শিরোনাম
◈ ভাষা শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণ ◈ আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ◈ উত্তরায় নিজ ফ্ল্যাটে চীনা নাগরিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার(ভিডিও) ◈ সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনকে ঘোলাটে করার চেষ্টা করবেন না : আমির খসরু মাহমুদ  ◈ পরাজয় দিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরু বাংলাদেশের, শুভ সূচনা ভারতের ◈ হাসিনার বাংলাদেশে ফেরতকে অবিশ্বাস্যভাবে জটিল ও সংবেদনশীল করবে ভারত ◈ উনি অনেক চিৎকার করছিলো, জোরে জোরে কাঁদতেছিলো: বাসে ডাকাতি ও 'ধর্ষণ' বিষয়ে যা বললেন যাত্রীরা ◈ জাকের-হৃদয়ের পার্টনারশীপ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নতুন ইতিহাস ◈ দুই সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার ◈ আগামী ১৯ মার্চ থেকে আসছে নতুন নোট, বিভ্রান্তি এড়াতে বিজ্ঞপ্তি

প্রকাশিত : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১০:০৭ রাত
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের উৎপাদন কমেছে ৪১ মিলিয়ন

মনজুর এ আজিজ : চলতি মাসে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন (দৈনিক) ৪১ মিলিয়ন (৪ কোটি ১০ লাখ) ঘনফুট কমে গেছে। জানুয়ারি মাসের ৩১ দিনে কমেছিল ১৯ মিলিয়ন ঘনফুট। গত ১ জানুয়ারি মোট উৎপাদন ছিল ১৯২৯ মিলিয়ন ঘনফুট, ১৫ ফেব্রুয়ারিতে ১৮৭০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে গেছে। যা গত ১ নভেম্বর ছিল ১৯৬৮ মিলিয়নে। দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর মজুদ কমে যাওয়ায় প্রতি দিনই কমে আসছে উৎপাদন। এতে রমজান, গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে বড় ধরণের প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র মতে, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি ৭০৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করেছিল, আর ২০২৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটির উৎপাদন নেমে এসেছে ৪৮৩ মিলিয়নে। একই সময়ে (জানুয়ারি ২০২০) বহুজাতিক কোম্পানির অধীনে থাকা ৪ গ্যাস ফিল্ড থেকে সরবরাহ পাওয়া যায় ১৬৫৬ মিলিয়ন, যা ১৫ ফেব্রুয়ারি ১১৩৯ মিলিয়নে নেমে গেছে। উৎপাদন যখন কমতির দিকে তখন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে গ্যাসের চাহিদা। এতে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে থাকা বিশাল ব্যবধান আরও বেড়ে যাচ্ছে। উৎপাদন হ্রাসের এই প্রবণতার পাশাপাশি বড় ধরণের বিপর্যয়ের শঙ্কা বিদ্যমান। সবচেয়ে বড় উৎস বিবিয়ানার মজুদ কমে আসায় যে কোন দিন বড় ঘাটতির মুখে পড়তে পারে দেশ।

দৈনিক ১৮৭০ মিলিয়ন উৎপাদনের দিনে বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড থেকে এসেছে ৯৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০২৬ সাল নাগাদ গ্যাসক্ষেত্রটির মজুদ শেষ হয়ে যেতে পারে। শঙ্কা সত্যি হলে দেশীয় উৎসের গ্যাসের ১ হাজার মিলিয়ন কমে যাবে।

বিবিয়ানার মজুদ বিষয়ে কোন পক্ষ থেকেই খোলাসা করে কোন তথ্য দেওয়া হয় না। পেট্রোবাংলার সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন (২০২২-২৩) অনুযায়ী ২০২৩ সালের জুলাইয়ে অবশিষ্ট মজুদ দেখানো হয় ১৩৪ বিসিএফ। এরপর বলা হয়েছিল বিবিয়ানার মজুদ ১ টিসিএফ বাড়তে পারে। এরপর ৫৯২ দিন কেটে গেছে।

