শিরোনাম
◈ রেফারির সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ফুটবল মাঠে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, শতাধিক সমর্থকের মৃত্যু ◈ হেফাজতে ইসলামের আমির ও বায়তুল মোকাররমের খতিবসহ শীর্ষ ১২ আলেমের বিরুদ্ধে মামলা ◈ সাকিবকে ছাড়াই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে ওয়ানডে দল ঘোষণা বিসিবির, নেই শান্তও ◈ আয়ারল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ নারী দল ◈ তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের ফের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ◈ নেতাদের কথাবার্তায়-চলাফেরায় নির্ভর করছেন বিএনপির আগামীর ভবিষ্যৎ: তারেক রহমান ◈ মমতার বক্তব্য সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি, প্রত্যাহারের দাবি মির্জা ফখরুলের ◈ ভেস্তে গেল বেনাপোল-পেট্রাপোল বানিজ্য ও যাতায়াত পরিসেবা বন্ধের চক্রান্ত ◈ ভারতের দুঃখ প্রকাশ বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ◈ ট্রেনে ছিনতাই: ওমরাহ ভিসা থাকায় সেই মা-ছেলের পাসপোর্ট ফিরিয়ে দিল

প্রকাশিত : ০১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০:৪৬ দুপুর
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৮:০০ রাত

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

বিবিসির প্রতিবেদন

আদানির সঙ্গে ঢাকার বিতর্কিত চুক্তিটি যেভাবে সম্পন্ন হয়েছিল

এল আর বাদল: চুলচেরা হিসেবে পাক্কা ৯ বছর ৬ মাস আগের কথা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী, আর পেয়েছিলেন বিপুল অভ্যর্থনাও। সেবার কেউ তাকে সে দেশে কালো পতাকা দেখায়নি, বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রবল করতালিতে তাকে স্বাগত জানিয়েছিল।

২০১৫র ৭ই জুন তারিখে নরেন্দ্র মোদীর সেই ঢাকা সফরের শেষ পর্বে দুই দেশ যে যৌথ বিবৃতিটি জারি করে, তার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘নতুন প্রজন্ম নঈ দিশা’। বাস্তবিকই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নানা নতুন গতিপথ বা বাঁকবদলের আভাস ছিল সেই ঘোষণাপত্রে।

৬০টি অনুচ্ছেদের সুদীর্ঘ ওই ঘোষণাপত্রে সবচেয়ে লম্বা ছিল ২৩ নম্বর অনুচ্ছেদটি, যাতে বিদ্যুৎ খাতে দুই দেশের সহযোগিতার রূপরেখা বর্ণনা করা হয়েছিল। 

সেখান থেকে অংশবিশেষ তুলে দেওয়া যাক :
বিদ্যুৎ খাতে দুই দেশের সহযোগিতা ও অর্জনের মাত্রায় উভয় প্রধানমন্ত্রীই গভীর সন্তোষ ব্যক্ত করেছেন এবং এই সহযোগিতাকে আরও প্রসারিত করতে সম্মত হয়েছেন। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার অক্লান্ত প্রয়াসকে এবং ‘২০২১ লক্ষ্য’ (অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে ২৪০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা অর্জন) বাস্তবায়নে তার সরকারের নিরন্তর প্রচেষ্টাকে প্রধানমন্ত্রী মোদীও সমাদর করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদী এই বার্তাও দেন যে এই লক্ষ্য অর্জনে ভারত খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে পারে এবং ভারতে এমন বহু কর্পোরেট সংস্থা আছে যারা এই প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে প্রভূত সহযোগিতা করতে পারে।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন, সরবরাহ ও বিতরণ খাতে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর প্রবেশের পথ যাতে প্রশস্ত হয়, সে জন্যও তিনি প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে অনুরোধ জানিয়েছেন।

ঘোষণাপত্রে কোনও ভারতীয় কর্পোরেট সংস্থার নাম উল্লেখ করা হয়নি – কিন্তু বিদ্যুৎ খাতের দু’টি কোম্পানি, আদানি পাওয়ার ও রিলায়েন্সের প্রতিনিধিরাই কেবল সেবার প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছিলেন, কাজেই ধরেই নেওয়া যেতে পারে নরেন্দ্র মোদী এদের কথাই বুঝিয়েছিলেন।

এর মধ্যে গৌতম আদানির নেতৃত্বাধীন আদানি গোষ্ঠীর প্রস্তাবটি ছিল অভিনব ও দক্ষিণ এশিয়াতে নজিরবিহীন, কারণ তারা ভারতের মাটিতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করে সেখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ পুরোটাই বাংলাদেশে রফতানি করার কথা বলেছিলেন।

অন্য দিকে অনিল আম্বানির রিলায়েন্স পাওয়ার ৩০০ কোটি ডলার খরচ করে বাংলাদেশে একটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিল, যার ক্ষমতা হবে ৩০০০ মেগাওয়াট। বলা হয়েছিল একটি এলএনজি টার্মিনাল গড়ে তোলার কথাও।

নরেন্দ্র মোদীর সফরের শেষ দিনেই মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জে একটি ফাইলিংয়ে রিলায়েন্স পাওয়ার জানিয়েছিল, তারা বাংলাদেশে এ ব্যাপারে ‘মউ’ বা সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর করেছে।

যদিও পরে জ্বালানি গ্যাস সরবরাহে অনিশ্চয়তার কারণে রিলায়েন্সের সেই প্রকল্প কখনও দিনের আলো দেখেনি।
আদানি পাওয়ার কিন্তু ‘নতুন প্রজন্ম, নঈ দিশা’ ঘোষণাপত্র জারির ঠিক আট বছরের মাথায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানি শুরু করে দেয়।

কিন্তু যে আন্তর্জাতিক চুক্তির অধীনে এই বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয় এবং ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় যে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে থাকে – সেরকম বিতর্কিত চুক্তি বা পাওয়ার স্টেশন এই অঞ্চলে আর একটিও নেই বললেও বোধহয় ভুল হবে না।

আদানি পাওয়ার ও বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) মধ্যে স্বাক্ষরিত যে পিপিএ (পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট) বা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিটি এখন নতুন করে আলোচনায়, তার ভিত কিন্তু রচিত হয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর সেই ঢাকা সফরেই।

এর আগে পর্যন্ত প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভারতের সরকারি বা রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোই শুধু ব্যবসা করার অনুমতি পেত (যেমন রামপালে এনটিপিসি), কিন্তু বাংলাদেশে আদানির জন্য ভারত সেই নিয়মেরও ব্যতিক্রম ঘটায়।
পরবর্তী এক দশকে গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলা ও বাংলাদেশে সেই বিদ্যুৎ বেচার ইতিবৃত্ত কোনও ‘কর্পোরেট থ্রিলারে’র চেয়ে কম রোমাঞ্চকর নয়!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়