এস এম আকাশ, ফরিদপুর: মেহেদী হত্যাকাণ্ডে জরিত মূল পরিকল্পনাকারী ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সহ-সভাপতিসহ ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার দুপুরে ফরিদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইমদাদ হুসাইন।
তিনি জানান, গত ৪ জুন রাতে বোয়ালমারীর রায়পুর এলাকায় খুন হন মেহেদী হাসান নামে এক যুবক। ঘটনার পরপরই পুলিশ তদন্ত নেমে ঘটনার সাথে জড়িত মূল আসামি বিল্লাল মৃধাকে আটক করে। তারপর একে একে এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত আরো চার আসামিকে আটক করে পুলিশ।
আরো জানান, গত ২৬ রোজার সময় আম খাওয়াকে কেন্দ্র করে নিজেদের ভিতর মারামারির ঘটনা ঘটে। এরপর থেকেই মূল পরিকল্পনাকারী বিল্লাল মেহেদী হাসানকে খুন করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা সাজাতে থাকে। পরে ৪ জুন রাতে তাকে ডেকে নিয়ে হাতুড়ি এবং দা দিয়ে বুকে ও মুখে পিটিয়ে নৃশংস ভাবে হত্যা করে। পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাতুড়ি, দা ও জিগা গাছের ডাল উদ্ধার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- জাহাঙ্গীর মৃধার ছেলে ২ নম্বর আসামি বিল্লাল মৃধা (২৩), কালামিয়ার ছেলে ৩ নম্বর আসামি সহিদ (৩৫), লিয়াকতের ছেলে ৭ নম্বর আসামি ওবায়দুর (৪৫), ওবায়দুরের ছেলে ৮ নম্বর আসামি সোহান (২০) ও আবু মিয়ার ছেলে ৯ নম্বর আসামি গফুর (৫০)। আসামিরা সকলেই বোয়ালমারী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম কামারগ্রাম মৃধাপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
বিল্লাল মৃধা উপজেলা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সহ-সভাপতি। এর আগে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে টিকটকের একটি ভিডিও বিল্লাল মৃধা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোষ্ট করলে সেটা ভাইরাল হলে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগ তাকে বহিস্কার করে।
হত্যার ঘটনার দিন গত সোমবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজমিস্ত্রী মেহেদী হাসান ও তার বন্ধু সোহাগ নামে এক যুবক ওই গ্রামের পার্শ্ববতী রায়পুর গ্রামের রশিদের বাড়িতে কাজের প্রয়োজনে যায়। সোহাগকে মেহেদী বাইরে দাড় করিয়ে রেখে রশিদের ঘরে ঢোকে। এর মধ্যে ২ নম্বর আসামি বিল্লাল মৃধা সোহাগকে ফোনে ওই এলাকা থেকে চলে যেতে বলে। মেহেদী মৃধা রশিদের বাড়ি থেকে নিজবাড়িতে ফিরে আসার পথে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা আসামিরা রায়পুর হেলাল মিয়ার মুরগি খামারের উত্তরপাশে মেহেদী মৃধাকে কুপিয়ে, পিটিয়ে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থল এলাকায় জখম অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। তাকে মারাত্মক জখম অবস্থায় স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সিরাজুল ইসলাম তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হত্যাকান্ডের তিনদিন পর মঙ্গলবার (৬ জুন) বিকেলে নিহতের বাবা মো. সালাম মৃধা বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় ৫ আসামিকে গ্রেপ্তার করে বুধবার সকালে ফরিদপুর আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার ওসি (তদন্ত) মো. শরিফুল সুমন জানান, ঘটনার দিন সাহিদের একটি বাঁশের তৈরি মাচালিতে বসে আসামিরা এ হত্যাকান্ড ঘটানোর পরিকল্পনা করে। হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ২ নম্বর আসামি বিল্লাল মৃধা ও ১ নম্বর আসামি সাহিদ বলে তিনি দাবি করেন। ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। নিহতের ঘটনায় মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
বোয়ালমারী থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, হত্যাকান্ড ঘটার সাথে সাথেই পুলিশের একটি চৌকশ টিম তদন্তে মাঠে নামে। হত্যাকান্ডে ব্যবহ্নত একটি ছ্যানদা, হাতুড়ি ও একটি লাঠি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদি হয়ে থানায় মামলা করেছেন।
ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত দুইজন বিল্লাল ও শহিদসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।
প্রতিনিধি/একে
আপনার মতামত লিখুন :