শিরোনাম
◈ নির্বাচনের মাঠে কোন দল কী অবস্থানে ◈ শাপলা চত্বর ও গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলমের স্ট্যাটাস ◈ তৃতীয় ধাপে প্রাথমিকে নির্বাচিত ৬৫৩১ শিক্ষকের যোগদানের তারিখ ঘোষণা ◈ সংশোধিত এডিপি অনুমোদন, ব্যয় কমল ৪৯ হাজার কোটি টাকা ◈ বাংলাদেশে প্রতিশোধমূলক সহিংসতা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে জাতিসংঘের প্রতিবেদন: ফলকার টুর্ক ◈ রমজানের শুভেচ্ছা বার্তায় যা বললেন ট্রাম্প ◈ সাংবাদিক জিল্লুর রহমানের অভিযোগের জবাব দিলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ ◈ নুরুল হক নুরের নতুন দলে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গ, যা বলল গণ অধিকার পরিষদ ◈ কমেছে বৈদেশিক বিনিয়োগ, অভ্যন্তরীণ সমস্যাকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা ◈ মজুদকৃত প্রায় ১২ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ

প্রকাশিত : ০৩ মার্চ, ২০২৫, ০৭:৪৩ বিকাল
আপডেট : ০৪ মার্চ, ২০২৫, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

রমজানে ফলের বাজার চড়া, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা

মহসিন কবির: রমজানের শুরু হতেই ফলের বাজারে উত্তাপ বেড়েছে। মাল্টা, কমলা, তরমুজ, আঙুর, বেদানাসহ  ফলের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি বেড়েছে ২০-৫০ টাকা। আনারসের দামও বেড়েছে। এতে ক্ষোভ বেড়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। বাজারে গিয়ে দেখা গেছে ফলের বাজার নিম্ন মধ্যবিত্তদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।  বাজার তদারকি ছাড়া দাম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয় বলে মত বিশ্লেষকদের। 

তিন দিন আগে ২৭০-২৮০ টাকা কেজি দরে কেনা মাল্টার দাম রোববার ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অনেকেই ফল না কিনে ফিরে গেছেন। মোহাম্মদপুরের একটি বাসার দারোয়ান হেমকত আলী ফল কিনতে গেছিলেন বাজারে। ৩৫০ টাকার নিচে ফল পাওয়া যাচ্ছে না। ৩০০ টাকায় যে ফল কিনতে পাওয়া যায় তাও নিম্নমানের। দাম শুনে দারোয়ান আর ফল কিনতে পারেননি। বললেন দাম কুমুক তারপর খাবো। 

ইফতারে ফলের আয়োজন রাখতে বাজারে গিয়ে দাম শুনে দারোয়ান হেমকত আলী মতো অনেকেই হতাশ। আগে থেকেই ফলের বাজার ছিল চড়া। আপেল, মাল্টা, কমলা, আঙুর, আনারের মতো ফল বিলাসী পণ্যে পরিণত হয়েছে। এর পরও বুধবার প্রথম রোজার ইফতারে অল্প করে হলেও ফল রাখতে বাজারে ভিড় করেন অনেকেই। কিন্তু রোজাকে কেন্দ্র করে চড়া ফলের বাজারে রীতিমতো আগুন লেগেছে। গতকাল বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের অনেকেই দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন। কেউ আবার দোকানির সঙ্গে তর্কে জড়াচ্ছেন। কেউবা ক্ষুব্ধ হয়ে আর ফল খাবেন না বলে পণ করছেন।

কদমতলী এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী কৌশিক আহমেদ বলেন, রোজা শুরু হতে না হতেই ২৭০-২৮০ টাকার মাল্টা ৩০০-৩২০ টাকা হয়ে গেছে, কমলার কেজি ২৫০ থেকে বেড়ে ২৮০ টাকা হয়ে গেছে। গেলাম দেশি ফলের বাজারে। ডাবের দাম এক লাফে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। এক পিস বেলের দামও চাইছে ১৫০ টাকা। সামান্য কলার দামেও আগুন। রোজা শুরু হয়েছে বলে এভাবে দাম বাড়বে? সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আর ফলই খাব না।

