শিরোনাম
◈ অনলাইনে আবেদন করে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া ই-পাসপোর্ট পাওয়ার উপায় ◈ ফরিদপুরে দুইপক্ষের সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ আহত ৫ ◈ বন্দর থেকে নিধারিত সময়ে পণ্য না নিলে তিনগুণ জরিমানা: নৌ উপদেষ্টা ◈ পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্টের! ◈ বাংলাদেশিও সহ ১০ অভিবাসীকে গুয়ান্তানামো বে কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত, আদালতে মামলা দায়ের ◈ এবার অভিনেত্রী শ্রদ্ধা কাপুর মুঠোফোন থেকে প্রেমিকের ঘনিষ্ঠ ছবি ফাঁস ◈ সেনাপ্রধানের সতর্কবার্তা নিয়ে যা বললেন আন্দালিব রহমান পার্থ (ভিডিও) ◈ নির্বাহী অফিসারের রুমে ৪ জামায়াত নেতাকে পেটালেন বিএনপি নেতারা ◈ পুরোনো সংবিধান রেখে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়: নাহিদ ইসলাম ◈ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতের অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া নিয়ে ভিভ রিচার্ডসের প্রশ্ন

প্রকাশিত : ১৩ আগস্ট, ২০২৪, ০২:০৮ রাত
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১০:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চাঁদাবাজি বন্ধে ব্যবসার খরচ কমবে ১০ শতাংশ আর শাকসবজির ৪০ শতাংশ পর্যন্ত : ব্যবসায়ী নেতারা

দেশে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সড়কে যে চাঁদাবাজি হয়, তাতে ব্যবসার পরিচালন ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। এ চাঁদাবাজির সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এমনকি প্রশাসনের লোকজন জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে। চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে পরিবহন শ্রমিকদের পক্ষ থেকে নানা সময়ে প্রতিবাদ এলেও পরিস্থিতি পাল্টায়নি। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে চাঁদাবাজির উৎপাত এখন অনেকটাই কমে এসেছে। সূত্র : বণিক বার্তা

ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, চাঁদাবাজি বন্ধ হলে ব্যবসার ব্যয় খাতভেদে গড়ে ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। আর শাকসবজির মতো নিত্যপণ্যের দাম কমতে পারে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত।

ট্রাফিক পুলিশের অবর্তমানে সড়কে যান চালাচল নিয়ন্ত্রণ করছেন শিক্ষার্থীরা। এতে কমে এসেছে পুলিশের হয়রানিও। এ অবস্থায় চাঁদাবাজি ও হয়রানিমুক্ত ব্যবসায়িক মডেল কেমন হতে পারে তা নিয়ে চলছে আলোচনা-বিশ্লেষণ। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, চাঁদাবাজি বন্ধ হলে পণ্য পরিবহনের সময়ও কমে আসবে। কারণ মোড়ে মোড়ে চাঁদা দিতে গিয়ে পণ্যবাহী যানকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সড়কে শিক্ষার্থীদের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন দেশের নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘সড়কে ছাত্রদের ভূমিকা অসাধারণ। এভাবে চাঁদাবাজিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে ব্যবসার পরিচালন ব্যয় ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসবে। আর শাকসবজির মতো নিত্যপণ্যের দাম কমবে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। আগামীতে দেশে ঘুস-দুর্নীতি কমে আসবে বলেও আমরা আশাবাদী।’

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পরিবহন বা লজিস্টিক খাতের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের লজিস্টিক খাতের ব্যয় খাতভেদে সাড়ে ৪ থেকে ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত হয়, যা প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। পণ্যমূল্য হিসাবে পরিবহন ব্যয় ১ শতাংশ কমাতে পারলে রফতানি চাহিদা ৭ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব হবে। আর এ খাতে স্বল্পমেয়াদি কিছু সংস্কার করা গেলে দেশের রফতানি আয় বাড়ানো সম্ভব ১৯ শতাংশ পর্যন্ত।

দেশের পণ্য পরিবহন বা লজিস্টিক খাত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘ব্যবসার অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের মধ্যে অন্যতম হলো সড়কে চাঁদাবাজি। চাঁদা দিতে গিয়ে মোড়ে মোড়ে পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে থেমে থাকতে হয়। ফলে সময় নষ্ট হয়। চাঁদাবাজি বন্ধ হলে ব্যয় কমার পাশাপাশি সময়ও সাশ্রয় হবে।’ 

এ খাতের গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকার এ বছর জাতীয় লজিস্টিক নীতিমালা গ্রহণ করে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, ২০৪১ সালের মধ্যে সড়কে যাত্রী চলাচল বাড়বে ২৯ গুণ। আর ফ্রেইট ট্রাফিক ১০ গুণ, পোর্ট কনটেইনার ১৩ ও সমুদ্রগামী কনটেইনার চলাচল বাড়বে ২২ গুণ। 

২০১৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের মোট পণ্য পরিবহনের ৭৭ শতাংই হয় সড়কপথে। নৌপথে হয় ১৬ ও রেলপথে ৬ শতাংশ। তবে ২০৪১ সালের মধ্যে সড়কপথে পণ্য পরিবহন ৬০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে নীতিমালায়।

চাঁদাবাজি কমলে কোন খাতে কত শতাংশ ব্যয় কমবে তা হিসাব করা কঠিন বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, পণ্য ও দূরত্বভেদে চাঁদার হার ও পরিমাণ ভিন্ন হয়। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজাজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শাকসবজি, ইট-বালি কিংবা পাথর পরিহনের ক্ষেত্রে চাঁদার পরিমাণ বেশি হয়। আবার এলাকাভেদে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যও কম বেশি থাকে। একেক এলাকায় পুলিশ, মাস্তান বা রাজনৈতিক নেতারা এসব কারবারে যুক্ত থাকে। ফলে কতটা ব্যয় কমবে তা নির্দিষ্ট করে বলাটা কঠিন। তবে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে দেশের সব ভোক্তাই সুফল পাবে।’

চাঁদাবাজি কমলে শান্তিতে গাড়ি চালাতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন পরিবহন শ্রমিক নেতারাও। এখন নারায়ণগঞ্জ ছাড়া সারা দেশ অনেকটাই চাঁদাবাজমুক্ত বলে মনে করছেন তারা। 

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি তাজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসা-যাওয়ার পথে বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাকপ্রতি অন্তত ১ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। আর পুলিশি হয়রানি যুক্ত হলে এটা ২ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। সারা দেশে কমলেও নারায়ণগঞ্জের কার্গোস্ট্যান্ডে এখনো চাঁদা দিতে হয়। এটা ছাত্ররা বন্ধ করতে পারেনি।’

এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষস্থানীয় সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ঢাকার (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি. রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘খাদ্যপণ্যের দাম জীবনযাপনে বেশি প্রভাব ফেলে। চাঁদাবাজি না থাকায় এটা অনেক কমে আসছে। খরচ কমে আসার বিষয়টি খাতভেদে আলাদা হবে। তবে নিত্যপণ্যের দাম অনেক কমে আসছে। এটা মানুষের অনেক উপকারে আসবে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়