রাজধানীর কল্যাণপুরে জাহাজ বিল্ডিং নামের একটি বাসায় ২০১৬ সালে ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানের নামে নাটক সাজিয়ে নয়জন ইসলামী মনোভাপান্ন যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকসহ সাবেক তিনজন পুলিশ কর্মকর্তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
রাজধানীর কল্যাণপুরে জাহাজ বিল্ডিং নামের একটি বাসায় ২০১৬ সালে ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানের নামে নাটক সাজিয়ে নয়জন ইসলামী মনোভাপান্ন যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকসহ সাবেক তিনজন পুলিশ কর্মকর্তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
অন্য দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার মো: আছাদুজ্জামান মিয়া এবং ডিএমপির মিরপুর বিভাগের সাবেক উপকমিশনার (ডিসি) মো: জসীম উদ্দীন মোল্লা।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তাদের গ্রেফতার দেখানোর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন। একই সাথে আগামী ২৪ মার্চ তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে বলা হয়েছে। এছাড়া আগামী ৭ মে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে কল্যাণপুরে জাহাজ বিল্ডিং নামে একটি ভবনে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেআইনিভাবে গ্রেফতার করা বেশ কয়েকজন ইসলামী মনোভাপান্ন যুবককে ওই বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে আটক রাখা হয়। তারেকে জঙ্গি নামে নাটক সাজিয়ে তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য এবং তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ নির্দেশে এই নয়জন ইসলামী মনোভাবাপন্ন যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই মামলায় সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকসহ সাবেক তিনজন পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার দেখাতে আবেদন করেছিলাম। ট্রাইব্যুনাল আমাদের আবেদন মঞ্জুর করেছেন। আগামী ২৪ মার্চ এই তিন আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে বলেছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই তিনজন আসামি বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আটক আছেন। তাদেরকে ট্রাইব্যুনালের এই মামলায় নির্ধারিত তারিখে হাজির করতে বলা হয়েছে। ইসলামী মনোভাপান্ন যুবকদেরকে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে হত্যা করাকে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততা পেয়েছে। এই জন্য ট্রাইব্যুনালে তাদের বিরুদ্ধে ট্রাব্যুনালে আবেদন করা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ট্রাইব্যুনালে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে হত্যা করার অভিযোগে এটাই প্রথম মামলা।
তিনি বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের প্রশ্নের জবাবে আমরা বলেছি মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দুটি উপাদান লাগে। একটি হলো- সিস্টেমেটিকালী এই ঘটনা ঘটতে হয়। আরেকটি হল ওয়াইডস্প্রেডলি। এই দুটি উপদান এই ঘটনাকে কাভার করে। কারণ একটি একটি সিস্টেম ক্রাইম। এটি হল ধর্মীয় কারণে এই যুবক ব্যক্তিদের ওপর নিপিড়ন চালানো হয় এবং তাদের হুলি করে হত্যা করা হয়। তাদের অপরাধ ছিল তারা তৎকালীন সরকার বিরোধী মনোভাবাপন্ন ছিলেন। তারা ইসলামিক আইডিওলজি অনুসরণ করত। এজন্য তাদেরকে বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেফতার করে এনে একটি জায়ড়ায় আটক রেখে সবাইকে জানানো হতো তারা জঙ্গি। আসলে তারা কেউই জঙ্গি ছিল না।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে সালের ২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ৫ নম্বর সড়কের জাহাজ বিল্ডিং নামের একটি বাসায় ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিলের অভিযানে নয়জন ‘জঙ্গি’ নিহত হয়েছে বলা হয়।
ওইদিন অভিযান শেষে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হক বলেছিলেন, নিহত ব্যক্তিরা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য। ওই বাড়ি থেকে গুলশানের মতো বড় হামলার পরিকল্পনার তথ্য পুলিশের কাছে আগে থেকেই ছিল।