শিরোনাম
◈ আয়না ঘর দেখতে গেলেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ যুক্তরাষ্ট্রে অনাগত সন্তানদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হাজারো ভারতীয় অভিবাসীরা ◈ গরুর লাম্পি স্কিন টিকা আবিষ্কার হলো দেশেই, খরচ ৭০ টাকা ◈ নির্বাচনে যে আসন থেকে লড়তে পারেন হাসনাত-সারজিসসহ অন্যরা ◈ দুবাইয়ে থাকা সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছেন বাংলাদেশীরা! ◈ এবার মেটা থেকে ৪ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা ◈ আজ থেকে যমুনা বহুমুখী সেতুতে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ট্রেন চলাচল ◈ পাঠ্যপুস্তকের মানচিত্রে অরুণাচল ও আকসাই চিন ভারতের অংশ, বাংলাদেশকে আপত্তি জানাল চীন ◈ খালেদা জিয়ার শারিরীক অবস্থা স্থিতিশীল, মানসিকভাবে শক্ত আছেন ◈  উসমান দেম্বেলের জোড়া গোল, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পিএসজির জয়

প্রকাশিত : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১০:০৮ দুপুর
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০১:৪৭ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মৃতদেহ ধর্ষণ: বাংলাদেশে সুনির্দিষ্ট আইন কেন নেই

বিডিনিউজ২৪ প্রতিবেদন: ছয় বছর আগে অস্বাভাবিক এক যৌন অপরাধের ঘটনা আলোড়ন তুলেছিল দেশে। মৃতদেহের সঙ্গে যৌন সংসর্গের অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গের ডোমের সহযোগী মুন্না ভক্ত।

কয়েক বছর বাদে একই ধরনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অস্থায়ী নিরাপত্তাকর্মী সেলিম।

প্রথম ঘটনায় দায়ের করা মামলায় একটি ধারায় মুন্নার সাজা হলেও আরেক ধারায় তাকে খালাস দেওয়া হয়। আর চট্টগ্রামে সেলিমের মামলাটি এখনো ঝুলে আছে সাক্ষীরা আদালতে হাজির না হওয়ায়।

এ ধরনের যৌনচারকে বলা হয় ‘নেক্রোফিলিয়া’। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মৃতদেহ ধর্ষণ একটি গুরুতর মানসিক ব্যাধি, যা মূলত ব্যক্তির মানসিক বিকাশের সমস্যা, যৌন আকাঙ্ক্ষার অস্বাভাবিক প্রকাশ এবং নিয়ন্ত্রণহীন মানসিক অবস্থার ফল।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটি এক ধরনের নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থা, যেখানে অপরাধী মৃতদেহের উপর সম্পূর্ণ ক্ষমতা বা নিয়ন্ত্রণ খুঁজে পায়। অনেক ক্ষেত্রে এটি ট্রমা, ব্যক্তিত্বজনিত ব্যাধি থেকেও হতে পারে।

“এটি পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার। শৈশবে যৌন বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়া, জীবিত ব্যক্তির সঙ্গে সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তুলতে অক্ষমতা থেকেও হতে পারে। যেমন মৃতদেহ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না, যা অপরাধীকে একতরফাভাবে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয়।”

যেহেতু মানসিক ‘ডিজঅর্ডার’ এর কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়, তাই এ বিষয়টিকে মাথায় রেখেই বিদ্যামান আইনের ধারায় ‘মৃতদেহ ধর্ষণ’ বিষয়টি যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন আইনজ্ঞরা।

এছাড়া কারাগার, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রাখার ওপর জোর দিয়েছেন তারা।

মুন্নার সাজা

২০১৯ সালের ২৯ মার্চ থেকে ২৩ অগাস্ট পর্যন্ত সময়ে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ থেকে পাঠানো পাঁচটি আত্মহত্যাজনিত মৃতদেহের হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াব পরীক্ষায় পুরুষের বীর্যের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এসব বীর্যের ডিএনএ প্রোফাইল তৈরির পর প্রতিটি ক্ষেত্রে একজন পুরুষের বীর্যের উপস্থিতি প্রমাণ মেলে।

আত্মহত্যাকারী প্রত্যেকেই ছিলেন ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোরী। লাশগুলোর সুরতহাল প্রতিবেদনে কোনো আঘাতের চিহ্ন, ধর্ষণের আলামত ছিল না।

তদন্তে নেমে সিআইডি জানতে পারে, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহগুলো মর্গে আসার পর সেগুলোর সঙ্গে শারীরিক সংসর্গ করেন হাসপাতাল মর্গের ডোমের সহযোগী মুন্না ভক্ত।

মুন্নাকে ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন শেরেবাংলা নগর থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়। এছাড়া ২০২১ সালের মার্চে, এপ্রিলে, অক্টোবরে ও ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরও চারটি মামলা করা হয়। সবগুলো মামলার বাদী পুলিশ।