বিগত সরকার ঘাটতি পূরণের জন্য আমদানির দিকে ঝুঁকেছিল। তারা আরও দু’টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ) স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। বিশেষ আইনে করা ওই চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। নতুন করে উন্মুক্ত দরের মাধ্যমে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু খুব একটা অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। চুক্তির পর ভাসমান টার্মিনাল স্থাপনে কমপক্ষে ১৮ মাস সময় প্রয়োজন। সে কারণে ২০২৫ ও ২০২৬ সালে আমদানি বাড়ানোর পথও বন্ধ রয়েছে।

পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, দেশে উৎপাদিত গ্যাসের গড় দর পড়ছে ৬.০৭ টাকার মতো। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এক-চতুর্থাংশ গ্যাস আমদানি করায় গড় মূল্য ২৪.৩৮ টাকায় পৌঁছে গেছে। যখন এক-তৃতীয়াংশ আমদানি করতে ত্রাহী অবস্থা, সেই সময়ে দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর মজুদ ফুরিয়ে আসছে, এতে প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে উৎপাদন।
ঘাটতি পূরণের অন্যান্য বিকল্পেও অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। পেট্রোবাংলার অপর্যাপ্ত প্রস্তুতির সঙ্গে ডিপিপি অনুমোদনে মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা বিভাগের দীর্ঘ সূত্রিতা অন্যতম বাধা হিসেবে কাজ করছে। একটি ডিপিপি অনুমোদন করতে গেলে কমপক্ষে ২ বছর সময় প্রয়োজন।

আজকের এই গ্যাস সংকটকে বিগত সরকারগুলোর অদূরদর্শিতার ফসল মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। খাদের কিনারে থাকা দেশের গ্যাস সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে, বিশেষ করে ২০২৬ সাল নাগাদ মহাবিপর্যয়ের শঙ্কা দেখছেন অনেকেই। এলএনজি আমদানি বাড়িয়ে সামাল দেওয়াকে বিপদজনক বিকল্প হিসেবে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। আকাশচুম্বি দাম যেমন বাধা, তেমনি চাইলেই ইচ্ছামতো আমদানির পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ নেই। বিদ্যমান দুটি এফএসআরইউ দিয়ে দৈনিক গড়ে সর্বোচ্চ ৯০০ মিলিয়ন আমদানি করা সম্ভব।  

এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেছেন, আমাদের দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর মজুদ কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আমরা যদি বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা ধরে রাখতে চাই তাহলে বছরে কমপক্ষে ১০টি অনুসন্ধান কূপ খনন করতে হবে। এলএনজি আমদানির প্রয়োজন রয়েছে, তবে এটা সীমিত রাখতে হবে। আমরা যদি নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ জ্বালানি সরবরাহ দিতে চাই তাহলে এ খাতে আমদানি ব্যয় দাঁড়াবে ২৪ বিলিয়ন ডলারে। যা আমাদের অর্থনীতির জন্য খুবই জটিল হবে।

ক্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম বলেন, বহুকাল থেকে বিবিয়ানার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। ২০২৬ সালে গিয়ে এর উৎপাদনে ধস নামতে পারে। কিন্তু সেই সতর্কবার্তা আমলে নেওয়া হয়নি। জরুরি ভিত্তিতে কতগুলো কাজ করা দরকার ছিল সেগুলো করা হয়নি। ছাতকে ১ টিসিএফ গ্যাস রয়েছে সেখান থেকে গ্যাস আনা দরকার। 

এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, দীর্ঘ সূত্রিতা এড়াতে ডিপিপি না করে কোম্পানির অর্থায়নে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এতে উৎপাদন বাড়বে। ভোলায় দু'টি গ্যাসফিল্ডে মোট ৯টি কূপ খনন করা হয়েছে।

যা দিয়ে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। ৯টি কূপের মধ্যে ৫টি এখনই গ্যাস উৎপাদনে সক্ষম রয়েছে যেগুলো থেকে দৈনিক ১৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া সম্ভব। গ্যাসের চাহিদা না থাকায় মাত্র ৮০ মিলিয়ন গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে, আবার পাইপলাইন না থাকায় জাতীয় গ্রিডে দেওয়া যাচ্ছে না। ওই এলাকা থেকে এলএনজি আকারে ৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আনতে চায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

অন্যদিকে বেগমগঞ্জ-৪ ও সিলেট-১০ নম্বর কূপে গ্যাস রেডি থাকলেও পাইপলাইনের অভাবে উত্তোলন করা যাচ্ছে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়