নিজের নামে ছাড়াও স্ত্রী ও সন্তানদের নামে গাইবান্ধা, রংপুর, খুলনা এবং ঢাকায় গড়ে তুলেছেন হাজার কোটি কোটি টাকার সম্পদ। কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়াতেও রয়েছে তার সম্পদ।
সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতা, গাইবান্ধা থেকে আওয়ামী লীগের এমপি পদে মনোনয়ন ফরম উত্তোলনকারী ডা: শাহ মো: ইয়াকুব-উল-আজাদ। নিজের নামে ছাড়াও স্ত্রী ও সন্তানদের নামে গাইবান্ধা, রংপুর, খুলনা এবং ঢাকায় গড়ে তুলেছেন হাজার কোটি কোটি টাকার সম্পদ। কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়াতেও রয়েছে তার সম্পদ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হতে বেগম খালেদা জিয়া মেডিক্যাল কলেজের নাম পরিবর্তন করার দাবিদারও তিনি। তার বিরুদ্ধে ফ্লাটের অগ্রিম টাকা নিয়ে ফ্ল্যাট না দেয়া, বিল্ডিং নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে কোটি কোটি টাকা না দেয়ারও অভিযোগ আছে।
এ দিকে অপকর্ম আড়াল করতে স্ত্রী ডা. রওশন আরাকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়াতে নানা দৌঁড়ঝাপ করছেন তিনি। চেক ডিজঅনারের দু’টি মামলার ওয়ারেন্ট থাকলেও এখনও ধরাছোয়ার বাইরে তিনি। নয়া দিগন্তের অনুসন্ধানে তার এসব কর্মকাণ্ডের তথ্য, উপাথ্য এবং কাগজপত্র পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ স্বাচীপের নেতা ডা. শাহ মো: ইয়াকুব-উল-আজাদ ১৯৫২ সালের ৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার নুনিয়াগাড়ী গ্রামের প্রফেসর পাড়ায়। পলাশবাড়ি এসএম পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি, পলাশবাড়ী ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন তিনি। ছাত্র অবস্থাতেই জড়ান ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। ১৯৬৬ থেকে ৭০ সাল পর্যন্ত গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও একই সময়ে রংপুর জেলা ছাত্রলীগের ভারপাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২-৭৩ সালে রংপুর মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি হন। এছাড়াও তিনি ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন মেম্বার এবং পরবর্তীতে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ-স্বাচীপের নেতা হন। তিনি পলাশবাড়ীর ডা: আজাদ রওশন ফাউন্ডেশন এর পরিচালক।
তিনি ২০১৪ সালের ৩ এপ্রিল পলাশবাড়ি উপজেলার নুনিয়াগাড়ি ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৮ এর জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এমপি প্রার্থী হিসেবে পলাশবাড়ি ও সাদুল্ল্যাপুর আসনে মনোয়ননপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ডাক্তার ইয়াকুব। এ সময় তিনি মনোনয়নপত্রের সাথে যে কাগজপত্র দাখিল করেছিলেন। তার সম্পুর্ণ কপি এসেছে নয়া দিগন্তের হাতে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ আমলে তিনি ক্ষমতার খুব কাছাকাছি থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হওয়ার চেষ্টা করেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের পরিচালকের দায়িত্ব পান। এ সময় তিনি হাসপাতালটির নাম পরিবর্তন করেন। নিজেকে নাম পরিবর্তনকারীর প্রবর্তক দাবি করে ডা. ইয়াকুব। বিষয়টি তিনি এমপি মনোনয়নপত্রে দাখিলকৃত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বৃত্তান্তের ১৩ নম্বর ক্রমিং এভাবে উল্লেখ করেন- ‘শহীদ সোহরওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক থাকাকালীন খালেদা জিয়া মেড্যাকেল কলেজের নাম পরিবর্তন করে শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিক্যাল কলেজের নাম প্রবর্তণ করি। এতে পরিচালক হিসেবে আমার একনিষ্ঠ ভূমিকা থাকায় সরকারের সহযোগিতা হয়েছে।’
