শিরোনাম
◈ প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব হলেন তিথি ও নাইম ◈ ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ: জানালেন আইন উপদেষ্টা ◈ জাহাঙ্গীরনগরে ‘গণপিটুনিতে’ সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু ঘিরে রহস্য ◈ তমা মির্জার সঙ্গে সম্পর্ক ফাটলের গুঞ্জন, যা বললেন রাফি (ভিডিও) ◈ ‘মারছে, ভাত খাওয়াইছে, এরপর আবার মারছে, ভাত খাওয়াইছে : তোফাজ্জলের মামাতো বোন (ভিডিও) ◈ ঢাবিতে পিটিয়ে যুবক হত্যার ঘটনায় ৪ শিক্ষার্থী আটক ◈ শামীম ওসমানের পুরোনো ভিডিওটি ভাইরাল : ‘ফিরব কি না জানি না’ ◈ জাদেজা-অশ্বিনের জুটিতে টেস্টের নিয়ন্ত্রণ হারালো বাংলাদেশ ◈ দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, ঘুরতে দেখা গেছে পার্কে : ফিনান্সিয়াল টাইমসের রিপোর্ট ◈ ফের নেতাকর্মীদের জন্য আওয়ামী লীগের জরুরি নির্দেশনা

প্রকাশিত : ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৭:৫৩ বিকাল
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১১:৫৭ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেল : রিজার্ভের ৫০ কোটি ডলার ব্যয়, পুরোটাই অপচয়

ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে পটুয়াখালীর পায়রা নদীর রাবনাবাদ চ্যানেলের গভীরতা বাড়াতে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ড্রেজিং প্রকল্প হাতে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর বেশির ভাগই নির্বাহ হয়েছে রিজার্ভের অর্থ দিয়ে গঠিত বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল (বিআইডিএফ) থেকে নেয়া ৫০০ মিলিয়ন (৫০ কোটি) ডলারের মাধ্যমে। খননের মাধ্যমে গত বছরের মার্চের মধ্যেই গভীরতা সাড়ে ১০ মিটারে উন্নীত করা হয়। কিন্তু এরপর প্রকল্পের খনন কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার আগেই পলি পড়ে ভরাট হতে থাকে রাবনাবাদ চ্যানেলের তলদেশ। খনন কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে চলতি বছরের ১৪ আগস্ট। আর সর্বশেষ ৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, এরই মধ্যে রাবনাবাদ চ্যানেলের গভীরতা নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৩ মিটারে। মাস শেষ হওয়ার আগেই তা ৭ মিটারের নিচে নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে।  সূত্র : বনিক বার্তা

বর্তমানে এ চ্যানেল দিয়ে বড় জাহাজ চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বড় জাহাজ চলাচলের জন্য চ্যানেলটির অন্তত ৮ দশমিক ৭ মিটার গভীরতা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় দেশে ডলার সংকটের মধ্যেও চ্যানেলটি খননে বিআইডিএফের মাধ্যমে রিজার্ভ থেকে দেয়া ৫০ কোটি ডলারের পুরোটাই অপচয় হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। 

নাব্য কমে আসায় পায়রা বন্দর এখন ক্রমেই অকার্যকর হয়ে পড়ছে। বর্তমানে কোনো ধরনের কার্গো জাহাজ পায়রায় ভিড়তে পারছে না। সাধারণ জাহাজ চলাচল করতে পারলেও সেগুলো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য দরকার হচ্ছে ছোট লাইটার জাহাজ। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, পুনরায় ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করা না হলে চ্যানেলের গভীরতা আরো কমে আসবে। যদিও পুনরায় খনন কার্যক্রম শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাবনাবাদ চ্যানেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে খনন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে গেলে তা সেটিও এক ধরনের নিষ্ফল অপচয় হবে। অবস্থানগত কারণেই এখানে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় গভীরতা ধরে রাখা অসম্ভব। রাবনাবাদসহ পায়রার চ্যানেলগুলো দিয়ে প্রতি বছর উজান থেকে আসা বিপুল পরিমাণ পলি বঙ্গোপসাগরে পড়ছে। প্রবাহপথে আসা এ পলি জমা হতে থাকায় এ চ্যানেলের গভীরতা ধরে রাখা যায় না। এজন্য নিয়মিত ড্রেজিং ছাড়া বন্দরটি চালু রাখা কঠিন। কিন্তু সেটিও অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ অবস্থায় পায়রা বন্দরের অর্থনৈতিক মুনাফাযোগ্যতা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় ধরনের সংশয় রয়েছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। 

বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে পায়রা বন্দরের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। এটি এখন অনেকটা অভ্যন্তরীণ নৌ-বন্দরে পরিণত হয়েছে। রাবনাবাদ চ্যানেলে খনন শুরুর আগে জার্মান একটা বিশেষজ্ঞ দলকে আনা হয়েছিল। তারা লিখিতভাবে বলে গেছে, যতই খনন করা হোক, চ্যানেলটিতে পলি জমবেই এবং এটি খনন অব্যাহত রাখার কোনো বিকল্প নেই। সম্ভাব্যতা সমীক্ষায়ও একই কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সে সময় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের চাপের কারণে অনেকটা জোর করেই খনন স্কিমটি শুরু করা হয়।

