মো. আদনান হোসেন, ধামরাই (ঢাকা): ঢাকার ধামরাইয়ে কালামপুর হলি জেনারেল হাসপাতালে ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও হাসপাতালের ভেতরে নোংড়া ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অপারেশন থিয়েটারে অব্যবস্থাপনা, হাসপাতাল পরিচালনা লাইসেন্স ও দায়িত্বরত ডাক্তার না থাকার দীর্ঘদিনের অভিযোগ।
এসব অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গতকাল হাসপাতালটি বন্ধ করে দেন উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.নূর রিফফাত আরা। এদিকে ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৪ মার্চ পেটের ব্যথা নিয়ে উপজেলার বেলীশ্বর গ্রামের দিনমজুর আবদুল মজিদের স্ত্রী শিল্পী আক্তার (৪০) ভর্তি হন ধামরাইয়ের কালামপুর হলি জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে ধরা পড়ে তার অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়েছে। তাকে অপারেশন করানো বাবদ সাড়ে ১৪ হাজার টাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি হয় রোগীর স্বজনদের। নগদ পাঁচ হাজার টাকা জমাও দেন তারা। এরপর ওইদিনই অপারেশনের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডেকে আনেন ডা.সুজিত দত্তকে। তিনি রোগীর অপারেশন করেন। এরপর থেকে শিল্পীর পেট ফুলে যায়, নাক-মুখ দিয়ে খাবার বেরিয়ে আসে। অবস্থার অবনতি হতে থাকে।
পরবর্তীতে স্বজনদের পীড়াপীড়িতে ১৭ মার্চ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে রেফার্ড করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে আইসিইউতে থাকার পর ২৬ মার্চ তিনি মারা যান। এদিকে ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় রোগীর স্বজনরা ওইদিনই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে সরাসরি চলে যান হলি জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে রোগীর স্বজনরা উত্তেজিত হলে কালামপুর বাজার বনিক সমিতির সভাপতি রবিউল করিমের সমঝোতায় বৈঠক হয়। পরে ৮০ হাজার টাকায় রোগীর স্বজনদের চাপে ফেলে বিষয়টি মিমাংসা করা হয়। ওই সময় নগদ দেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা।
কালামপুর বাজার বনিক সমিতির সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, ভুল অপারেশনে মৃত্যুর ঘটনায় তার উপস্থিতিতে জরিমানার ৮০ হাজার টাকার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
নিহতের মেয়ে ময়না বেগম বলেন, ভুল অপারেশনে আমার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। আমরা গরীব মানুষ এ কারণে মামলা করিনি। জরিমানা দিয়েছে ৫০ হাজার টাকা। বাকি টাকা এখনো পাইনি।
হাসপাতালের ম্যানেজার ও মালিকপক্ষের ফিরোজ আল মামুন বলেন, শিল্পীর মৃত্যুর বিষয়টি টাকার বিনিময়ে আপোষ-মিমাংসা করা হয়েছে। তিনি বলেন, নাক,কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডা. সুজিত দত্তকে এনে শিল্পীর অপারেশন করা হয়েছিল।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডা.সুজিত দত্ত সাভারের নয়ারহাটস্থ গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক,কান, গলা ও হেড, নেক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও আবাসিক সার্জন হিসেবে কর্মরত আছেন।
এ বিষয়ে ডা. সুজিত দত্ত বলেন, গত ১৪ মার্চ হলি জেনারেল হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোনে আমাকে বলা হয়েছে ‘একজন অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগী আছে তাকে অপারেশন করতে হবে’। ওই দিনই আমি ওটিতে গিয়ে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের অপারেশন করি। কিন্তু ডায়াগনসিসে কি ছিল সেটা আমি দেখিনি। এটাই আমার ভুল হয়েছে। ওই রোগীর অন্য সমস্যাও ছিল।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.নূর রিফফাত আরা বলেন, নাক,কান ও গলা রোগের চিকিৎসক হয়ে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের অপারেশন করতে পারেন না। যদি করে থাকে তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যুসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে হাসপাতালটি বন্ধ করে দিয়েছি। সম্পাদনা: অনিক কর্মকার
প্রতিনিধি/একে
আপনার মতামত লিখুন :