শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৬ মার্চ, ২০২৫, ০২:৩৮ রাত
আপডেট : ১৬ মার্চ, ২০২৫, ১০:০৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সৌদি আরব থেকে প্রবাসী আয়ে ভাটা, টানা শীর্ষ অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র

দেশে সৌদি আরব থেকে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আসতো সবচেয়ে বেশি। তবে সেখানকার রেমিট্যান্স আহরণে সাম্প্রতিক সময়ে ভাটা পড়েছে। গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স আসা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। 

ফেব্রুয়ারিতেও দেশে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আলোচ্য সময়ে একটানা বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানো দেশ হিসেবে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গত আগস্টে শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর প্রতি মাসেই ২০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। দেশের বাজারে এখন ডলার সরবরাহে সংকট রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার এই সংকট মোকাবিলায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। তারা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের করা বিপুল ঋণ পরিশোধের চাপ যখন বাড়ছে, তখন রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকছেন প্রবাসীরা। ফলে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ হু হু করে বাড়ছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ যদি বৈদেশিক শ্রমবাজারে শীর্ষস্থান ধরে রাখতে চায়, তবে সুশাসন নিশ্চিতকরণ, বাজার বহুমুখীকরণ ও দক্ষ কর্মী পাঠানোর প্রবণতা বাড়ানোই হবে সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ৪৯ কোটি ১০ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসীরা। ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৫৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি। ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসী আয় আসার তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল আরব আমিরাত। দেশটি থেকে প্রবাসীরা ৩৩ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় পাঠিয়েছিলেন। এরপরের তালিকায় থাকা সৌদি আরব থেকে এসেছে ৩২ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য থেকে ৩০ কোটি ৫৫ লাখ, মালয়েশিয়া থেকে ১৮ কোটি ৩৮ লাখ, কুয়েত থেকে ১৪ কোটি ১১ লাখ, ওমান থেকে ১২ কোটি ৩৭ লাখ, ইতালি থেকে ১১ কোটি ১১ লাখ, কাতার থেকে ১০ কোটি এবং সিঙ্গাপুর থেকে ৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে একধরনের বড় পরিবর্তন হয়েছে। এখন প্রবাসী আয় প্রেরণকারী বৈশ্বিক বড় বড় প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দেশ থেকে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রবাসী আয় কিনে নেয়। পরে সেসব আয় একত্র করে নির্দিষ্ট একটি দেশ থেকে তা গন্তব্য দেশে পাঠায়। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রামসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠান অ্যাগ্রিগেটেড (সমন্বিত) পদ্ধতিতে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করে প্রেরণ করে।

ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার আয় পাঠিয়েছেন; যা বিদায়ী বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আয় এসেছিল ২১৬ কোটি ডলার।

এর আগে জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার পাঠিয়েছিলেন। ফলে আগের মাসের চেয়েও প্রবাসী আয় বেড়েছে।

ফলে সবমিলিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি ৮ মাসে প্রবাসীরা দেশে ১ হাজার ৮৪৯ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন; যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে আয় এসেছিল ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার।

বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য বলছে, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৬৮টি দেশে জনশক্তি রপ্তানি করে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি জনশক্তি রপ্তানি করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে। দেশটিতে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ লাখ ২৮ হাজার ৫৬৪ জন কাজ নিয়ে সৌদি আরবে গেছেন, যা মোট জনশক্তি রপ্তানির ৬২ শতাংশ। একক বছরে কোনো দেশের জন্য সর্বোচ্চ সংখ্যা। শুধু ডিসেম্বরেই সৌদি আরবে ৮৬ হাজার ৮৬৬ জন বাংলাদেশি কর্মী গেছেন, যা ৪৭ মাসের মধ্যে মাসিক ভিত্তিতে সর্বোচ্চ নিয়োগ। 

সর্বশেষ তথ্য বলছে, ডিসেম্বরে দেশ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৩ জন, কুয়েতে ২ হাজার ৯০৩ জন, মালয়েশিয়ায় ২৭৬ জন, কাতারে ৫ হাজার ৮৯২ জন, জর্ডানে ১ হাজার ৪৯৩ জন, সিঙ্গাপুরে ৪ হাজার ৭৯৩ জন, জাপানে ৯৯ জন, ইতালিতে ১২২ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৭২ জন, যুক্তরাজ্যে ৮৭ জন কর্মী গেছেন। বিএমইটির তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বরে সৌদি আরবে নারী কর্মী গেছেন ৪ হাজার ৪৭৭ জন। এ ছাড়া জর্ডানে ১ হাজার ৩২৭ জন, কাতারে ২০৭ জন, কুয়েতে ৩১, যুক্তরাজ্যে ৩০, জাপানে ১৭ জন নারী কর্মী বিদেশে গেছেন।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়