সম্পদের পাহাড়
অনুসন্ধানে দেখা যায়, সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালের পরিচালক থাকাকালীন বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ক্রয় এবং স্বাস্থ্যখাতে চাকরি বাণিজ্য করে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন ফ্ল্যাট ও ক্লিনিক ব্যবসা। তার বিরুদ্ধে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াতে মেয়ে জামাইয়ের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডা. ইয়াকুবের রয়েছে ঢাকা মোহাম্মদপুর শ্যামলী শিয়া মসজিদের পাশে ৬৬ কাঠার উপর নির্মিত তিনটি নয়তলা বিল্ডিং (নবোদয় হাউজিং), খুলনায় ছয়তলা ভবন বিশিষ্ট স্পেশালাইজড হসপিটাল, রংপুর মহানগরীর সব থেকে দামি এলাকা ধাপে ৫৩ শতক জমির উপর এআরসিটি (নির্মানাধীন ১৭ তলা ভবন), গাজীপুরে ১ একর জমি, রংপুর, পীরগঞ্জ ও গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে প্রায় ১০০ একর জমির মালিক ডাক্তার ইয়াকুব-উল-আজাদ। এছাড়াও তার স্ত্রী, সন্তান ও নিকট আত্মীয়ের নামেও রয়েছে বিপুল সম্পদ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ডা. ইয়াকুব এর এই বিশাল সম্পদ ওপেন সিক্রেট হলেও ২০১৮ সালে তিনি যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন তাতে দেখানো হয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মূল্য মাত্র ২ কোটি ৩৯ লাখ ৪৭ হাজার ৪১২ টাকা। তাতে বলা হয়, ঢাকায় ১২ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৬ টাকা মূল্যমানের ৮ শতক স্থাপনাসহ বাড়ি, গাইবান্ধায় ৪ লাখ ১৫ হাজার ৫০ টাকা মূল্যের ১৬ দশমিক ১৭ একর জলাভূমি, ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্য মানের একটি পুকুর, ৭ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭০ টাকা মূল্যের রংপুর মহানগরীর ধাপ এলাকায় ০.১২ শতক জমি, ৫ লাখ টাকা মুল্যের স্ত্রীর নামে মোখতার নামা, ৫৭ লাখ ৫১ হাজার ৫৬০ টাকা মুল্যের ঢাকার মোহাম্মদপুরে বাড়ি, ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৯৫০ টাকা পূর্বের, ১ কোটি ৪৩ লাখ ৭৩ হাজার ৯৫০ টাকার মূল্যের অসামপ্ত পুর্বের বিনিয়োগ এবং ৬ লাখ ১২ হাজার ৫০ টাকা মূল্যের পূর্বের মতো স্থাপনা রয়েছে। এই হিসাব দেখানো হয়েছে রিটার্ন দাখিলে।
অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে দেয়া ২০১৮ সালের ইয়াকুবের স্ত্রীর অধ্যাপক ডা: রওশন আরা বেগমের নামে দাখিলকৃত আয়কর রিটার্নে সম্পদের বিবরণীতে দেখানো হয়েছে রংপুরের ধাপে ০.৩২৫ একর ও ০.৩০২৫ জমি, ঢাকার .০৬০ একর জমি, জেডিএ প্লট, ঢাকায় ২টি ফ্লাট, গাইবান্ধা পলাশবাড়িতে. ০৫০ একর জমি। যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ৯৪ লাখ পাঁচ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর নামেও এর চেয়ে আরও কয়েকগুন বেশি সম্পদের তথ্য আছে।
ব্যবসায়িক পার্টনাদের সাথে প্রতারণার মাধ্যম অর্থ আত্মসাৎ
অনুসন্ধানে দেখা গেছে ডা. ইয়াকুব তার ব্যবসায়িক পার্টনাদের সাথে প্রতারণা করেও কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ফ্লাটের জন্য অগ্রিম, নিজের বাড়ি ও শপিং কমপ্লেক্স তৈরিতে মালামাল বাকিতে ক্রয় করে অর্থ না দিয়ে উল্টো পাওনাদারদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রাণি করছেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, রংপুর মহানগরীর ধাপজেল রোডের পপুলার-১ সংলগ্ন এলাকায় রিয়েল এস্টেট ব্যবসা করার জন্য ২০২০ সালে রংপুর সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স শাখা থেকে এরআরসিটি লি: নামের একটি রিয়েল এস্টেট ব্যবসার লাইসেন্স নিয়েছেন শাহ মো: ইয়াকুব উল আজাদ। প্রতিষ্ঠানটির মালিক হিসেবে তিনি তার নিজের নাম লিখেছেন। সেখানে সিটি করপোরেশন থেকে ১৭ তলা ভবনের প্লান পাশ করে এখন ৯ তলা পর্যন্ত কাজ চলমান।
অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, নির্মাণাধীন সর্বাধুনিক এই ভবন নির্মাণের জন্য ডা. ইয়াকুবকে চুক্তির মাধ্যমে ঠিকাদার ও সাপ্লায়ার হিসেবে রংপুরের ক্যাপ্টেন গ্রুপের মালিক বেলাল হোসেন প্রথম পর্যায়ে ভাউচারমূলে ৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকার পাথর, সিমেন্ট, বালু ও রডসহ বিভিন্ন মালামাল প্রদান করেন। এর মধ্যে ডা: ইয়াকুব তাকে পরিশোধ করেন ৬ কোটি ৪১ লাখ। সেখানে ১২ লাখ বাকি রাখেন। অন্যদিকে দ্বিতীয় পর্যায়ে ভাউচারমূলে ৬৫ লাখ টাকার মালামাল প্রদান করেন বেলাল হোসেন। এছাড়াও দু’টি দোকানের পজেশনের জন্য অগ্রিম ৪২ টাকা টাকা প্রদান করেন তিনি। সে হিসেবে মোট ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা ডা. ইয়াকুবের কাছে পান বেলাল।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে ডা. ইয়াকুব মালামালের টাকা প্রদান না করে ৬৫ লাখ টাকা সোনালী ব্যাংক রংপুর বাজার শাখার (চেক নং-২৯০৮৬০৪) এর বিপরীতে একটি চেক প্রদান করেন। কিন্তু একাউন্টে টাকা না থাকায় ডিজঅনার হওয়ায় বেলাল হোসেন রংপুর আমলী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন (সিআর-/১৬১৪/২৪)। অন্যদিকে পজেশন না দিয়ে ডা. ইয়াকুব বেলাল রাইস এজেন্সির নামে রংপুর আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের (হিসাব নং-০৯৭১০২০০১০০২৩) হিসাবে একটি চেক প্রদান করেন। কিন্তু সেই হিসাবেও টাকা না থাকায় চেকটি ডিজঅনার হয় এবং একই আদালতে মামলা করেন (সিআর নং ১৬৪০/২৪) বেলাল। দু’টি মামলাতেই তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেছে আদালত। কিন্তু এখনও তিনি ধরাছোয়ার বাইরে।
অনুসন্ধানে আরো দেখা গেছে, বেলাল হোসেনের মামলায় গ্রেফতার না হলেও উল্টো আওয়ামী লীগ আমলে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ডাক্তার ইয়াকুব উল আজাদ খুলনা আমলী আদালতে ক্যাপ্টেন গ্রুপের মালিক বেলাল হোসেন, আলী হোসেন, আব্দুল হালিম ও খায়রুল ইসলামের নামে মামলা দায়ের করে (সিআর-১০৩৮/২৪) হয়রানি করছেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ডা. ইয়াকুব এরআরসিটিতে ফ্লাট বিক্রি বাবদ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে থেকে অগ্রিম টাকা গ্রহণ করেন। এর মধ্যে নগরীর হুনমানতলার ইট ব্যাবসায়ী আব্দুস সোবহানের কাছ থেকে ১৫ লাখ, রাধাবল্লভের ইসলামী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মালেকের কাছ থেকে ৫৫ লাখ, সিংগারের কর্মকর্তা শালবন মিস্ত্রীপাড়ার রঞ্জু মিয়ার কাছে থেকে ৮ লাখ, কেরানিপাড়ার ব্যবসায়ী মোস্তফা সরওয়ার্দির কাছ থেকে ১০ হাজার স্কয়ার ফিটের জন্য ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ক্লিনিক ব্যবসায়ী হারাগাছের আলমগীর কবিরের কাছ থেকে ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। পরে ফ্ল্যাট না দিয়ে অনেককেই টাকার বিপরীতে চেক প্রদান করেন। কিন্তু হিসাব নম্বরে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তারা টাকা তুলতে পারছেন না। অনেকেই মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জানা গেছে, এরআরসিটিতে মালামাল সরবরাহকারী হিলি স্থলবন্দরের জাকির হোসেনের ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। এর বিপরীতে ডা. ইয়াকুব মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের রংপুর মহানগরীর লালবাগ (হিসাব- নং০৩৩০৩২০০০০২৪৫) শাখার একটি চেক দিয়েছেন জাকির হেসেনকে। সেই ব্যাংকেও টাকা নেই। চেকটি ডিজঅনার করেছেন তিনি। নিচ্ছেন মামলার প্রস্তুতি।
