খাদেমুল বাবুল, জামালপুর: [২] জামালপুরে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্কুলশিক্ষক স্বামীর বিরুদ্ধে। নির্যাতনের শিকার ওই নারীকে গত সোমবার জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
[৩] এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে ওই নারীর বড় বোন মৌসুমী আক্তার বাদী হয়ে ৫ জনকে আসামি করে জামালপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে ওই রাতেই পুলিশ মামলার আসামি স্কুলশিক্ষক আল-আমীনের বাবা আশেক আলীকে গ্রেপ্তার করে।
[৪] অভিযুক্ত আল-আমীন জামালপুর সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের মুল্লিকপুর গ্রামের আশেক আলীর ছেলে এবং শাহবাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
[৫] নির্যাতনের শিকার নিশি আক্তার মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের নাগেরপাড়া গ্রামের সৌদী প্রবাসী আব্দুল মান্নানের মেয়ে।
[৬] মামলা সূত্রে জানা যায়, ১০ মাস আগে আল-আমীনের সাথে বিয়ে হয় নিশি আক্তারের। বিয়ের সময় নগদ ৫ লাখ টাকা, একটি মোটরসাইকেল, আসবাবপত্র ও মোবাইলসহ স্বর্ণালংকার যৌতুক দেওয়া হয়। গত তিন মাস ধরে শহরের গেইটপাড় এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকছেন তারা। কিন্তু আল-আমীন আরও ৫ লাখ টাকা দাবি করে শ্বশুর বাড়ির নিকট। টাকা না পেয়ে মারধর ও নির্যাতন শুরু করে স্ত্রীর উপর। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আল-আমীন নিশিকে মারধর করার একপর্যায়ে গায়ে পানি শরীরে ঢেলে দেয়। এতে তাঁর শরীর ঝলসে যায়। এ অবস্থায় নিশিকে চিকিৎসা না দিয়ে আলামিন স্ত্রীকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখে। অবস্থার অবনতি হলে গত সোমবার শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিশিকে রেখে পালিয়ে যায় আল-আমীন। নিশি মোবাইল ফোনে তার পরিবারকে ঘটনা জানানোর পর তারা এসে সোমবার জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
[৭] নির্যাতনের শিকার নিশি আক্তার বলেন, প্রায় সময়ই তাকে মারধর করত আল আমীন। রান্নায় লবণ কম হলে মারত তাকে। ঘটনার দিন ৫ লাখ টাকার জন্য চাপ দিলে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আমার গলা চেপে ধরে, মুখে গামছা ঢুকিয়ে মারপিট করে। পরে শরীরে গরম পানি ঢেলে দিয়ে ঘর তালা বদ্ধ করে রাখে।
[৮] নিশির মা নার্গিস আক্তার বলেন, বিয়ে দেওয়ার পর থেকে অনেক অত্যাচার করেছে। আমরা বিয়ে দিতে চাইনি জোর করে বিয়ে করে। অনেক যৌতুক দিয়েছি। ফার্নিচার, গাড়ি, গয়নাসহ সব দিয়েছি। আমার মেয়েকে গরম পানি ঢেলে পুড়িয়ে দিয়েছে। তাও আমি জানতাম না। মেয়ে ফোন দিয়েছে, ছবি দিয়েছে। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
[৯] জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান সোহান বলেন, মেয়েটির শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে। হাসপাতালে অনেক দেরিতে আসায় শরীরে আরও বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবু আমরা সাধ্যমতো চিকিৎসা দিয়েছি।
[১০] জামালপুর থানার ওসি মুহাম্মদ মহব্বত কবির বলেন, এ ঘটনায় মেয়েটির বড় বোন বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে জামালপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় সহকারী শিক্ষক আল-আমীনসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান চলছে।
[১১] ওসি আরও বলেন, মঙ্গলবার রাতে জামালপুর শহরের গেইটপাড় এলাকা থেকে আল-আমীনের বাবা আশেক আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সম্পাদনা: অনিক কর্মকার
প্রতিনিধি/একে
আপনার মতামত লিখুন :