতিক দল: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জোড়ালো হচ্ছে ◈ প্রতি মাসে গড়ে ৮০-৮৫ মিলিয়ন ডলার বিল পরিশোধ করছে বিপিডিবি ◈ রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতে থাকা উচিত: হাসনাত আব্দুল্লাহ (ভিডিও) ◈ জমেনি কলকাতার ঈদবাজার, ব্যবসায়ীরা  দুষছেন মোদি-হাসিনাকে  ◈ আ.লীগ পুনর্গঠন নিয়ে পিনাকীর বক্তব্য, যা বললেন সোহেল তাজ ◈ পুলিশ কনস্টেবল থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র কেনাবেচায় , যেভাবে পড়লেন ধরা ◈ আ’লীগের সমর্থনে মিছিল, যুবলীগ নেত্রীসহ আটক ৩ ◈ নিকেতন ক্লাব থেকে টার্গেট করে গুলশানে এনে ইন্টারনেট ব্যবসায়ীকে খুন ◈ আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে গণঅধিকার পরিষদ

প্রকাশিত : ২২ মার্চ, ২০২৫, ০৩:৩১ রাত
আপডেট : ২২ মার্চ, ২০২৫, ১০:০১ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ব্যবসায়িক স্বস্তিতে আদানি

প্রতি মাসে গড়ে ৮০-৮৫ মিলিয়ন ডলার বিল পরিশোধ করছে বিপিডিবি

বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছে আদানি পাওয়ারের বিপুল পরিমাণ পাওনা বকেয়া পড়ে যায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে। সে সময়ে আদানি পাওয়ারকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ বিল পরিশোধ করা হতো প্রতি মাসে গড়ে ২০-৩০ মিলিয়ন ডলার। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আদানির কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে বিল পরিশোধও বেড়েছে আগের চেয়ে তিন-চার গুণ। বর্তমানে প্রতি মাসে গড়ে ৮০-৮৫ মিলিয়ন ডলার বিল পাচ্ছে আদানি পাওয়ার। চলতি মার্চেও আদানি পাওয়ারকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ ৯৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিল পরিশোধ করেছে বিপিডিবি।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিশেষ আইনের আওতায় আদানির সঙ্গে করা চুক্তি বাতিলের জোর দাবি ওঠে। নভেম্বরে এ ক্রয়চুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিটও করা হয়। আদানিসহ ১১ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে ক্রয়চুক্তি খতিয়ে দেখতে গত অক্টোবরে জাতীয় পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এ কমিটি এরই মধ্যে এসব চুক্তি পর্যালোচনার জন্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করেছে। এ কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায়ই বাড়ানো হয়েছে আদানির কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় ও বিল পরিশোধ।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বিতর্ক থাকলেও এ মুহূর্তে বিপিডিবির সঙ্গে করা চুক্তি নিয়ে আদানি গ্রুপের মধ্যে খুব একটা উদ্বেগ নেই। অন্তর্বর্তী সরকারও এখন আদানির বকেয়া পরিশোধ ও তাদের কাছ থেকে বিদ্যুতের বাড়তি সরবরাহ নেয়া ছাড়া আর কিছু ভাবছে না। যদিও অসম শর্তের ভিত্তিতে পতিত বিগত সরকার কোম্পানিটির সঙ্গে এ চুক্তি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শ্রীলংকা এরই মধ্যে দুর্নীতি, প্রতিবেশগত ক্ষতি ও বিদ্যুতের দাম বেশি হওয়ার অভিযোগ তুলে আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিল করেছে। আফ্রিকার দেশ কেনিয়াও এরই মধ্যে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের দুটি চুক্তি বাতিল করেছে।

চলতি গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। আদানিও এখন ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিট থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানি করছে। ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট স্থাপিত সক্ষমতার (ইনস্টলড ক্যাপাসিটি) বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে গত সপ্তাহে সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদ্যুৎ কিনেছে বিপিডিবি।

বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিপিডিবি সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মাসে গড়ে আদানি পাওয়ারের বিল আসে কম-বেশি ৭০-৭৫ মিলিয়ন ডলার। আর গত অক্টোবর থেকে প্রতি মাসে আদানি পাওয়ারকে গড়ে ৮৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হচ্ছে। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট মাসের বিলের পাশাপাশি প্রদেয় বকেয়া বিলও রয়েছে। ছয় মাস ধরেই আদানি পাওয়ারকে এভাবে নিয়মিত বিলের পাশাপাশি কিছু পরিমাণে বকেয়াও পরিশোধ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা আদানির বকেয়া সাধ্যমতো পরিশোধ করছি। দ্রুত বা নির্দিষ্ট কোনো সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে, এমন কোনো কিছু নির্ধারিত নেই। বিষয়টি পুরোপুরি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভরশীল। আমরা সেখান থেকে যেভাবে ভর্তুকির অর্থ পাব, সেভাবেই পরিশোধ করব।’

আদানির হিসাবে বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ বিপিডিবির কাছে এখনো ৭০০ মিলিয়ন ডলার পাওনা বকেয়া রয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে। তবে কয়লার দাম নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে বিপিডিবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে প্রদেয় এ অর্থের পরিমাণ ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি নয়।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আদানিসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘গত অক্টোবর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ নিয়মিত বিল পাচ্ছে আদানি। তবে বকেয়ার ক্ষেত্রে খুব বেশি অগ্রগতি নেই। গত সপ্তাহেও বকেয়া বিল নিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে ইতিবাচক কিছু প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আদানি ও বিপিডিবির হিসাবে বকেয়া বিলের পরিমাণ নিয়ে চলমান সংকট প্রসঙ্গেও দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।’

তবে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি আদানির পক্ষ থেকে দেয়া এক চিঠির ভাষ্য অনুযায়ী, গত বছরের এপ্রিল থেকে বকেয়া জমে ৬ জানুয়ারির মধ্যে ৮৪০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। সে হিসাবে বকেয়া বিলের উল্লেখযোগ্য অংশ এরই মধ্যে পরিশোধ করে ফেলেছে বিপিডিবি।

আদানির সঙ্গে বিপিডিবির বিল বকেয়া নিয়ে চিঠি চালাচালি বিগত বছরের শুরু থেকেই। বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আদানির শীর্ষ কর্মকর্তারা দফায় দফায় বাংলাদেশ সফর করেছেন। এমনকি বকেয়া বিলের কারণে কখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেয়া, কখনো কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়ার মতো হুমকিও এসেছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে বকেয়া বিল পরিশোধের ওপর ডিসকাউন্ট দেয়ার মতো অফারও দিয়েছে আদানি গ্রুপ। এখন পর্যন্ত নিয়মিত বিল পরিশোধ বাড়লেও বকেয়া বিলের সংখ্যা নিয়ে আদানি ও বিপিডিবির মধ্যে বড় ধরনের কোনো নিষ্পত্তি হয়নি।

বিপিডিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আদানি পাওয়ার বকেয়া বিলের বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে গত সপ্তাহেই একটি চিঠি দিয়েছে। বিপিডিবির হিসাবে আদানির বিলে জটিলতা রয়েছে। সেগুলো নিরসনের বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। এগুলো পরিশোধের নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ভর্তুকির টাকা ছাড় হওয়া সাপেক্ষে বকেয়া বিল তত দ্রুত পরিশোধ করা হবে।

তবে সরকার শুধু আদানি নয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সব বকেয়া দ্রুত পরিশোধ করতে চায় বলে জানিয়েছেন খাতটির নীতিনির্ধারকরা। এ নিয়ে নিয়মিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে জানিয়েছেন তারা।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আমাদের যে ওভারডিউ রয়েছে, সেগুলো দ্রুত পরিশোধ করে দেয়ার চেষ্টা করছি। আমরা বিল পরিশোধের হার আগের চেয়ে বাড়িয়েছি। কারণ এটা না করলে দুটি সমস্যা তৈরি হচ্ছে। প্রথমত, বিল পরিশোধের নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে গেলে তার ওপর জরিমানা দিতে হয়। দ্বিতীয়ত, বকেয়া না থাকলে জ্বালানির দামে সাশ্রয়ী হওয়া যায়।’

আদানির বিল পরিশোধ আগের চেয়ে দ্রুত পরিশোধ হচ্ছে কিনা এমন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আদানি বলে কথা নয়, যাদের বকেয়া রয়েছে, সেগুলোর সবই দ্রুত পরিশোধের চেষ্টা হচ্ছে। পরিশোধ নিয়মিত থাকলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় সংকট হওয়ার সুযোগ থাকে না।’

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়