মাসুদ আলম: পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ইন্দ্রকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হান ও তার সহযোগীরা মিলে একই স্কুলের দশম শ্রেণির ৩ সহপাঠীকে ছুরিকাঘাত করেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারুফ হোসেন বাপ্পী ও নাফিজ মোস্তফা আনছারি মারা যায়।
ওই ঘটনায় সোমবার নরসিংদীর রায়পুর ও রাজধানীর পল্লবীতে অভিযান চালিয়ে ২ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তাররা হলেন- হত্যা মামলার প্রধান আসামি রায়হান কাজী ওরফে রিমন (১৫) ও হাসিবুল ইসলাম ওরফে হৃদয় (১৫)।
বাউফল উপজেলার পাংগাশিয়া এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য গ্যাং তৈরি করে। রায়হান নিয়মিত ফ্রি-ফায়ার এবং পাবজি গেমসে আসক্ত ছিল। এসব গেমসে সে মারামারি দেখে এ ধরনের নৃশংস কাজে উৎসাহিত হয়েছে ।
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২২ মার্চ ক্লাসের বিরতির সময় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৈকত ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারুফের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরই মধ্যে নবম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী রায়হান এগিয়ে এসে সৈকতের পক্ষ নিয়ে মারুফ ও তার সহপাঠী নাফিজ, সিয়ামসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। কয়েকজন শিক্ষার্থী এগিয়ে নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে দুপুরে টিফিনের বিরতিতে আসামি রায়হান দশম শ্রেণির মারুফসহ কয়কেজনকে হুমকি দেয়।
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার চার দিন আগে মারুফের বন্ধু সিয়াম এবং রায়হানের মধ্যে তর্ক-বিতর্কের ঘটনা ঘটে। তাদের মধ্যে পূর্ব শত্রুতা ছিল। পরে পূর্বের ঘটনার জের ধরে রায়হান ও তার সহপাঠীরা প্রতিশোধের প্রস্তুতি নেয়। দুই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটনার দিন স্কুল ছুটির পরপর রায়হান তার দলবল নিয়ে সহপাঠীদের পিছু নিতে থাকে।
পাংগাশিয়া ব্রিজের কাছাকাছি গিয়ে মারুফ, নাফিজ, সিয়ামসহ অন্যান্যদের ব্রিজের ওপর গতিরোধ করে। মারুফ, সিয়াম, নাফিজসহ অন্যরা ব্রিজের কাছাকাছি গেলে রায়হানের নেতৃত্বে ব্রিজের ওপর আগে থেকে ওঁত পেতে থাকা সাইদুর ওরফে সৈকত, হাসিব ওরফে হৃদয়, নাঈম হোসেন, সিফাত এবং মশিউর মিলে মারুফ, নাফিজসহ অন্যান্যদেরকে মারধর শুরু করে। এরপর রায়হান ছুরি নিয়ে সিয়াম, মারুফ ও নাফিজকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। পরে মারুফ ও নাফিজ মারা যান।
মঈন আরও বলেন, ঘটনার পর রায়হান ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে প্রথমে বাড়িতে যায়। বাড়িতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি পানি দিয়ে পরিষ্কার করে। পরে বাউফলের ধুলিয়া লঞ্চঘাট হতে লঞ্চে করে ঢাকায় আসে। লঞ্চে আসার সময় ছুরিটি নদীতে ফেলে দেয়। এরপর সে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে করে নরসিংদীর রায়পুরায় পরিচিত এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করে। হাসিব ওরফে হৃদয় হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে পটুয়াখালী থেকে বাসে করে ঢাকায় এসে পল্লবীতে এক আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপন করে।
আপনার মতামত লিখুন :