ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের পুঁজিবাজারে সাময়িক ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেলেও তা স্থায়ী হয়নি। প্রথম চার কার্যদিবসে ডিএসইর সূচক ৭৮৬ পয়েন্ট বাড়লেও পরে বাজারে দরপতন দেখা দেয়। সাত মাসে শেয়ারবাজার পুনরুদ্ধার না হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বিনিয়োগকারীরা আশার আলো দেখলেও শেয়ারবাজারে কাক্সিক্ষত পরিবর্তন আসেনি। ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়াকে কেন্দ্র করে অনেকে আশায় বুক বেঁধেছিলেন এই ভেবে যে, শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৬ বছরে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, কারসাজি এবং সিন্ডিকেট বাণিজ্য থেকে বের হবে শেয়ারবাজার। কিন্তু তাদের সে আশার গুড়ে বালি। বাজারের অনিয়ম ও কারসাজির কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা হতাশ। অনেকে তাদের বিনিয়োগ করা অর্থ হারিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাসে ৫১ হাজার ৫৪৯টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব শেয়ারশূন্য হয়েছে। বর্তমানে শেয়ারশূন্য বিও হিসাব তিন লাখ ৬২ হাজার ৪৬৬টিতে পৌঁছেছে। গত দুই মাসেই ১৭ হাজার ৭৩২টি বিও হিসাব শেয়ারশূন্য হয়েছে। ৫৪টি বিদেশি বিও হিসাব শেয়ারশূন্য হয়ে এখন নিষ্ক্রিয়।
উল্লেখ্য, বিও হলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্রোকারেজ হাউস অথবা মার্চেন্ট ব্যাংকে একজন বিনিয়োগকারীর খোলা হিসাব। এই বিও হিসাবের মাধ্যমেই বিনিয়োগকারীরা শেয়ার লেনদেন করেন। বিও হিসাব ছাড়া শেয়ারবাজারে লেনদেন করা সম্ভব না।
সিডিবিএলের তথ্য আরও বলছে, বর্তমানে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ৪৬ হাজার ৬৩৩টিতে দাঁড়িয়েছে, যা শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সময় ছিল ৪৭ হাজার ৮৩টি। গত সাত মাসে এই সংখ্যা সাড়ে ৪০০টি কমেছে। হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট শেয়ারশূন্য বিও হিসাব ছিল তিন লাখ ১০ হাজার ৯১৭টি। হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নতুন করে মোট ছয় হাজার ৫৮৫টি বিও ব্যবহার হচ্ছে না। ৬ আগস্ট শেয়ার আছে, এমন বিও হিসাব ছিল ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৭৬৮টি। গত সাত মাসে শেয়ার ছেড়ে দেওয়ার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় মোট ৩৮ হাজার ৪১৩টি হিসাব শেয়ারশূন্য হওয়ায় এখন শেয়ার আছে এমন হিসাব করে ১২ লাখ ৫৭ হাজার ৩৫৫টিতে নেমেছে।
একজন শীর্ষ ব্রোকারেজ কর্মকর্তা জানান, শেয়ারবাজারে আস্থা ফিরছে না। মুনাফার আশায় এসে বিনিয়োগকারীরা উল্টো পুঁজি হারাচ্ছেন। হতাশা থেকে তারা লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। সূত্র:দৈনিক আমাদের সময়