শিরোনাম
◈ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুসলিম দেশ কোনটি? জেনে নিন এমন ১০টি দেশ সম্পর্কে ◈ দেখা গেছে শাবান মাসের চাঁদ, আরব আমিরাতে রোজা হবে ৩০টি ◈ ‘যে ৪ শর্তে ফিরতে পারবে আ.লীগ’ ◈ সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান গ্রেপ্তার ◈ বাংলাদেশে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে জাপান : ড. ইউনূস ◈ বাংলাদেশে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে ট্রাম্পের ব্যবসায়িক অংশীদার জেনন্ট্রি বিচ (ভিডিও) ◈ নির্বাচনের বিকল্প নেই, এরসঙ্গে কম্প্রোমাইজ নেই: তারেক রহমান (ভিডিও) ◈ শেভরনের প্রস্তাব নাকচ করেছে বাংলাদেশ ◈ ছাত্ররা দল গঠন করবে, এটা দরকার: ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে ড. ইউনূস ◈ কোচের বিরুদ্ধে বডি শেমিংয়ের লিখিত অভিযোগ নারী ফুটবলারদের, গণ-অবসরের হুমকি (ভিডিও)

প্রকাশিত : ২৯ জানুয়ারী, ২০২৫, ১১:৫৫ দুপুর
আপডেট : ৩০ জানুয়ারী, ২০২৫, ১০:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘দেশের অর্থনীতি ছিল মানুষের ধারণার চেয়েও খারাপ অবস্থায়’

ডেইলি স্টার: অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, গত ১৫ বছর ধরে দেশ শাসন করা আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে যে সমস্যাসংকুল অর্থনীতি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পেয়েছে, সেটা ঠিক করা বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, 'যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব পেলো, তখন দায়িত্বের সঙ্গে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে এক সমস্যাসংকুল অর্থনীতি। এর পরিস্থিতি মানুষের ধারণার চেয়েও খারাপ ছিল।'

তিনি জানান, বাইরে থেকে দৃশ্যমান সমস্যা তো ছিলই, অভ্যন্তরীণ সমস্যা ছিল আরও তীব্র—বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত কমছিল, মূল্যস্ফীতি বাড়ছিল এবং ব্যাল্যান্স অব পেমেন্ট ছিল নেগেটিভ।

তিনি বলেন, 'আমরা যেখানে যেতে চাই, সেই অবস্থায় এখনো পৌঁছাইনি। তবে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে।'

নতুন সরকার আরও একটি বড় সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল—৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বকেয়া এলসি পাওনা।

'বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে হাত না দিয়েই নতুন সরকার এই বকেয়া পরিশোধ করেছে এবং এর পরিমাণ ৪০০–৫০০ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর জানান, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য তিনি সরবরাহ ব্যবস্থার সমস্যাকে দায়ী করে বলেন, 'জিনিসপত্র যে নেই, তা না। কিন্তু সেগুলো এক জায়গায় আটকে রাখে।'

মাঝরাতে কাপ্তান বাজারের পাইকারি ডিমের আড়তে যাওয়ার অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক মিত্ররা এটা নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা এখানে তেমন কিছুই করতে পারি না। এমনকি ভোক্তা অধিকার আইন বা একজন-দুজন ম্যাজিস্ট্রেট গিয়েও কোনো পরিবর্তন আনতে পারবেন না। পণ্য পরিবহনের সময় চাঁদাবাজির কারণেও খরচ বাড়ছে, যা মূল্যস্ফীতি বাড়াচ্ছে।'

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাংকিংখাতকে স্থিতিশীল করতে এবং সিস্টেমের সম্পূর্ণ ধস প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর ছিল, যেকোনো সময় ব্যাংকগুলোর টাকা শেষ হয়ে যেতে পারে, এমন ভয় ছড়িয়ে পড়েছিল। কয়েকজন ব্যক্তির কারণে একটি ব্যাংক খালি হয়ে যাওয়া বিরল ঘটনা। বিশ্বে এমন নজির নেই।'

আওয়ামী লীগের সমর্থনপুষ্ট এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা কিছু ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে জানান তিনি। যার মধ্যে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।

রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছে এবং তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা ব্যাংকিংখাতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক উদ্যোগ নিয়েছি, যাতে আমানতকারীরা তাদের টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে আস্থা না হারান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি সহায়তা দিয়েছে এবং এখন মানুষের টাকা পেতে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না।'

তিনি বলেন, নতুন গভর্নর চেষ্টা করছেন। কিন্তু, আগের অব্যবস্থাপনা ও খারাপ সিদ্ধান্তগুলো এমন গভীর সংকটের সৃষ্টি করেছে, যার সমাধান করা কঠিন।

উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ দীর্ঘদিন ধরে আদালতে আটকে আছে।

তিনি বলেন, 'আদালতগুলোতে মামলার জট অনেক বেশি। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। হতে পারে যে, একটি বিশেষ বিচার বিভাগীয় বেঞ্চ এই আটকে থাকা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে দিতে পারে। কিন্তু এর জন্য যথেষ্ট মনোযোগ ও প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আমি শিগগির আইন উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসব এবং এই জট নিরসনের জন্য তাদের একটি বিশেষ বেঞ্চ চালু করার অনুরোধ জানাবো।'

তিনি জানান, সরকার কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ বন্ধ করেছে। কিন্তু, অঘোষিত সম্পদ বৈধ করার একটি উপায় সিস্টেমে রয়ে গেছে। যেমন: মানুষ তাদের সম্পত্তি নিবন্ধিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি করছে। এর ফলে বিপুল পরিমাণ অঘোষিত অর্থের সৃষ্টি হচ্ছে। এই অঘোষিত অর্থ দিয়ে তারা গাড়ি, যন্ত্রপাতি বা অন্যান্য সম্পদ কিনছে, যার মাধ্যমে যথাযথ জবাবদিহিতা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'এর মাধ্যমে এমন একটি সিস্টেম তৈরি হয়, যেখানে কালো টাকা ছড়িয়ে পড়ে। আমরা এর সমাধানের চেষ্টা করব।'

সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয় স্বীকার করে তিনি বলেন, 'এই সমস্যা এখনও রয়ে গেছে।'

'আমরা এটা বন্ধের চেষ্টা করছি। কিন্তু কাজটা সহজ না। কারণ, এখনো আগের মতো লোক রয়ে গেছে, কিন্তু অন্য নামে। যার কারণে সত্যিকারের পরিবর্তন কঠিন হয়ে উঠেছে।'

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের ব্যর্থতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে তাদের পরামর্শ পর্যালোচনা করব। তবে এর মধ্যে কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নও করা হয়েছে।'

উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, সরকার পাচার করা অর্থ ফেরত আনার জন্য টাস্কফোর্স গঠন করেছে এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে।

আগের সরকার কিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সুবিধার্থে বেশ কয়েকটি আইনগত নিয়ন্ত্রণ আদেশ দিয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'দায়িত্ব পাওয়ার পর আমরা এসআরওগুলো বাতিল করেছি। আমরা কর নীতি ও কর প্রশাসন পৃথক করছি। ২০০৮ সালে সরকার এই কাজটি করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পারেনি। এবারও কিছু কর্মকর্তা এটিকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইছেন—ক্ষমতা কে ছাড়তে চায়? কিন্তু, আমি যাওয়ার আগে এটি বাস্তবায়ন করব।'

ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ বেশি ব্যবহার করেন, এমন পণ্যের কর ইতোমধ্যেই কমানো হয়েছে।

'বাকি যেগুলো আছে সেগুলো সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব ফেলে না। যেমন: যেসব বিস্কুটের দাম কেজিপ্রতি ২০০ টাকার বেশি, তার ওপর ভ্যাট যুক্তিসঙ্গত। যারা ২০০ টাকার বিস্কুট কেনেন, তাদের ভ্যাট দেওয়ার সামর্থ্য আছে।'

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো অবাস্তব প্রকল্প হাতে নেবে না। তবে, গভীর সমুদ্রবন্দরসহ বিদ্যমান মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ চলবে।

'এই সরকার গ্রামীণ এলাকা উন্নত করতে স্থানীয় সড়ক ও কালভার্ট নির্মাণে মনোযোগ দেবে।'

সরকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা কমানোর পরিকল্পনা করছে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'অনেকে সমালোচনা করেন যে আমরা আগের সরকারের প্রস্তাবিত বাজেট সংশোধন করিনি। আসলে এত তাড়াহুড়ো করে বাজেট সংশোধন করা যায় না। বাজেট সংশোধন করা না হলেও আমরা প্রয়োজনীয় ব্যয়ের বাইরে সরকারি ব্যয় কাটছাঁট করেছি।'

তিনি জানান, একটি অতি প্রয়োজনীয় ব্যয় ছিল বাংলাদেশ পুলিশের জন্য যানবাহন কেনা। কারণ, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় তাদের ৩০০টি যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'আগামী বাজেট হবে বাস্তবমুখী। এটা অজনপ্রিয় বাজেট হবে না। তবে এতে জনগণকে মোহিত করার মতো সিদ্ধান্তও থাকবে না। বিদ্যুৎখাতে ভর্তুকি থাকবে। তা না হলে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।'

বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হবে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা, জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং কৃষিখাতে এমন উদ্যোগ নেওয়া, যাতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়