শিরোনাম
◈ বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে যা যা থাকছে ◈ বিমানবন্দরে নতুন উদ্যোগ স্বর্ণ পরীক্ষা ও শুল্ক ফাঁকি রোধে  ◈ সাবেক এমপি ডা. আব্দুল আজিজ গ্রেফতার ◈ জুলকারনাইন সায়ের ফেসবুকে রেহানার ছবি, জানালেন তিনি কোথায়? ◈ যার বাসায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আছেন বলে ধারণা পিনাকী ভট্টাচার্যের ◈ যা জানা গেল সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে ◈ চিটাগং কিংসকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে বিপিএলের ফাইনালে ফরচুন বরিশাল ◈ গুমের ঘটনায় যাদের নাম পেয়েছে এইচআরডব্লিউ ◈ অভিনেত্রী শাওনকে উদ্দেশ করে যা লিখেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ◈ কারাগারে থাকা সাবেক মন্ত্রী ফারুক খানের স্ট্যাটাস ‘ভাইরাল’, কারা অধিদপ্তর বললেন গুজব

প্রকাশিত : ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১০:২৯ রাত
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৪:১৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কর বৃদ্ধির চাপে শিল্প-কারখানা, আমদানির ফল খালাস বন্ধ, রাস্তায় আলু ফেলে কৃষকদের বিক্ষোভ

মহসিন কবির: নতুন করে শুল্ক–কর বৃদ্ধিতে মধ্যম ও নিম্নমধ্যম আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় চাপ বাড়াবে। এ ছাড়া অনেক পণ্য ও সেবায় আগে থেকেই উচ্চ হারে শুল্ক–কর রয়েছে। বাড়তি করের চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেকে। ফলে বিক্ষোভ করতে তারা বাধ্য হচ্ছে। 

জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে নতুন চাপে পড়েছে শিল্পকারখানা, বাড়ছে উৎপাদন খরচ। এ ছাড়া রপ্তানিমুখী শিল্পের ক্ষেত্রে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাও কঠিন হবে- আশঙ্কা করছেন তারা। 

অর্থনীতিবিদরা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করেই দাম বাড়ানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশেও বাড়াতে হবে আর কমলে কমাতে হবে। নয়তো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পেতে সমস্যা হবে সরকারের।

উদ্যোক্তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি সহ্য করা গেলেও গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা সহ্য করা যায় না। গ্যাসের লাইন আছে, গ্যাস নাই। মাসে মাসে গ্যাসের বিল দিতে হয়। শিল্প-কারখানা বাঁচাতে হলে গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা নিরসন করা দরকার।

বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দেশে ভোক্তাপর্যায়ে গত বছরের মার্চ থেকে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ শুরু করে সরকার। সেই হিসাবে ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য জ্বালানি তেলের নতুন মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এতে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম প্রতি লিটারে এক টাকা বাড়ানো হয়েছে। গত শুক্রবার জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ দাম বাড়ানো হয়, যা গত শনিবার থেকে কার্যকর হয়।

নতুন মূল্য অনুযায়ী লিটারপ্রতি ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১০৫ টাকা, অকটেন ১২৬ টাকা ও পেট্রল ১২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

বর্তমানে জ্বালানি তেলের দর নির্ধারণ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে প্রতি মাসে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। অনেকটা একই প্রক্রিয়ায় প্রতি মাসে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৭৪ লাখ টন। এ চাহিদার প্রায় ৭৫ শতাংশই ডিজেল। বাকি ২৫ শতাংশ চাহিদা পূরণ হয় পেট্রল, অকটেন, কেরোসিন, জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েলসহ বিভিন্ন জ্বালানি তেলে।

ডিজেল সাধারণত কৃষি সেচে, পরিবহন ও জেনারেটরে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি তেলের মধ্যে উড়োজাহাজে ব্যবহৃত জেট ফুয়েল ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করে বিপিসি। আর ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রল ও অকটেনের দাম নির্ধারণ করে জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। প্রতিবেশী দেশ ভারত ছাড়াও উন্নত বিশ্বে প্রতি মাসেই জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করা হয়।

