শিরোনাম
◈ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতের অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া নিয়ে ভিভ রিচার্ডসের প্রশ্ন ◈ ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলে থাকছেন সিমন্স ও সালাউদ্দিন  ◈ গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী এক নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রকাশ্যে, যা জানাগেল ◈ বিসিবি ক্রিকেটারদের বেতন ও ম্যাচ ফি বাড়াচ্ছে ◈ খালেদা জিয়া আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে অনেক ভালো আছেন : ডা. জাহিদ হোসেন ◈ নির্বাচনের মাঠে কোন দল কী অবস্থানে ◈ শাপলা চত্বর ও গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলমের স্ট্যাটাস ◈ তৃতীয় ধাপে প্রাথমিকে নির্বাচিত ৬৫৩১ শিক্ষকের যোগদানের তারিখ ঘোষণা ◈ সংশোধিত এডিপি অনুমোদন, ব্যয় কমল ৪৯ হাজার কোটি টাকা ◈ বাংলাদেশে প্রতিশোধমূলক সহিংসতা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে জাতিসংঘের প্রতিবেদন: ফলকার টুর্ক

প্রকাশিত : ২৭ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৯:৩৭ রাত
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৭:০০ সকাল

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

গ্যাসের দাম বাড়ালে পোশাক খাতে খরচ বাড়বে ১৮ হাজার কোটি টাকা

মনজুর এ আজিজ : শিল্পখাতে গ্যাসের দাম বাড়ালে পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্পের ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোতে বছরে অতিরিক্ত প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে বলে মনে করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, এতে শিল্পায়ন ও অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সম্প্রতি এসব তথ্য জানিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বরাবর চিঠি পাঠিয়েছে এ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। 
চিঠিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত বেশকিছু প্রতিবেদনের সূত্রে আমরা অবগত হয়েছি যে, সরকার শিল্পখাতে গ্যাসের মূল্য পুনরায় বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে, যা প্রতি ঘনমিটারে প্রায় ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৭৫ টাকা করা হতে পারে। এরূপ মূল্য বৃদ্ধি কার্যকর করা হলে তা শিল্পায়ন ও অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

করোনা মহামারির অভিঘাত মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়াতে না দাঁড়াতে আমাদের বস্ত্র ও পোশাক খাত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ এবং বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির চাপের সম্মুখীন হয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পোশাক রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। তবে বিগত তিন অর্থবছরের তুলনামূলক প্রবৃদ্ধি বিচারে রপ্তানিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। 

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বৈশ্বিক পর্যায়ে পোশাকের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমেও ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। আংকটাড প্রকাশিত গ্লোবাল ট্রেড আপডেট প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৪ সালে বিশ্বে পোশাক আমদানি ৫ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমাদের শিল্পে, বিশেষ করে রপ্তানি মূল্যের ওপর। উল্লেখ্য ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারগুলোতে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পোশাকের মূল্য যথাক্রমে ৪ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ কমেছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায়।

মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল ও বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএলএমইএ) চেয়ারম্যান হোসেন মেহমুদ।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে গ্যাসের মোট সরবরাহ ছিল ২৫ হাজার ৯৪৭ এমএমসিএম, যার ১৮ শতাংশ সরবরাহ করা হয়েছে শিল্পখাতগুলোয়। শিল্পে ব্যবহৃত মোট গ্যাসের প্রায় ৩০ শতাংশ সরবরাহ হয় পোশাকখাতে, সেই হিসেবে এই শিল্পের বার্ষিক গ্যাস চাহিদা প্রায় ১ হাজার ৪০০ এমএমসিএম। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্যাসের এই ব্যবহারের মধ্যে মূল্য যদি প্রতি ঘনমিটারে ৪৫ টাকা বৃদ্ধি পায়, তবে এই খাতে বার্ষিক অতিরিক্ত প্রায় ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা খরচ বৃদ্ধি পাবে, যা রপ্তানি আয়ের প্রায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ। পাশাপাশি টেক্সটাইল শিল্পের ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো দেশের মোট গ্যাস সরবরাহের প্রায় ১০ শতাংশ ব্যবহার করে, যার পরিমাণ বছরে প্রায় ২ হাজার ৫৯৫ এমএমসিএম। ৪৫ টাকা হারে মূল্য বৃদ্ধি করা হলে টেক্সটাইল শিল্পের ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোকে বছরে প্রায় অতিরিক্ত ১১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা খরচ বহন করতে হবে, যা বার্ষিক পোশাক রপ্তানি আয়ের প্রায় ২ দশমিক ৭ শতাংশ। এই ব্যাপক হারে খরচ বৃদ্ধি শিল্পের সক্ষমতা ছাড়িয়ে যাবে, ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। 

এদিকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, আর ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে ৯ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট কার্যকর করা হয়েছে। বিগত ৫ বছরে গ্যাসের মূল্য বেড়েছে ২৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ, বিদ্যুতের মূল্য বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৫০ শতাংশ, ডিজেলের মূল্য বেড়েছে ৬৮ শতাংশ এবং ব্যাংক সুদ বৃদ্ধি পেয়ে ১৪-১৫ শতাংশ হয়েছে। সার্বিকভাবে বিগত ৫ বছরে কারখানার গড় উৎপাদন খরচ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। এই প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই রপ্তানিখাতে প্রচলিত প্রণোদনা কমিয়ে আনা হয়েছে। 

অন্যদিকে জুলাই বিপ্লবের পূর্বে ও পরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়া, ব্যাংকিং সেক্টরে সংকট, শ্রম অসন্তোষ ও সার্বিক নিরাপত্তা ইস্যু, ইত্যাদি কারণে শিল্পের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত হয়েছে। তাছাড়া গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির উদ্যোগটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন আমাদের কারখানাগুলো গ্যাসের অপর্যাপ্ত চাপ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে এবং ব্যাপক আর্থিক লোকসানের শিকার হচ্ছে। আমাদের শিল্পঘন এলাকাগুলোতে বিশেষ করে গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ এবং সাভারে অবস্থিত কারখানাগুলোয় গ্যাস সংকটের কারণে ৫০-৬০ শতাংশ হারে উৎপাদন কমে গেছে। ফলে কারখানাগুলোর প্রোডাকশন শিডিউল এবং সরবরাহ চেইন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এর প্রভাবে পোশাক খাতে সময়মতো কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ফলে শিল্পে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি রপ্তানি বিঘ্নিত হচ্ছে, লিড টাইম ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং আমরা ক্রেতাদের আস্থা হারাচ্ছি। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে পোশাক শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং বস্ত্রখাতে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ১৮ দশমিক ১১ শতাংশ। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে তা বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং চলমান মিল ও কারখানাগুলোকে সংকটে ফেলবে। 

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, বস্ত্র ও পোশাকখাত বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, সামাজিক উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নে অনবদ্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। অতএব অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য এই শিল্পের স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিল্পখাত ও ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোয় গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা স্থগিত করা এবং শিল্পখাতে বিরাজমান গ্যাসের সংকট মোকাবেলায় সিএনজি স্টেশন থেকে সিলিন্ডারের মাধ্যমে কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করা এবং নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়