ডেস্ক রিপোর্ট : জলবায়ুর প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পরিবেশ সচেতনতা বাড়ছে বিশ্বব্যাপী। উৎপাদন থেকে ভোক্তা– সব পর্যায়েই প্রাকৃতিক সম্পদের সচেতন ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে তৈরি পোশাকের বর্জ্যের পরিবেশ সহায়ক রিসাইকেল বা পুনর্ব্যবহারে উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এ ধরনের পোশাক উৎপাদন ব্যয়বহুল। অথচ বাড়তি দর দিতে রাজি নয় ক্রেতা-ভোক্তারা। এ কারণে পুনর্ব্যবহার প্রয়োজনমতো বাড়ছে না।
অন্যদিকে, পুনর্ব্যবহার না বাড়ালে আগামী পাঁচ বছরের মাথায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি সংকুচিত হতে শুরু করবে। তাই বাংলাদেশকে রিসাইকেল পণ্যের দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে ব্র্যান্ডিং করতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার এক সেমিনারে এ কথা বলেন তৈরি পোশাকের সরবরাহ চেইনের সঙ্গে সম্পর্কিত ক্রেতা-উন্নয়ন সহযোগী ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তারা। তারা বলেন, তৈরি পোশাকের বর্জ্য বা ঝুট শুধু অর্থনীতির বিষয় নয়। এর সঙ্গে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ও জড়িত। সরকার পরিবর্তনের পর গত কয়েক মাস ধরে পোশাক খাতে যে অস্থিরতা চলছে, এর পেছনেও ঝুট ব্যবসার বিষয়টি অনেকটা দায়ী। এ বাস্তবতায় পোশাক খাতের অস্থিরতা নিরসন এবং বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই চক্রাকার অর্থনীতির দিকে অগ্রসর হওয়াই নিরাপদ কৌশল। এ জন্য জাতীয় একটি নীতি কৌশল প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সার্কুলারিটির অগ্রযাত্রার পথবিষয়ক এই সেমিনারটি রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত হয়। ইউনাইটেড নেশন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইউএনআইডিও), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ এ আয়োজন করে। কয়েকটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা আয়োজনে সহায়তা দেয়। সেমিনার পরিচালনা করেন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক এবং দেশ গার্মেন্টের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভিদিয়া অম্রিত খান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. আবদুর রহিম খান বলেন, তৈরি পোশাকের ঝুট ব্যবসা শুধু অর্থনীতির বিষয় নয়। সাম্প্রতিক সময়ে তৈরি পোশাক খাতের অস্থিরতার জন্য অনেক ক্ষেত্রে ঝুট ব্যবসা দায়ী। অর্থনীতি এবং শিল্পে স্থিতিশীলতা ফেরাতে ঝুটের পুনর্ব্যবহারই টেকসই সমাধান হতে পারে। এ জন্য জাতীয় একটি নীতি কৌশল প্রণয়ন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ইইউ সবুজ চুক্তিতে আরও বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। এ কারণে বর্জ্যের পরিবেশ সহায়ক পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে ইইউ জোটের ২৭ দেশে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বাংলাদেশে ইইউ প্রতিনিধি দলের উপপ্রধান ড. বার্ন্ড স্প্যানিয়ার বলেন, ইইউ সবুজ চুক্তির লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। চুক্তিটি টেকসই এবং চক্রাকার অর্থনীতির ভিত্তি। তৈরি পোশাকের উৎপাদন কাঠামোকে পরিবেশ ও প্রতিবেশ সহায়ক করার আবশ্যকতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পুনর্ব্যবহারযোগ্য শিল্পে লাখ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যেতে পারে। আমদানিনির্ভরতা কমাতেও সাহায্য করতে পারে এটি। তবে এ জন্য একটি কার্যকর নীতি কাঠামো অপরিহার্য। তিনি বলেন, ঝুট ব্যবসার সঙ্গে রাজনৈতিক অর্থনীতির সম্পর্ক রয়েছে। যেমনটি আশুলিয়া এবং ঢাকার বিভিন্ন অংশে সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষের সময় দেখা গেছে। এ খাতকে আনুষ্ঠানিকীকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি নিয়ন্ত্রক কাঠামো এবং যথাযথ প্রযুক্তি প্রয়োজন।
জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেডের প্রতিনিধি বলেন, বর্জ্যের পুনর্ব্যবহারের জন্য প্রতিবেশ সহায়ক টেকসই ব্যবসার কথা সবাই বলছে। এ জন্য প্রযুক্তি বিনিয়োগসহ প্রয়োজনীয় সব কিছুর জোগান দেওয়া সম্ভব। তবে ব্যবসার জন্য তা যদি লাভজনক না হয়, তাহলে যত কথাই বলা হোক না কেন, বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার সম্ভব হবে না। কারণ, পুনর্ব্যবহার পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেশি। ভোক্তা যদি বাড়তি এবং ন্যায্য দর না দেন, তাহলে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এ ব্যবসায় আসা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘ভোক্তাদের বোঝাতে হবে, ন্যায্য দাম দিয়ে পণ্য কিনে নাও। কমপ্লায়েন্ট হও, নয়তো মৃত্যুকে ডেকে আনো।’
ইউনিডোর চিফ টেকনিক্যাল অফিসার মার্ক ড্র্যাক বলেন, বাংলাদেশকে আগামীতে সার্কুলার ইকোনমির দেশ হিসেবে ব্র্যান্ডিং করতে হবে। তা না হলে আগামী পাঁচ বছর পর এ দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ক্রমেই কমে আসতে পারে।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক রিজওয়ান সেলিম বলেন, বছরে চার লাখ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয় পোশাক কারখানাগুলোতে। এর মাত্র ৫ শতাংশের পুনর্ব্যবহার হয়। বাকি বর্জ্য অত্যন্ত কম দামে বিক্রি করতে হয়। তৈরি পোশাকের বিশ্ববাজার প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে টেকসই সমাধান প্রয়োজন। ভিদিয়া অম্রিত বলেন, বর্জ্যের পুনর্ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জের একটি ভোক্তা এবং ক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব। তারা ন্যায্য দর দিলে সব কারখানই বর্জ্যের পুনর্ব্যবহারে উৎসাহিত হবে।
সুত্র : সমকাল
আপনার মতামত লিখুন :