অন্যদিকে নগরীর কামারপাড়ার রায়হানা ট্রেডার্সের মালিক আব্দুর রাজ্জাক ১২ কোটি টাকার মালামাল দেন ডা. ইয়াকুবকে। কিন্তু টাকা না দেয়ায় তিনি কৌশলে ইয়াকুব আলীর কাছ থেকে ১০ হাজার স্কযারফিট ফ্ল্যাট লিখে নেন।
স্ত্রীকে বিএনপির রাজনীতিতে ফেরাতে দৌঁড়ঝাপ
অনুসন্ধানে জানা গেছে ৫ আগস্টেও পর ডা. ইয়াকুব তার স্ত্রী ডা. রওশন আরাকে বিএনপি রাজনীতির সাথে মেলাতে নানাভাবে চেষ্টা করছেন। খুলনা, রংপুর, নীলফামারী এবং গাইবান্ধা ও ঢাকার বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন তিনি। ডা. ইয়াকুবের ঘনিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে একাাধিক নেতার সাথে সরাসরি বৈঠকও হয়েছে। বিএনপিতে স্ত্রীকে ভিড়িয়ে দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের হাত থেকে বাঁচতে নানা তদবিরও করছেন বলে তার ঘনিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে। সেক্ষেত্রে তিনি মোটা অংকের টাকা লগ্নি করারও চেষ্টা করছেন।
ভুক্তভোগিদের বক্তব্য
জানতে চাইলে ক্যাপ্টেন গ্রুপের মালিক বেলাল হোসেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে ডা. ইয়াকুব দেশে বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এখনও তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটাচ্ছেন। আমি তার সাথে ব্যবসা করে প্রতারণার শিকার। উল্টো আমার নামে তিনি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। আমি চেক ডিজঅনার করে ১ কোটি ৭ লাখ টাকার দু’টি মামলা করেছি। দু’টি মামলাতেই ওয়ারেন্ট হয়েছে। কিন্তু ৫ আগসেটর পরেও তিনি প্রকাশ্যে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগের দাপট দেখাচ্ছেন। গ্রেফতার হচ্ছেন না। তারি বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের অ্যাকশন দাবি করেছেন বেলাল হোসেন। এছাড়াও তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অর্থ লগ্নি ছাড়াও বিভিন্ন পরিকল্পনার সাথেও জড়িত।
হিলি স্থল বন্দরের পাথর ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, ‘ডা. ইয়াকুবের এরআরসিটিতে আমি চুক্তিব্ধ হয়ে পাথর সরবরাহ করেছি। কিন্তু তিনি আমাকে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিচ্ছেন না। একটি চেক দিয়েছেন। সেটিও ডিজঅনার হয়েছে। আমি মামলা করবো। তিনি অনেক বড় ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছেন আমাকে। ’
কি বলছেন ডা: ইয়াকুব
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা: ইয়াকুব উল আজাদ মোবাইল ফোনে জানান, আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পেশাজীবি পরিষদে নেতৃত্ব দিয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ছিলাম। এমপি পদের জন্য মনোনয়ন ফরমও তুলেছিলাম। কিন্তু কোনো অন্যায়, দুর্ণীতি করিনি। বরং বিএনপির সময়ে আমার ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। আমার মেয়ের চাকরি দেয়া হয় নাই।
খালেদা জিয়া মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নাম পরিবর্তনের বিষয়ে পরিচালক হিসেবে আমার যে ভূমিকা রাখা দরকার ছিল সেটা করেছি।’
কোটি কোটি টাকার সম্পদ এবং বিদেশে অর্থ পাচারের ব্যপারে তিনি বলেন, আমি ব্যবসা অর্থ সম্পদ করেছি।
সব কিছুর রিটার্ন আমি দাখিল করেছি। আমি কোনো দুর্নীতির সাথে জড়িত নই। যারা আমার বিরুদ্ধে টাকা পাওয়ার অভিয়োগ করছেন সেগুলো সত্য নয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
পুলিশের ভাষ্য
এ ব্যপারে রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মজীদ আলী বলেন, তার বিরুদ্ধে আদালত কর্তৃক জারি হওয়া দু’টি গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে কিনা, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। এরপরই তাকে গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করা হবে।নয়া দিগন্ত