শিরোনাম
◈ প্রথমবারের মতো অন্তর্ভুক্তিমূলক নববর্ষ উদযাপনের উদ্যোগ ◈ দুদকের অভিযোগের জবাবে যা বললেন টিউলিপ ◈ অনন্ত জলিলের দাবি মিথ্যা: প্রেস সচিব শফিকুল আলম ◈ পুলিশের সিগন্যাল অমান্য করে পালানোর সময় প্রাইভেট কারসহ ২ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার ◈ সীমানা প্রাচীর ভেঙে র‍্যাবের মাঠে বাস, ডোপ টেস্টে চালক ◈ ক্রিকেটার সেজে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা, বিমানবন্দরে আটক ১৫ বাংলাদেশি ◈ সরকারের হস্তক্ষেপে সৌদি আরবগামী ফ্লাইটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটের এয়ার টিকিটের মূল্য ৭৫% কমলো ◈ ব্রিটেনে সদ্য আসা হাজারো বাংলাদেশি অভিবাসন নিয়ে চিন্তায় ◈ ভুয়া নথিতে ভারতীয় পাসপোর্ট: কলকাতায় ৬৯ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিশের আবেদন ◈ ইসরায়েলি হামলায় ৪৮ ঘণ্টায় ৯৭০ জন নিহত

প্রকাশিত : ১৯ মার্চ, ২০২৫, ১১:০৫ রাত
আপডেট : ২০ মার্চ, ২০২৫, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

বকেয়ায় বন্ধ শেভরনের উন্নয়ন, উৎপাদনে ধসের শঙ্কা!

মনজুর এ আজিজ : দেশীয় গ্যাসের প্রায় ৬০ শতাংশ যোগান দিয়ে আসছে আমেরিকান কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ। তবে সম্প্রতি বিল না পাওয়ায় উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ করে রেখেছে বহুজাতিক এ কোম্পানিটি। ফলে গ্যাস উৎপাদনে ধসের শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বকেয়া ইস্যুতে জালালাবাদ গ্যাস ফিল্ডে কমপ্রেসার বসানোর প্রকল্প ঝুলে গেছে। কমপ্রেসরটি স্থাপন করা গেলে দৈনিক প্রায় ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করেছিল পেট্রোবাংলা।

সূত্র মতে, কোম্পানিটির বকেয়া বিলের পরিমাণ ১৬০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। যা তাদের ৪ মাসের বিলের সমান। প্রত্যেক মাসে ৪০ মিলিয়ন ডলারের গ্যাস সরবরাহ দিচ্ছে কোম্পানিটি। বকেয়া শুধু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ের নয়, বিগত সরকারের সময় থেকেই নির্ধারিত সময়ে গ্যাস বিল না পেয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করে রেখেছে। গভীর সমুদ্রে দরপত্র কিনলেও শেষ মুহূর্তে জমাদান থেকে বিরত থেকেছে।

জালালাবাদ কমপ্রেসর প্রকল্প ২০২৪ সালের প্রথম দিকে শুরুর পরিকল্পনা ছিল। প্রকল্পের কাজ শুরুর ২ বছর পর থেকে অপারেশনে যাচ্ছে প্রকল্পটি। ২০২৬ সালে গ্যাস সরবরাহ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। অথচ এখনও কাজই শুরু হয়নি।

সূত্র জানিয়েছে, বকেয়া পরিশোধের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গত অক্টোবর মাসে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়। সেই চিঠিতে প্রত্যেক মাসে রানিং বিলের সঙ্গে ২০ মিলিয়ন করে বকেয়া পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। ওই চিঠির পর শুধু নভেম্বর মাসে প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড় করা হয়। এরপর আবার আগের মতো বকেয়া বাড়তে থাকে।

গ্যাস বিল বকেয়া থাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে, দ্রততম সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ৭৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার জন্য গত ৯ জানুয়ারি চিঠি দেয় শেভরন। কোম্পানিটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রেসিডেন্ট এরিক এম ওয়াকার স্বাক্ষরিত চিঠিতে বকেয়া পরিশোধে সচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। তারপরও পরিস্থিতি খুব একটা উন্নতি হয় নি। তখন ১৫০ মিলিয়ন বকেয়া ছিল চলতি মাসে ১৬০ মিলিয়ন পার হয়ে গেছে।