অবস্থানগত কারণেই পায়রা বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞরাও। নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, ‘বাংলাদেশের নদীগুলো দিয়ে বিপুল পরিমাণ পলি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ে। তার কিছু অংশ আবার জোয়ারের সঙ্গে উপকূলে ফেরত আসে। আমরা লক্ষ্য করছি, উপকূল থেকে রায়মঙ্গল নদীর ১৫-২০ কিলোমিটার দক্ষিণে প্রচুর পলি জমা হচ্ছে। নদী সেখানে সারা বছর সক্রিয় থাকার কারণে চর পড়ছে না কিন্তু ডুবোচরের মতো থাকছে। কাজেই পায়রা বন্দরকে সারা বছর কার্যকর রাখার জন্য তিন-চার বছর পরপরই সেডিমেন্ট কেটে সেখানে গভীরতা বাড়াতে হবে। ছোট জাহাজের জন্য পায়রা ঠিক আছে। কিন্তু এটাকে গভীর নৌবন্দরে পরিণত করতে গেলে নিয়মিত বিরতিতে ড্রেজিং ছাড়া উপায় নেই এবং এ ড্রেজিং অনেক ব্যয়বহুল।’

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, রাবনাবাদ চ্যানেল খনন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত একটি স্কিম বাস্তবায়ন করা হয়। এতে খরচ হয় ৬ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু রাবনাবাদ চ্যানেল খনন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে খরচ হয় ৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। গত বছরের মার্চে চ্যানেলটির সর্বোচ্চ গভীরতা ১০ দশমিক ৫ মিটারে উন্নীত হয়েছিল। চলতি বছরের এপ্রিলে স্কিমের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর জরুরিভাবে গত ১৪ আগস্ট পর্যন্ত খনন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এরপর থেকে খননকাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। 

পায়রা বন্দরে ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে রিজার্ভ থেকে অর্থ নিয়ে। ২০২১ সালে রিজার্ভ থেকে অর্থ নিয়ে ‘বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল (বিআইডিএফ)’ নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলে তৎকালীন সরকার। এ সংস্থাটি এখন পর্যন্ত কেবল পায়রা বন্দরেই অর্থায়ন করেছে। যে সময় পায়রা বন্দরের ড্রেজিং স্কিম গ্রহণ করা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবায়নে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। যদিও ৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হালনাগাদকৃত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবায়নে গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ এখন প্রায় ২৫ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। আর আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিপিএম৬ পদ্ধতিতে হিসাবে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২০ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলারে। 

বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ১৪ আগস্ট রাবনাবাদ চ্যানেলের সর্বোচ্চ গভীরতা ছিল ৮ দশমিক ৭ মিটার। খনন বন্ধ থাকায় ধারাবাহিকভাবে পলি জমে গত ৫ সেপ্টেম্বর তা ৭ দশমিক ৩ মিটারে নেমে আসে। ২৫ সেপ্টেম্বর তা ৬ দশমিক ৬ মিটারে নেমে যাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে।

সাধারণত ১ হাজার টিইইউএস কনটেইনারবাহী একটি জাহাজের জন্য বন্দর চ্যানেলের গড় গভীরতা থাকতে হয় ৮ দশমিক ৭ মিটার। আর ৪ হাজার টিইইউএস কনটেইনারবাহী জাহাজের জন্য বন্দর চ্যানেলের গড় গভীরতা প্রয়োজন হয় ১২ দশমিক ৫ মিটার। রাবনাবাদ চ্যানেলে বর্তমানে এ গভীরতা না থাকার কারণে জাহাজ চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে রাবনাবাদ চ্যানেলে খনন কার্যক্রম আবার শুরুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে পানিসম্পদ উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছেন পায়রা বন্দরের চেয়ার‍ম্যান। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করেও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন ও পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ধারাবাহিকভাবে চ্যানেলের গভীরতা কমে যাওয়ার বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার (অতিরিক্ত দায়িত্বে) ক্যাপ্টেন এসএম শরিফুর রহমান বলেন, ‘‌রাবনাবাদ চ্যানেলে ক্যাপিটাল ও রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং নামের একটি স্কিমের মাধ্যমে নাব্যতা ধরে রাখতে খনন কার্যক্রম চলে আসছিল। এ স্কিমের মেয়াদ চলতি বছরের এপ্রিলে শেষ হয়েছে। এরপর জরুরি ভিত্তিতে আরো দুই মাস খননকাজ পরিচালনা করা হয়। গত ১৪ আগস্ট জরুরি খননকাজও শেষ হয়েছে। এরপর থেকে রাবনাবাদ চ্যানেলে আর কোনো খননকাজ চলছে না। ফলে প্রতিনিয়ত চ্যানেলে পলি জমছে ও নাব্যতা কমে আসছে।’ 

পুনরায় খনন কার্যক্রম শুরুর জন্য পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান তিনি।

চ্যানেলের নাব্য কমে যাওয়ায় জাহাজ চলাচলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‌জাহাজ চলাচল ঠিক আছে। কিছু ক্ষেত্রে খালাস ও লোড কার্যক্রমে লাইটার জাহাজ ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে কার্গো চলতে পারছে না। এগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।’

পরে এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করলে হলে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বন্দর) মুহিদুল ইসলাম  বলেন, ‘‌আমি বৃহস্পতিবারই এ মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেছি। বিষয়টি সম্পর্কে আমি এখনো অবগত নই।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়