রাজধানীর মালিবাগ, পল্টন, কারওয়ানবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে এবং খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাত্র দুদিনের ব্যবধানে বিদেশি তো বটেই, দেশি ফলের দামও বেড়েছে। গতকালের খুচরা বাজারে আপেলের কেজি প্রকারভেদে (ফুজি, গ্রিন ও গালা) ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা, মাল্টা ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, কমলা ২৮০ টাকা, চায়না কমলা ৩০০ টাকা, কালো আঙুরের কেজি ৪৬০ টাকা এবং সবুজ আঙুরের কেজি ৩৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

কারওয়ানবাজারের ফল বিক্রেতা মো. হারুনুর রশিদ বলেন, এতদিন বাজার একটা জায়গায় স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু গত শুক্রবার থেকে দাম বাড়তে শুরু করে। মাত্র দুদিনে আপেল, মাল্টা থেকে শুরু করে বিদেশি সব ফলের কেজিতে ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। দুই দিন আগেও আপেলের কেজি প্রকারভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বিক্রি হয়েছিল এবং মাল্টা ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। এ ছাড়া কমলা ২৫০, কালো আঙুর ৪০০ টাকা এবং সবুজ আঙুর ৩০০ টাকার আশপাশে বিক্রি হয়েছিল।

দাম কেন বেড়েছে? এ প্রশ্নের যৌক্তিক কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারলেন না এই বিক্রেতা। শুধু বললেন, পাইকারিতে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরায় তাদেরও বাড়াতে হয়েছে।

হঠাৎ দাম বাড়ার প্রসঙ্গে মো. জুদান আহমেদ ও কামরুজ্জামানসহ বাদামতলীর পাইকারি বিক্রেতারা জানান, এখন আপেলের মৌসুম না। অপরদিকে মাল্টার সরবরাহ থাকলেও শুল্কের কারণে দাম বাড়তি পড়ছে। এ ছাড়া রোজা উপলক্ষে অনেক খুচরা বিক্রেতার মাঝে বাড়তি দামে বিক্রির প্রবণতা রয়েছে। তবে শিগগিরই শুল্ক কমে আসবে। তখন দাম কমে আসবে।

বাংলাদেশ ফ্রেস ফ্রুট ইম্পোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, সম্প্রতি বন্দরে জাহাজ আটকে যাওয়ায় রমজানের কিছু ফল খালাস হতে বিলম্ব হয়েছে। এতে বাজারে আমদানিকৃত ফলের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে এখন সব কিছু স্বাভাবিক রয়েছে। পাইকারিতে আজ (রবিবার) থেকেই দাম কিছুটা কমেছে। অপরদিকে শুল্ক কমানো হলেও এখনও তা কার্যকর হয়নি। এটি কয়েক দিনের মধ্যে কার্যকর হবে, তখন আমদানিতে খরচ কম পড়বে। দামও কেজিপ্রতি ৩০-৪০ টাকা কমে আসবে।

এদিকে রোজা শুরু হতেই বিদেশি ফলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দেশি ফলের দাম। খুচরা বাজারে প্রতি পিস ডাবে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। ছোট আকারের এক পিস ডাব কিনতে ১২০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। আর বড় আকারের ডাবের দাম আরও বেশি হাঁকা হচ্ছে। কিছু দিন আগে ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হওয়া সাগরকলার ডজন এখন ১২০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। পেয়ারা কেজিও শতক ছুঁয়েছে। বেড়েছে পেঁপে ও আনারসের দামও। অপরদিকে রোজায় শরবতে ব্যবহৃত ফল পাকা বেলের দাম আকারভেদে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত রাখা হচ্ছে।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেছেন, রোজা এলেই এক শ্রেণির অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়িয়ে দেন। এটাকে ব্যবসা বলে না। বাজার মনিটরিংয়ের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তারা এগুলো করছে। এতে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বাজারে মনিটরিং জোরদার করতে হবে। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীদেরও নৈতিকভাবে ব্যবসা করতে হবে। **

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়