শিরোনাম
◈ মাঠের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়, অনলাইনেই সংগঠিত হতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ ◈ রাশিয়ায় কাজের প্রলোভনে নিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশিদের (ভিডিও) ◈ মেঘনা নদীর নৌ সীমানায় ডাকাতদলের গোলাগুলি, নিহত ২ ◈ অন্তর্বর্তী সরকারের আসন্ন দিনগুলোয় চ্যালেঞ্জ আরো বাড়বে ◈ আবারও বাড়লো ডলারের দাম ◈ বাংলাদেশসহ তিন দেশে উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ করতে যাচ্ছে সুইজারল্যান্ড ◈ ওসিকে পেটানোর হুমকি, সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিলেই পুরস্কার ◈ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুসলিম দেশ কোনটি? জেনে নিন এমন ১০টি দেশ সম্পর্কে ◈ দেখা গেছে শাবান মাসের চাঁদ, আরব আমিরাতে রোজা হবে ৩০টি ◈ ‘যে ৪ শর্তে ফিরতে পারবে আ.লীগ’

প্রকাশিত : ৩০ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:৫২ রাত
আপডেট : ৩১ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান: দরপত্র জমা না দেওয়ার কারণ জানালো ২ কোম্পানি

মনজুর এ আজিজ: সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে প্রথমবারের মতো বড় উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। এজন্য অনেকটা ঘটা করে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। তবে এ উদ্যোগ কোনো কাজেই আসেনি। বিদেশি সাতটি কোম্পানি দরপত্র কিনলেও শেষ পর্যন্ত জমা দেয়নি কেউ। দরপত্র জমা না দেওয়ার কারণ জানতে দুই দফায় কোম্পানিগুলোকে চিঠি দেয় পেট্রোবাংলা। প্রথম দফায় কোনো কোম্পানি জবাব না দিলেও দ্বিতীয় দফার চিঠি পেয়ে দুটি কোম্পানি তাদের জবাব দিয়েছে। তবে তাদের জবাব তেমন সন্তোষজনক নয় বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। 

পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কারণ জানতে গত ২৬ ডিসেম্বর কোম্পানিগুলোকে চিঠি দেয় পেট্রোবাংলা। ওই সময় বড়দিন ও নতুন বছরের ছুটির অজুহাতে পেট্রোবাংলার চিঠিরও কোনো উত্তর দেয়নি কোম্পানিগুলো। পরে দ্বিতীয় দফায় আবারও চিঠি পাঠায় পেট্রোবাংলা। এবার জবাব দিয়েছে মাত্র দুটি কোম্পানি। ১১ জানুয়ারি চিঠির জবাব দিয়েছে মার্কিন কোম্পানি এক্সনমবিল। এর কয়েক দিন পর চিঠির জবাব দিয়েছে শেভরন। তবে অন্য কোনো কোম্পানি এখনো জবাব দেয়নি। 

সূত্র মতে, এক্সনমবিল তাদের চিঠিতে ব্লকের ডাটা অর্থাৎ তথ্য-উপাত্তের দাম বেশি রাখা, ব্লক থেকে স্টেশন পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণের খরচ অন্তর্ভুক্ত না রাখা এবং ওয়ার্কার্স পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) অন্তর্ভুক্ত রাখার বিষয়ে জানিয়েছে। এছাড়া অনুসন্ধান ব্লক থেকে স্টেশন পর্যন্ত ২০০-৩০০ কিলোমিটার ট্যারিফ পাইপলাইন নির্মাণের প্রয়োজন হবে। পেট্রোবাংলার প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্টে (পিএসসি) এ বিষয়ে কোনো তথ্য ছিল না।

আবার অনেক কোম্পানি দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি বড় বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এসব কারণেও কোম্পানিগুলো দরপত্র জমা না দিয়ে থাকতে পারে।

পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুটি কোম্পানি চিঠির জবাব দিয়েছে। অন্য কেউ এখনো দেয়নি। সবগুলো কোম্পানির চিঠির জবাব পেলে বিস্তারিত বলা যাবে, কেন তারা দরপত্রে অংশগ্রহণ করেনি। তাদের অভিযোগগুলো শুনে সরকার চাইলে এটার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে দরপত্র আকর্ষণীয় করে তুলতে পারবে।

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করার জন্য এবার আগের চেয়ে পিএসসি আকর্ষণীয় করা হয়েছে। আগের পিএসসিগুলোতে গ্যাসের দাম নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলেও ২০২৩ সালের পিএসসিতে গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়নি। ব্রেন্ট ক্রুডের আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে ওঠানামা করবে গ্যাসের দর। এখানে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ব্রেন্ট ক্রুডের ১০ শতাংশ। অর্থাৎ ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৯০ ডলার হলে গ্যাসের দাম হবে ৯ ডলার। তেলের দাম বাড়লে গ্যাসের দামও বাড়বে, কমলে এটিও কমবে। এখন তেলের দাম ৭০ থেকে ৭২ ডলার, এতে গ্যাসের দাম হবে ৭ থেকে ৭ দশমিক ২ ডলার। দরপত্র ডাকার সময় তেলের দাম ছিল ৯০ ডলারের বেশি। এ কারণেও কোম্পানিগুলো আগ্রহ প্রকাশ করেনি। এছাড়া দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন অনেকে। তারা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি বড় বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এসব কারণেও কোম্পানিগুলো দরপত্র জমা না দিয়ে থাকতে পারে।

