শিরোনাম
◈ মধ্যরাতে ব্যারিকেড ভেঙে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে জুলাইয়ের আহতরা (ভিডিও) ◈ গোপালগঞ্জ পুলিশের সাথে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ, আহত ১০ (ভিডিও) ◈ নির্বাচন ও দলগঠন ইস্যুতে ছাত্রদের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব বাড়ছে ◈ ২ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল হাসিনাকন্যা পুতুলের (ভিডিও) ◈ লিবিয়ায় ২৩ লাশ দাফন, নিখোঁজ আরও ৩১: ফেসবুক লাইভে রাষ্ট্রদূত (ভিডিও) ◈ প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে যেতে বাধা পেয়ে শাহবাগে আহতদের অবস্থান (ভিডিও) ◈ মসজিদ থেকে বেরিয়ে আটক আ.লীগ নেতা, পুলিশের গাড়ি থেকে ছিনিয়ে নিল গ্রামবাসী ◈ নিহত যুবদল নেতার পারিবারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বৈঠক ◈ অষ্টম শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে ‘হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ’, রিকশায় করে নিয়ে লাশ ফেলা হয় হাতিরঝিলে ◈ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা দরকার: টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন

প্রকাশিত : ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৮:৫৯ রাত
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০২:১৭ রাত

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

সিলেট-১০ নম্বর কূপ থেকে জাতীয় গ্রীডে আসছে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস

মনজুর এ আজিজ : চলতি ফেব্রুয়ারিতেই সিলেট-১০ নম্বর কূপ থেকে দৈনিক ২০-২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রীডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত গ্যাসের উৎপাদন কমতে থাকায় সবাই যখন চিন্তিত ঠিক এ সময়ে একে দারুণ সংবাদ হিসেবে দেখছে পেট্রোবাংলা।

সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকায় অবস্থিত ওই কূপটির খনন কাজ ২০২৩ সালের নভেম্বরে শেষ হয়। পাইপলাইন না থাকায় গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে কূপটি থেকে হরিপুর পর্যন্ত ৬ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন বসানোর প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই পাইপলাইন নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সওজের (সড়ক ও জনপথ বিভাগ) রোড কাটার অনুমতি না পাওয়ায় পিছিয়ে যায় কাজটি।

বর্তমানে পাইপলাইনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেই কমিশনিং করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমান। তিনি বলেন, রিভার ক্রসিংসহ অবশিষ্ট পাইপলাইনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে গ্যাস সরবরাহ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত কাজের মনিটরিং করা হচ্ছে।

সিলেট-১০ কূপটিতে গ্যাসের পাশাপাশি তেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। ৩টি স্তরে গ্যাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। স্তরগুলোর অবস্থান হচ্ছে ২৪৬০ থেকে ২৪৭৫ মিটার, ২৫৪০ থেকে ২৫৭৬ মিটার ও ৩৩০০ মিটার গভীরতায়। গ্যাসের সম্ভাব্য মজুদ ৪৩.৬ থেকে ১০৬ বিলিয়ন ঘনফুট হতে পারে। সিলেট-১০ থেকে পাওয়া তেলের নমুনা বুয়েট এবং ইস্টার্ন রিফাইনারী উৎকৃষ্টমানের বলে রিপোর্ট দিয়েছে।

অন্যদিকে ১৩৯৭-১৪৪৫ মিটার গভীরতায় তেলের অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। পরীক্ষামূলক উৎপাদনের সময় প্রথম দিন ২ ঘণ্টায় ৭০ ব্যারেল তেল তোলা হয়। তেলের উত্তোলনযোগ্য মজুদ প্রায় দেড় কোটি ব্যারেল বলে ধারণা করা হয়েছে। দৈনিক ৬০০ ব্যারেল (১ ব্যারেল সমান ১৬৯ লিটার) হারে উত্তোলন করলে ১০ বছর পর্যন্ত উত্তোলন করা সম্ভব বলে কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান স্লামবার্জার তার রিপোর্টে উল্লেখ করেছে। স্লামবার্জারের রিপোর্টে ১৪.৮ মিলিয়ন ব্যারেল (প্রায় দেড় কোটি) তেল উত্তোলনযোগ্য বলা হয়েছে। ফিল্ডটিতে আরেকটি কূপ খননের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