এবিষয়ে বিশ্বব্যাংক ঢাকা আবাসিক মিশনের সাবেক মূখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, বর্তমানে জ্বালানির মূল্য নির্ধারণে একটা ফর্মুলা কার্যকর করা হয়েছে। দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ফর্মুলার মাধ্যমে দাম নির্ধারণের। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করেই এটি নির্ধারণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশীয় বাজারে বাড়বে, কমলে দেশীয় বাজারেও কমবে। এ ফর্মুলা না মানলে আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তি পেতে অসুবিধা হতে পারে।

বাংলাদেশ চেম্বারের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেছেন, যে কোনো পর্যায়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে পণ্য খরচ বেড়ে যায়। উৎপাদন খরচ, থেকে শুরু করে পরিবহন খরচ বেড়ে যায়, যার প্রভাব পড়ে পণ্যের ওপর। পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। দিন শেষে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে। কারণ এই বাড়তি টাকা সাধারণ ভোক্তাকেই গুনতে হয়।

অন্যদিকে নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, শিল্পের ক্ষেত্রে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি সহ্য করা গেলেও গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা সহ্য করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, শিল্প-কারখানায় গ্যাসের লাইন টানা হয়েছে। গ্যাস আসে না। কিন্তু মাস শেষে গ্যাসের বিল দিতে হয়। এর চেয়ে কষ্টের কিছু নেই। এ ছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবে শিল্প কারখানা সচল রাখা যাচ্ছে না। এতে পণ্য উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল গণমাধ্যমকে বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় শিল্প কারখানায় নতুন চাপ বাড়বে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পণ্য উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও ক্রেতারা কিন্তু সেই বাড়তি দাম দেবেন না। প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যাবে না। ক্রেতারা যেখানে কম দামে পাবেন, সেখান থেকেই পণ্য কিনবেন, এটাই স্বাভাবিক।

শিল্পে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি বন্ধের পাশাপাশি সিরামিক শিল্পের সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন-বিসিএমইএ। গ্যাস সংকটের কারণে এরই মধ্যে অনেক শিল্প রুগ্ন হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় দাম বাড়ালে বহু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংগঠনের নেতারা।

সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় বিসিএমইএ। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট মইনুল ইসলাম।

তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় রুগ্ন হয়ে পড়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। গ্যাসের চাপ ১৫ পিএসআই (চাপ প্রতি বর্গইঞ্চি) পাওয়ার কথা। সেখানে দুই, কখনও শূন্যতেও নেমে আসছে। নির্দিষ্ট মাত্রায় গ্যাস না পেলে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় থাকা পণ্য তৎক্ষণাত নষ্ট হয়ে যায়। বিগত বছরে গ্যাস সরবরাহ যথাযথ না থাকায় উৎপাদন ব্যহত হয়েছে। যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ দিতে না পারায় অর্ডার বাতিল করেছে বিশ্বের অনেক নামিদামি কোম্পানি।

তাজা ফল আমদানিতে বর্ধিত ভ্যাট এবং অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার না হওয়ায় মঙ্গল (৪ ফেব্রুয়ারি) ও বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা ফল খালাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমদানিকারকরা। বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ তৌহিদুল আলম জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পাশাপাশি দেশের সব স্থলবন্দর দিয়েও এই দুদিন আমদানি করা ফল খালাস বন্ধ রাখা হবে বলে জানান তিনি।

রাজশাহীর কোল্ড স্টোরেজগুলোতে আলু সংরক্ষণের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে কৃষকেরা। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মোহনপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ চলাকালে কৃষকরা রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের উপর চার বস্তা আলু ফেলে প্রতিবাদ জানায়। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে মোহনপুর, তানোর ও পবা উপজেলার সহস্রাধিক কৃষক অংশ নেয়।

রাজশাহীতে বর্তমানে ৩৬টি হিমাগার রয়েছে। এতে ধারণ ক্ষমতা ৯৫ লাখ বস্তা আলু। যার ওজন প্রায় ৫ লাখ টন। আন্দোলনে অংশ নেয়া আলু চাষি আব্দুল্লাহ জানান, প্রতি কেজি আলুর সংরক্ষণের জন্য আগে ৪ টাকা ভাড়া দিতে হতো। এবার তা বৃদ্ধি করে ৮ টাকা করা হয়েছে। এমনিতেই আলুর দাম কম। এর উপর আবার ভাড়া বাড়লে লোকসানগুনতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়