কোম্পানিগুলো দরপত্র জমা না দেওয়ার কারণ জানতে পেট্রোবাংলার পরিচালককে (প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট) প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সে সময়ের তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন বর্তমানে পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি এখন আর তদন্ত কমিটিতে নেই। কেন তারা দরপত্র জমা দেয়নি চিঠির জবাব পেলে হয়তো বোঝা যাবে।

জানা যায়, সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দরপত্র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, অগভীর সমুদ্রের ১১টি ব্লকের মধ্যে নয়টি (এসএস-০১, ০২, ০৩, ০৫, ০৬, ০৭, ০৮, ১০ ও ১১) এবং গভীর সমুদ্রের ১৫টি ব্লকের (ডিএস-০৮ থেকে ডিএস-২২) জন্য এ দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগে থেকে দুটি অগভীর সমুদ্রের ব্লক ভারতের অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস করপোরেশনকে (ওএনজিসি) অনুসন্ধানের জন্য দেওয়া আছে।

২০১২ সালে ভারত ও ২০১৪ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক সীমানার বিরোধ নিষ্পত্তি হয় বাংলাদেশের। ফলে গভীর সমুদ্রে ১৫টি ও অগভীর সমুদ্রে ১১টি মিলে মোট ২৬টি ব্লকে চিহিৃত করা হয়। এর মধ্যে ২০১০ সালে গভীর সমুদ্রে দুটি ব্লকে কাজ নেয় কনোকো ফিলিপস। তারা দ্বিমাত্রিক জরিপ চালালেও পরে গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি পূরণ না হওয়ায় কাজ ছেড়ে চলে যায়। এছাড়া একইভাবে চুক্তির পর কাজ ছেড়ে চলে যায় অস্ট্রেলিয়ার স্যান্তোস ও দক্ষিণ কোরিয়ার পস্কো দাইয়ু। এখন একমাত্র কোম্পানি হিসেবে অগভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকে অনুসন্ধান চালাচ্ছে ভারতের কোম্পানি ওএনজিসি।

দরপত্রে অংশগ্রহণের অনুমতির বিষয়ে বলা হয়, আন্তর্জাতিক যেসব কোম্পানির দৈনিক অন্তত ১৫ হাজার ব্যারেল তেল বা প্রতিদিন ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের অভিজ্ঞতা আছে শুধু তারাই দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এছাড়া দরপত্রে অংশ নিতে হলে কোনো কোম্পানিকে নিজ দেশের বাইরে অন্তত একটি কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কোম্পানিগুলো এক বা একাধিক ব্লকের জন্য দরপত্রে অংশ নিতে পারবে। মডেল প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট (পিএসসি) ২০২৩-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আন্তর্জাতিক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ ছিল।

সূত্র মতে, বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানির মধ্যে মার্কিন কোম্পানি এক্সনমবিল ও শেভরন, মালয়েশিয়ার পেট্রোনাস, নরওয়ে ও ফ্রান্সের যৌথ কোম্পানি টিজিএস অ্যান্ড স্লামবার্জার, জাপানের ইনপেক্স করপোরেশন ও জোগম্যাক, চীনের সিনুক, সিঙ্গাপুরের ক্রিস এনার্জি এবং ভারতের ওএনজিসি আগ্রহ প্রকাশ করে বিভিন্ন সময় পেট্রোবাংলার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এর মধ্যে সমুদ্রে বহুমাত্রিক জরিপের তথ্য কিনেছিল শেভরন, এক্সনমবিল, ইনপেক্স, সিনুক ও জোগোম্যাক। দরপত্র কিনেছিল শেভরন, এক্সনমবিল, ইনপেক্স, সিনুক, জোগম্যাক, ক্রিস এনার্জি এবং ওএনজিসি। কিন্তু শেষ পর্যন্তু দরপত্র জমা দেয়নি কেউ।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক, জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কোম্পানিগুলো আসছে না। নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ না দেওয়া পর্যন্ত তারা হয়তো বিড করবে না। কারণ সেক্ষেত্রে ঝুঁকি থেকে যায়। এরকম পরিস্থিতিতে কোম্পানিগুলো বিভিন্ন বাড়তি সুযোগ-সুবিধা চায়। সেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়াও দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য অপেক্ষা করা ছাড়া কিছু করার নেই। কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। নির্বাচনের রোডম্যাপ এলে হয়তো কোম্পানিগুলো বিড করবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়