রেকর্ড গড়ার পর বিশ্ববাজারে এবার বড় দরপতনের মধ্যে স্বর্ণের দাম। প্রতি সপ্তাহেই লাফিয়ে লাফিয়ে কমছে দাম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল ও ডলারের বিনিময় হারসহ নানা প্রভাবে কমছে দাম।
চলতি বছরের শুরু থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম। যার প্রভাবে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম পৌঁছে গিয়েছিল প্রায় ২ হাজার ৮০০ ডলারে। এ ধারা অব্যাহাত থাকলে আগামী বছরের শুরুতে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করেছিলেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তবে সে ধারা এখন নিম্নমুখী। বর্তমানে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম নেমে এসেছে ২ হাজার ৫০০ ডলারের ঘরে। কিন্তু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকা স্বর্ণের দামের এই পতন কেন?
সম্প্রতি স্বর্ণের আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, ডলারের মান শক্তিশালী হতে থাকায় কমতে শুরু করেছে স্বর্ণের দাম। স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম আগের দিনের তুলনায় দশমিক ১৩ শতাংশ কমেছে। প্রতি আউন্সের মূল্য নেমেছে ২ হাজার ৫৬১ ডলারে, যা ২০ সেপ্টেম্বরের পর থেকে সর্বনিম্ন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাজার পর্যবেক্ষণ সংস্থা কেসিএম ট্রেডের শীর্ষ বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটেরার বলেন, সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং তার ফলাফল ডলারের মানের জন্য আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। স্বর্ণের দাম কমার মূল রহস্য লুকিয়ে আছে ডলারের মান শক্তিশালী হওয়ার মধ্যে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) জানায়, ট্রাম্পের জয়ের পর থেকেই ঊর্ধ্বমুখী ডলারের বাজার। পাশাপাশি যুদ্ধ পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার শঙ্কা কাটতে শুরু করেছে। যার প্রভাবে কমছে দাম।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) বরাত দিয়ে বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিংয়ের চেয়ারম্যান ও বাজুস সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান সময় সংবাদকে বলেন, চলতি বছরের শুরুর দিকে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা, গুজব ও ফেডারেল রিজার্ভের সুদহারের প্রভাবে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের প্রতি বিনিয়োগ বেড়ে গিয়েছিল। মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে বাইডেন প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পৃথিবী ৩য় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঝুঁকছে বলে একটি গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। যার ফলে বিনিয়োগকারীরা সে সময় বিনিয়োগের উপযুক্ত মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণকেই বেছে নিয়েছিল। যার প্রভাবেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল দাম।
তবে বর্তমানে সে ধারা নিম্নমুখী। ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকে ডলারের মান শক্তিশালী হতে শুরু করেছে। ডলারের মান মূলত বাড়ছে বিটকয়েনের দাম বৃদ্ধির ফলে। ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর এ ডিজিটাল মুদ্রা-বান্ধব নীতি নেবেন- এমন প্রত্যাশা থেকেই বাড়ছে বিটকয়েনের দাম। মূলত নির্বাচনী প্রচারণায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্রিপ্টোকারেন্সির পক্ষে জোরালো অবস্থান নেয়ায় এর দাম ঊর্ধ্বমুখী। যার প্রভাবে স্বর্ণ ছেড়ে বিনিয়োগকারী অন্যখাতে বিনিয়োগে ঝুঁকছেন বলে জানান মাসুদুর রহমান।
ট্রাম্প জয়লাভ করায় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি অনেকটাই কমে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ট্রাম্পের নীতি হলো ‘ডু দি বিজনেস’। সে যুদ্ধের বদলে ব্যবসাবান্ধব বিশ্ব চায়। যার প্রভাব অনেকটাই শুরু হয়ে গেছে। বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করছেন। এতে স্বর্ণের ওপর চাপ কমায় দাম তরতর করে কমে যাচ্ছে।
বিশ্ববাজারের স্বর্ণের দাম কমায় দেশের বাজারেও দাম নিম্নমুখী বলে জানান মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামের যে প্রবণতা চলছে এতে দাম আরও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর বিশ্ববাজারে দাম কমলে এর প্রভাব পড়ে দেশের বাজারেও। দাম কমলে যে কোনো সময় দেশের বাজারেও দাম কমানো হতে পারে।
গত ১৪ দিনে দেশের বাজারে ৪ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছে বাজুস। যার মধ্যে প্রতিবারই কমানো হয়েছে দাম। সবশেষ গত ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে টানা চতুর্থ দফা স্বর্ণের দাম কমিয়েছে বাজুস। ভরিতে ১ হাজার ৬৮০ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫০৯ টাকা নির্ধারণ করেছে সংগঠনটি।
এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১০ হাজার ৬২ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯০ হাজার ২৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত ১৫ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে।
এ নিয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দেশের বাজারে ৪৯ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। যেখানে ২৮ বার দাম বাড়ানো হয়েছে, আর কমানো হয়েছে ২১ বার। আর ২০২৩ সালে দাম সমন্বয় করা হয়েছিল ২৯ বার। উৎস সময়নিউজটিভি।
আপনার মতামত লিখুন :