এদিকে প্রতিদিনই কমছে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন, জানুয়ারি মাসেই উৎপাদন কমেছে ১৯ মিলিয়ন ঘনফুট। ১ জানুয়ারি মোট উৎপাদন ছিল ১৯২৯ মিলিয়ন ঘনফুট, ৩০ জানুয়ারিতে ১৯১১ মিলিয়নে নেমে গেছে। যা গত ১ নভেম্বর ছিল ১৯৬৮ মিলিয়নে।

এক সময় দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে দৈনিক ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেতো। চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে থাকা ঘাটতি সামাল দিতে গিয়ে চড়া দরে এলএনজি আমদানির দিকে ঝুঁকে আওয়ামী লীগ সরকার। ফলে দফায় দফায় দাম বাড়িয়েও ঘাটতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। নতুন শিল্পের জন্য ১৫২ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে পেট্রোবাংলা। যা এখন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের বিবেচনাধীন রয়েছে।

রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি তাদের গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে বলেছে, দেশে ৮টি গ্রাহক শ্রেণিতে অনুমোদিত লোডের পরিমাণ রয়েছে দৈনিক ৫ হাজার ৩৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার বিপরীতে দৈনিক ২ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে, আর ঘাটতি থেকে যাচ্ছে প্রায় ১ হাজার ২০০ মিলিয়নের মতো। তবে প্রকৃত চিত্র হচ্ছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গড়ে ২ হাজার ৪৯৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

জানা যায়, বাংলাদেশ ভূ-খন্ডে ১১৩ বছরে অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে ৯৯টির মতো। এর মাধ্যমে ২৯টি গ্যাসফিল্ড আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছে। মোবারকপুর ও কসবার মতো কয়েকটি ফিল্ডে গ্যাসের উপস্থিতি পেলেও বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য নয় বলে ঘোষণা দেওয়া হয় নি। বাংলাদেশ প্রতি ৫ হাজার বর্গ কিলোমিটারের একটি করে কূপ খননের লক্ষ্যে কাজ করছে, আমেরিকা প্রতি ১৪ বর্গকিলোমিটারের ১টি এবং ভারত ১৮.৬ বর্গকিলোমিটারের ১টি কূপ খনন মানদন্ড বিবেচনা করা হয়। ফলে সঙ্গত কারণে দেশে গ্যাস সংকটের জন্য অনুসন্ধান স্থবিরতাকেই দায়ী করে আসছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

এ প্রসঙ্গে সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. রেজাউল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, সওজের অনুমোদন না পাওয়ায় কাজটি বিলম্বিত হয়েছে। এখনও লিখিত অনুমোদন পাওয়া যায় নি। মৌখিক নির্দেশনার আলোকে কাজ চলমান রয়েছে। ২টি রিভার ক্রসিংয়ের মধ্যে একটি শেষ হয়েছে, আরেকটির কাজ চলমান রয়েছে। 

তিনি বলেন, হরিপুরে প্রসেস প্ল্যান্ট রয়েছে, সেখানে এনে প্রসেস করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে। হরিপুরের দৈনিক ৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রসেস করার সক্ষমতা রয়েছে। তার বিপরীতে বর্তমানে ১৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রসেস করা হচ্ছে। সিলেট ১০ নম্বর কূপের ২০-২৫ মিলিয়ন গ্যাসের পরও আরও সক্ষমতা থাকবে। এছাড়া এ কুপ থেকে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ ব্যারেল তেল উত্তোলন সম্ভব বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়