শিরোনাম
◈ পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্টের! ◈ বাংলাদেশিও সহ ১০ অভিবাসীকে গুয়ান্তানামো বে কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত, আদালতে মামলা দায়ের ◈ এবার অভিনেত্রী শ্রদ্ধা কাপুর মুঠোফোন থেকে প্রেমিকের ঘনিষ্ঠ ছবি ফাঁস ◈ সেনাপ্রধানের সতর্কবার্তা নিয়ে যা বললেন আন্দালিব রহমান পার্থ (ভিডিও) ◈ নির্বাহী অফিসারের রুমে ৪ জামায়াত নেতাকে পেটালেন বিএনপি নেতারা ◈ পুরোনো সংবিধান রেখে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়: নাহিদ ইসলাম ◈ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতের অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া নিয়ে ভিভ রিচার্ডসের প্রশ্ন ◈ ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলে থাকছেন সিমন্স ও সালাউদ্দিন  ◈ গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী এক নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রকাশ্যে, যা জানাগেল ◈ বিসিবি ক্রিকেটারদের বেতন ও ম্যাচ ফি বাড়াচ্ছে

প্রকাশিত : ১৩ জানুয়ারী, ২০২৫, ১১:৪১ দুপুর
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৯:০০ সকাল

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

রিজার্ভ হ্যাক করে নেয়া অর্থের ৪০ ভাগ উদ্ধার, পাচারের অর্থ ফেরত আনায় অগ্রগতি কতটুকু?

এল আর বাদল : বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর এখানো পাচার হওয়া কোনো অর্থ ফেরত আনা যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট(বিএফআইইউ) এই তথ্য জানিয়েছে। রিজার্ভ হ্যাক করে হাতিয়ে নেয়া অর্থের এ পর্যন্ত ৪০ ভাগ ফেরত এসেছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চুরির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংক মামলা করে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনকে (আরসিবিসি)। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (নিউইয়র্ক ফেড) থাকা বাংলাদেশের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার হ্যাক করে। -ডয়েচেভেলে

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র কমিটি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, শেখ হাসিনার শাসনামলের গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ২০২৪ সালে এক গবেষণায়  ৫০ বছরে বাংলাদেশে থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ১১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা বলে জানায়। আর যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্ট্রিগ্রিটি (জিএফআই) বলছে, ২০১১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৯ হাজার কোটি বা ৯০ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে।

বর্তমান সরকার পাচার হওয়া অর্থের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে খুবই তৎপর। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বার বার বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে যে অর্থ পাচার হয়েছে তা বিশ্বে নজীরবিহীন এবং একটি রেকর্ড। তিনি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে গত ২৮ অক্টোবর প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘শুধু ব্যাংক দখলের মাধ্যমেই বাংলাদেশ থেকে আনুমানিক দুই লাখ কোটি পাচার করা হয়েছে।

পাচারের অর্থ ফেরত আনতে এরইমধ্যে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে৷ আর পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে আন্তর্জাতিক আইনি প্রতিষ্ঠান নিযুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতিনিধি ছাড়াও বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠকের প্রক্রিয়া চলছে। আর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা চাচ্ছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের  নির্বাহী পরিচালক এ কে এম এহসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, আমরা পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার ব্যাপারে নানা উদ্যোগ নিচ্ছি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর কোনো টাকা ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তবে রিজার্ভ হ্যাক করে যে টাকা নেয়া হয়েছিলো তার ৪০ ভাগের মতো এপর্যন্ত ফেরত এসেছে। আমরা তো আগেই এটা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা করেছি। রিজার্ভের অর্থ বিভিন্ন সময়ে ফেরত এসেছে।

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, অর্থ পাচারের ব্যাপারে তদন্ত করে দুদক। আর আমরা গোয়েন্দা তথ্য যোগাড় করি। আমরা স্থানীয়ভাবে তথ্য সংগ্রহ করি। সেই তথ্য আমরা যেসব দেশে প্রয়োজন সেসব দেশকে দিই। তারাও আমাদের তথ্য দেয়। এভাবে আমরা পাচার হওয়া অর্থের তথ্য সংগ্রহ করি।

বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে অন্তর্র্বতী সরকার একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এই টাস্কফোর্সের উদ্দেশ্য হলো- বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ বা সম্পদ চিহ্নিতকরা ও তদন্তে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে সহযোগিতা করা।

পাচারকৃত সম্পদ উদ্ধারে দায়ের করা মামলাগুলোর কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করা ও তা দূরীকরণে উদ্যোগ নেয়া।

বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ বাংলাদেশে ফেরত আনার উদ্যোগ নেয়া। জব্দ বা উদ্ধার হওয়া সম্পদের ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশি, বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ, তথ্য আহরণ করা। পাচার হওয়া সম্পদ উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট পক্ষের সক্ষমতা বাড়ানো ও অভ্যন্তরীণ সমন্বয় সাধন।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই টাস্কফোর্সের সদস্য। দুদক বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে এখন পর্যন্ত ১২টি দেশে ৭১টি চিঠি ও মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে। এরমধ্যে ২৭টি এমএলএআরের জবাব পেয়েছে সংস্থাটি। দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন ডয়চে ভেলেকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

দুদক মহাপরিচালক বলেন, ‘মানি লন্ডারিং, পাচার হওয়া অর্থ কীভাবে ফেরত পেতে পারি তা নিয়ে আমরা অর্থ পাচার হওয়া দেশগুলোর নাম তাদের কাছে তুলে ধরেছি। বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে মানি লন্ডারিং বেশি হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর আবুল কাসেম বলেন, ‘আসলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ হলো পাচার হওয়া টাকা চিহ্নিত করা। আর সেটা ব্যাংকিং চ্যানেলে পাচার হলেই তারা চিহ্নিত করতে পারে। কোনো ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন দেখলে তারা সেটা তদন্ত করে।  তারা সেটা প্রমাণ পেলে দুদক আইনগত ব্যবস্থা নেয়। এরপর মামলা ও তদন্ত হয়। বিচারে প্রমাণ হলে দেশে অর্থ পাচার হয়েছে সেই দেশের চাহিদা মতো কাগজপত্র দিলে তারা অর্থ ফেরতের বিষয়টি বিবেচনা করে। তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে একবারই সিংগাপুর থেকে অর্থ ফেরত আনা গেছে।

সিঙ্গাপুরের আদালতের নির্দেশে ২০১২ ও ২০১৩ সালে ফেয়ারহিল নামের একটি পরামর্শক সংস্থার নামে ব্যাংকে গচ্ছিত থাকা প্রায় এক মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের আদালতের নির্দেশনার পরও মামলাটি নিষ্পত্তি হতে সময় লেগেছে প্রায় তিন বছর।

আবুল কাসেম বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অর্থ পাচার বিরোধী জোট এগমন্ড গ্রুপের সদস্য। এরফলে সদস্য দেশলোর সঙ্গে অর্থ পাচারের তথ্য আদান প্রদান করতে পারে। তবে সেখানে শর্ত থাকে যে ওই তথ্য  আদালতে উপস্থাপন করা যাবে কী না। উপস্থাপন করতে হলে তাও আগে থেকে চুক্তি করে নিতে হয়,'' বলেন তিনি।

আর  যমুনা ব্যাংকের সাবেক এমডি নুরুল আমিন বলেন, ‘‘বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৮৭টি দেশ এগমন্ড গ্রুপের সদস্য। এর বাইরে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট-এর মাধ্যমে পাচারের অর্থ ফেরত আনা যায়। কিন্তু সেটা তো প্রমাণ সাপেক্ষ।  আবার অনেক দেশ আছে যে তারা আপনাকে তথ্য দেবে না, তাদের আইনের কারণে। ফলে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা অসম্ভব না হলেও কঠিন।

তার চেয়ে ভালো হলো, পাচার রোধে ব্যবস্থা নেয়া। বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়াও আরো সংস্থা আছে যারা অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কাজ করে। তারা সক্রিয় হলে পাচার কমে যাবে। 

বাংলাদেশে অর্থ পাচারের অপরাধগুলোর অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে পারে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), পরিবেশ অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)৷ আর সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্ব বিএফআইইউর।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়