মনজুর এ আজিজ: [২.১] পচনশীল খাদ্যদ্রব্য আমদানিতে শুল্ক পরিশোধের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নতুন নীতিমালায় পণ্যবাহী ট্রাকের চাকা অনুপাতে আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন নির্ধারণের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রেখেছেন আমদানিকারকেরা।

[২.২] বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে তিনদিন ধরে পণ্য নিয়ে শতাধিত ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের লোকসান হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। 

[৩] এদিকে আটকে থাকা মাছ, টমেটো, আদা, রসুন, কাঁচা মরিচ, আপেল, আনারসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য প্রচণ্ড গরমে নষ্ট হতে শুরু করেছে। তবে খাদ্য পণ্য খালাস বন্ধ থাকলেও অনান্য পণ্যের আমদানি, রপ্তানি ও খালাস কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।

[৪] এনবিআরের নতুন নির্দেশনায়, আমদানি কমে যাওয়া ও বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। ক্ষোভ জানিয়ে আইন বাতিলের দাবিতে ইতোমধ্যে বিক্ষোভ করেছেন তারা। তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, এনিবিআরের আদেশ তারা পালন করছেন। 

[৫] বন্দর সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয়, তার বড় একটি অংশ ফল, মাছ ও সবজি জাতীয় পণ্য। সাধারণত, পণ্যের পরিমাপ ও সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে আমদানি শুল্ককর আদায় করা হয়ে থাকে। কিন্তু এনবিআর ফল, সবজি ও মাছের ক্ষেত্রে কত চাকার ট্রাকের পণ্য আসছে, তার ওপর ভিত্তি করে পণ্যের শুল্ককর আদায় করে থাকে।

[৬] এদিকে গত ২৩ জুন নতুন করে ট্রাকের চাকা অনুপাতে পণ্যের ওজন বাড়িয়ে শুল্ককর নির্ধারণ করে চিঠি দেয় এনবিআর। এতে প্রতি ট্রাকে অতিরিক্ত ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা গুনতে হচ্ছে। এতে লোকসানে পড়ে পণ্য খালাস বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া নতুন করে চাপিয়ে দেওয়া শুল্ককর প্রত্যাহারের দাবিতে কাস্টমস অফিসের সামনে বিক্ষোভ করেছেন পণ্য আমদানিকারকেরা। কোনো সমাধান না হওয়ায় পণ্য চালান আটকে গরমে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

[৭] এ বিষয়ে আমদানি, রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে শতাধিক ট্রাকে মাছ, ফল ও সবজি জাতীয় পণ্য আমদানি হয়। খালাস বন্ধ থাকায় ৩ দিনে সরকারের ৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় কমেছে।

[৮] আমদানি রপ্তানি সমিতির সেক্রেটারি জিয়াউর রহমান বলেন, কাস্টমস শুল্ককর বৃদ্ধির আগে তাদের ১২ চাকার এক ট্রাক হিমায়িত মাছে ৬ লাখ ১২ হাজার টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। এখন নতুন নিয়মে তাদের অতিরিক্ত দেড় লাখ টাকা গুনতে হবে। এছাড়া ফলের ট্রাকে বেশি গুনতে হবে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত, যা বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।

[৯] বন্দরে মাছ নিয়ে আটকে থাকা ট্রাকচালক মহিদুর রহমান জানান, কাস্টমস ছাড়পত্র না দেওয়ায় ৩ দিন আটকে থেকে ট্রাকের পণ্য নষ্ট হচ্ছে। একই কথা জানিয়েছেন, সবজি বহনকারী ভারতীয় ট্রাকচালক উত্তমও।

[১০] আমদানি, রফতানিকারক উজ্বল বিশ্বাস বলেন, এনবিআর নির্দেশনায় বলেছে, কোনো পণ্যবাহী ট্রাকে পণ্যের ওজন কমবেশি হলে তা শতভাগ ওজন করে খালাস দেওয়া যাবে। তবে কাস্টমস এনবিআরের ৪ নম্বর নির্দেশনা মানছে না। ফলে পণ্য খালাস নেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

[১১] বেনাপোল কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা জাহিদ হাসান বলেন, নতুন নিয়মে পণ্য খালাস নিতে বাধা নেই। তবে কিছু কিছু আমদানিকারক শুল্ক বৃদ্ধির কারণে পণ্য খালাস নিচ্ছেন না। তাদের দাবির বিষয়ে কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখছেন বলেও জানান তিনি। সম্পাদনা: সমর চক্রবর্তী

এমএএ/এসসি/এনএইচ