কত বকেয়া রয়েছে এ বিষয়ে শেভরন বাংলাদেশের কাছে জানতে চাওয়া হলে ম্যানেজার (মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শেখ জাহিদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, কোম্পানির পলিসিগত কারণে ফাইন্যান্সিয়াল ইস্যুতে কোনো মন্তব্য করতে পারি না।

উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে কী-না? এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ জাহিদুর রহমান বলেন, জালালাবাদ গ্যাস প্ল্যান্টে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পিত একটি প্রকল্পের কাজ স্থগিত করা হয়েছে বকেয়া নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত। তিনি বলেন, দ্রুততার সঙ্গে বকেয়া পরিশোধ বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ ও গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর কাজে আস্থা বাড়বে। আমরা আশবাদী দ্রুতই পরিস্থিতি উন্নতি ঘটবে।

বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশের বকেয়া নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথা হচ্ছে। মাঝে মাঝে কিছু অর্থ ছাড়ও করেছে বাংলাদেশ। তারপরও কোম্পানিটির সরবরাহ করা কয়েক মাসের গ্যাসের বিল বকেয়া পড়েছে। গত ডিসেম্বরে শেভরন ইন্টারন্যাশনাল এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ক্যাসুলো বাংলাদেশ সফর করেন। ওই সফরে ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই বৈঠকেও বকেয়ার বিষয়টি আলোচিত হয় বলে সূত্র জানায়।

শেভরন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সমন্বিত জ্বালানি কোম্পানি। কোম্পানিটি বাংলাদেশের ব্লক-১২, ১৩ ও ১৪ এলাকায় গ্যাস উত্তোলন করে আসছে। দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের প্রায় ৬০ শতাংশ এবং কনডেনসেট উৎপাদনের ৮৩ শতাংশ যোগান দিচ্ছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র। ১৭ মার্চ ৯৫৪ দশমিক ১ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ দিয়েছে। এক সময় গ্যাস ফিল্ডটি থেকে ১৩০০ মিলিয়নের ওপর উৎপাদন হলেও মজুদ কমে যাওয়ায় কমেছে উৎপাদন।

এক সময়ে দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে দৈনিক ২৮০০ মিলিয়নের মতো গ্যাস উৎপাদিত হলেও ১৭ মার্চ মাত্র ১৮৮৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে। মজুদ কমে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত কমে আসছে উৎপাদন। গ্যাসের অনুমোদিত গ্রাহকের দৈনিক চাহিদা প্রায় ৫৫’শ মিলিয়ন ঘনফুট। যার বিপরীতে কমবেশি ২৮’শ মিলিয়ন সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে চাহিদা, বাড়ন্ত চাহিদা সামাল দিতে ২০১৮ সালে এলএনজি আমদানি শুরু করা হয়। শেভরনের কাছ থেকে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে ২.৭৬ ডলার একই পরিমাণ গ্যাস আমদানিতে খরচ পড়ছে সাড়ে ১০ ডলারের মতো।

শেভরনের পাশাপাশি কাতার সরকারও বকেয়া পরিশোধের জন্য তাগাদা দিয়েছে। জিটুজি ভিত্তিতে কাতার থেকে বছরে ৪০ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হয়। পেট্রোবাংলার কাছে যেমন অর্থ পাওনা রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। তেমনি পাওয়ার সেক্টরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে পেট্রোবাংলার বকেয়া ২৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এরমধ্যে বিদ্যুৎ খাতের কাছেই প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার মতো। নির্ধারিত সময়ে বিল না পাওয়ায় স্পর্ট মার্কেট থেকে এলএনজি সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। দফায় দফায় টেন্ডার করেও অনেক সময় সরবরাহকারী পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা সূত্র।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়