রাকিবুল ইসলাম, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর): পরকীয়া সম্পর্কে সংসার ভাঙছে লক্ষ্মীপুরের ডাক্তার দম্পত্তির। অভিযোগ উঠেছে, জুনিয়র সহকর্মী ডা. উম্মে জয়নাব পিয়ালের সঙ্গে সদর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম শরীফ দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া সম্পর্ক করে আসছেন। এ ঘটনায় পিয়ালের স্বামী ডা. তামিম মুনতাসির জেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী অঞ্চল রায়পুর আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় স্ত্রী ও ডা. সাইফুলকে আসামি করা হয়।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী তামিম মুনতাসির ২০১৯ সালে উম্মে জয়নাব পিয়ালকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে দুই বছরের একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। সম্প্রতি পিয়াল সংসার, স্বামী, সন্তানের প্রতি উদাসিন ও উশৃঙ্খল আচরণ শুরু করেন। বিষয়টি পিয়ালের বাবা-মাকে জানান এবং পারিবারিকভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন ডা. উম্মে জয়নাব পিয়াল। স্বামীকে চাকুরিচ্যুত করা, সন্ত্রাসী দিয়ে মারধর, হত্যা ও মরদেহ গুম এবং মামলা করার হুমকি দেয়। এসব ঘটনায় গত বছর আদালতে জিডি করেছেন ডা. তামিম।
বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নেয়নি পিয়াল। এপর থেকেই তিনি ডা. সাইফুলের সঙ্গে একাকী সময় কাটানো ও শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। দাম্পত্য জীবনে কলহ ও পিয়াল-সাইফুলের পরকীয়া সম্পর্কের ঘটনাটি নিয়ে জেলা সিভিল সার্জন ও সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে পুনরায় বৈঠক হয়। সেখানে ডা. সাইফুলকে সতর্ক ও উম্মে জয়নাব পিয়ালকে অন্যত্র বদলি করা হয়।
এরপর ডা. পিয়াল কৌশলে স্বামীর বাসা থেকে নগদ ৫ লাখ ও ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের ৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার আত্মসাৎ করে। এছাড়া চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে ডা. তামিমকে তালাকপত্র পাঠায়। পাশাপাশি পিয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে বিষপানে আত্মহত্যা ও কন্যা সন্তানকে হত্যা করার হুমকি দেয়।
ভুক্তভোগী ডা. তামিম মুনতাসির বলেন, স্ত্রী পিয়ালকে ভুল বুঝিয়ে ও বিভিন্ন কৌশলে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে তোলেন ডা. সাইফুল। প্রয়োজন ছাড়াও তিনি ওটির কথা বলে পিয়ালকে অফিসে ডেকে নিয়ে একাকী সময় কাটাতেন। করেছেন একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কও। এসব বিষয়ে ডা. সাইফুলকে বারবার বলার পরও তিনি কর্ণপাত করেননি। উল্টো স্ত্রী পিয়াল ও তিনি বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছেন আমাকে। সদর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ডা. সাইফুল ইসলাম শরীফের পরকীয়ার আজ আমার সংসার ধ্বংস হয়েছে। আমি তাদের শাস্তি কামনা করছি।
চিকিৎসক উম্মে জয়নাব পিয়াল বলেন, উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের লক্ষ্যে চিকিৎসক শরিফের কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। বিষয়টি তামিমের সহ্য হচ্ছিল না। তাছাড়া উচ্চ শিক্ষা নিয়ে আমি অভিজ্ঞ চিকিৎসক হই সেটিও সে প্রত্যাশা করছে না। তাই তালাক দেওয়ার জন্য আবেদন করায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ঘটনা উপস্থাপন করে আদালতে অভিযোগ দায়ের করে।
সদর হাসপাতালের সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. সাইফুল ইসলাম শরীফ বলেন, উম্মে জয়নাব পিয়াল আমার প্রশিক্ষণার্থী। প্রশিক্ষণের স্বার্থে তিনি আমার সঙ্গে কাজ করতেন। অপারেশন থিয়েটারেও আমার সঙ্গে থাকতেন। তার কাজ, শিক্ষা ও দক্ষতার ভিত্তিতে তাকে সনদ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তামিম-পিয়াল দম্পতির ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে এখন আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা ঘটনা উপস্থাপনা করে আমাকে সামাজিক ও পেশাগতভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমি আইনি ব্যবস্থা নেব।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন (সিএস) আহাম্মদ কবীর বলেন, তামিমের অভিযোগ সত্য মনে হচ্ছে না। শরীফ প্রশিক্ষক হিসেবে পিয়ালকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এছাড়া তামিম-পিয়ালের পারিবারিক দ্বন্দ্ব নিয়ে জানার পরে তাদের সদর হাসপাতালের প্রশিক্ষণ থেকে প্রত্যাহার করা হয়। সম্পাদনা: অনিক কর্মকার
প্রতিনিধি/একে
আপনার মতামত লিখুন :