প্রতিটি মামলায় মুন্নার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২৯৭ ও ৩৭৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকার মহনগর হাকিম আদালতে ধর্ষণের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয় সে।

এসব মামলার বিচার শুরু করে ২০২৩ সালের ২১ জুন বিভিন্ন মুন্নাকে সাজা দেন তৎকালীর ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেনের আদালত।

আদালতের রায়ে বলা হয়, সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধের অভিযোগ দোষ স্বীকারের ভিত্তিতে প্রমাণ হয়েছে। এ ধারায় তাকে ১ বছর ৭ মাস সাশ্রম কারাদণ্ড দেন বিচারক।

আর অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় দণ্ডবিধির ২৯৭ ধারায় তাকে খালাস দেওয়া হয়।

তবে মুন্না ভক্তের আইনজীবী আল আমিন এ নিয়ে এখন আর কথা বলতে চান না।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এ বিষয়ে এখন আর কথা বলতে চাই না। এটা সেনসিটিভ ইস্যু। তবে চাইলে আদালতে দেওয়া আমার সাবমিশন তুলে ধরতে পারেন।”

আদালতে দেওয়া সাবমিশনে এ আইনজীবী বলেছিলেন, মুন্নার বিরুদ্ধে অবৈধ যৌন সঙ্গমের দায়ে ৩৭৭ ধারায় যে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল তা সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত। দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় অপরাধের বিষয়বস্তুতে নারী-পুরুষ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু উক্ত আইনের ১০ ধারায় নারী-পুরুষ বলতে 'যে কোন বয়সী' শব্দ দ্বারা জীবিত নারী-পুরুষকে নির্দেশ করে। ৩৭৭ ধারায় মৃতদেহ শব্দটি কোথাও ব্যবহৃত হয়নি। তাই মৃতদেহ যৌন সঙ্গমের বিষয়বস্তু হতে পারে না।

২৯৭ নম্বর ধারা: কোন ব্যক্তির ধর্মানুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্যে ধর্মীয় কোন স্থানে অনধিকার প্রবেশ করা, মৃতদেহের অসম্মান অথবা শেষকৃত্যানুষ্ঠানে সমস্যা তৈরি করা হলে সেটাও ধর্মীয় অবমাননা বলে গণ্য হবে। এরকম অপরাধের ক্ষেত্রে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

৩৭৭ নম্বর ধারা: কেউ যদি স্বেচ্ছায় কোনো পুরুষ, নারী বা পশুর সঙ্গে প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে যৌনসঙ্গম করে, তবে তাকে যাবজীবন কারাদণ্ড, অথবা দশ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড দেওয়া যাবে।

এ ধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, অপরাধ প্রমাণে যৌনসঙ্গমের প্রয়োজনীয় প্রমাণ হিসেবে পেনিট্রেশেন বা ‘প্রবেশ করানোর’ প্রমাণই যথেষ্ট হবে।

আইনজীবী আল আমিন বলেছেন, মৃতদেহ শব্দটি দণ্ডবিধির ৪৯৯, ৪৬৪, ৩১৮ ও ২০১ ধারায় পাওয়া যায়। অন্যদিকে দণ্ডবিধির ৭ ধারায় একবার ব্যবহৃত শব্দ সর্বদা একইভাবে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।

দণ্ডবিধির ৪৫ ও ৪৬ ধারায় জীবন ও মৃত্যু বলতে মানুষের জীবন ও মৃত্যুকে বোঝানো হয়। 'মৃতদেহ' শব্দটি দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় ব্যবহৃত হয়নি, সুতরাং আসামির বিরুদ্ধে ৩৭৭ ধারার অভিযোগ ‘আইনসম্মত নয়’ বলে এ আইনজীবী যুক্তি দিয়েছিলেন আদালতে।

যেহেতু দেহ সংক্রান্ত সকল অপরাধ দণ্ডবিধির ১৬তম অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে, সেখানে মৃতদেহকে খুন, অবৈধ বাধা বা আটক, আঘাত কোনোটিই করা যায় না। সেহেতু অবৈধ যৌন সঙ্গমও সম্ভব নয় বলে তার ভাষ্য।

একই ঘটনা চট্টগ্রামে

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য নেওয়া নারীদের মরদেহের সাথে যৌনসঙ্গমের অভিযোগে ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অস্থায়ী ভিত্তিতে হাসপাতালের মর্গে পাহারাদার হিসেবে কাজ করা মো. সেলিমকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এ ঘটনায় সেলিমের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

তদন্ত নেমে সিআইডি জানতে পারে, সেলিম মর্গে দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করতেন। কোনো অল্প বয়সী নারীর লাশ মর্গে আনা হলে পরের দিন কিংবা কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করে লাশগুলোর সঙ্গে যৌনাচার করতেন।

পাঁচলাইশ থানার ওসি (তদন্ত) সাজ্জাদ হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ মামলাটি এখন আর তদন্তাধীন নেই। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। মামলাটি এখন সম্ভবত বিচারাধীন।”

আদালতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালতে বিচারাধীন। সেলিমকে অভিযুক্ত করে দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় দেওয়া অভিযোগপত্রটি ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর গ্রহণ করে বিচার শুরু করে আদালত।

মামলায় মোট ১৪ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সাক্ষী এ মামলায় সাক্ষ্য দেননি। আগামী ২৯ জানুয়ারি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ আছে।

চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের নাজির মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আসামি মো. সেলিম হাজতে আছেন। তিনি গ্রেপ্তারের পর দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন।”

প্রচলিত আইনে অস্পষ্টতা

বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ধর্ষণ একটি গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ। তবে, এই আইন জীবিত ব্যক্তিদের সুরক্ষা দিতে তৈরি হয়েছে।

দণ্ডবিধির ৩৭৫ ও ৩৭৬ ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের শাস্তি নির্ধারিত হলেও, মৃতদেহ ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন বা ‘নেক্রোফিলিয়া’ (মৃতদেহের সঙ্গে যৌনাচার) নিয়ে সরাসরি কোনো শাস্তির কথা সেখানে নেই। দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় ‘প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে’ কোনো পুরুষ, নারী বা পশুর সাথে যৌন সঙ্গম করলে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু মৃতদেহ ধর্ষণের শাস্তির কথা কোথাও বলা হয়নি।

বিভিন্ন দেশের আইনে আছে শাস্তির বিধান

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মৃতদেহের প্রতি যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে।

ভারত ২০১৩ সালে নির্ভয়া ধর্ষণ মামলার পর ধর্ষণ সংক্রান্ত আইন সংস্কার করে। ভারতীয় দণ্ডবিধিতে ধারা ৩৭৫ অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যার আওতায় মৃতদেহের প্রতি যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণ একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে মৃতদেহ ধর্ষণ বা মৃতদেহের প্রতি যৌন সহিংসতা আইনত একটি গুরুতর অপরাধ এবং ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ ইয়র্কসহ অধিকাংশ রাজ্যে এটি দণ্ডনীয় অপরাধ।

ক্যালিফোর্নিয়া পেনাল কোড ৭০৫২ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি মৃতদেহের সঙ্গে যৌন সংসর্গ করে বা কোনোভাবে মৃতদেহের সম্মানহানি করে, তবে এটি অপরাধ হিসেবে গণ্য। মৃতদেহের কোনো অংশ বা অঙ্গ অপব্যবহার করাও অপরাধ। এজন্য সর্বোচ্চ ৮ বছর কারাদণ্ড, পাশাপাশি অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

নিউ ইয়র্কের পেনাল আইন ১৩০.২০ অনুযায়ী, মৃতদেহের প্রতি যৌন সহিংসতা, অসম্মান বা পবিত্রতা নষ্ট করা- এই ধরনের অপরাধকে ‘ক্লাস ই ফেলোনি’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৪ বছরের কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড এবং অন্যান্য শর্তাধীন শাস্তির বিধান রয়েছে।

ফ্লোরিডায় মৃতদেহের অসম্মান, পবিত্রতা নষ্ট করা, বা যৌন কার্যকলাপ করা দণ্ডনীয়। এটি দ্বিতীয় ডিগ্রির অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত। এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড, ১০ হাজার ডলার জরিমানার বিধান রয়েছে।

যুক্তরাজ্যে মৃতদেহ ধর্ষণ বা মৃতদেহের প্রতি যৌন সহিংসতা ‘যৌন অপরাধ আইন ২০০৩’ এর অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেকশন ৭০ অনুযায়ী এই অপরাধের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তির সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।

কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষত যদি অপরাধটি গুরুতর হয়, তাহলে শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। এটি মৃতদেহের সম্মান রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন। এছাড়াও দোষী ব্যক্তি যৌন অপরাধীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলে, সমাজে চলাফেরা ও কাজ করার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে।

মৃতদেহ ধর্ষণ বা নেক্রোফিলিয়া বিষয়টি জার্মান ক্রিমিনাল কোড ১৬৮ এবং জার্মান ক্রিমিনাল কোড ১৭৪ ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এতে ১ থেকে ৩ বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

‘মৃতদেহ ধর্ষণ’ দণ্ডবিধিতে সংযোজন প্রয়োজন’

বর্তমান আইনে মৃতদেহ অবমাননা করার জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে, তবে ধর্ষণের মত অপরাধের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট ধারার ব্যবস্থা নেই। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না মনে করেন, সেজন্য পেনাল কোডে মৃতদেহ শব্দটি সংযোজন করলেই সমাধান হতে পারে, যাতে মৃতদেহ ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন অপরাধ হিসেবে সুনির্দিষ্টভাবে আইনে উল্লেখিত হয়।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই ধরনের অপরাধ অস্বাভাবিক কার্যক্রমের মধ্যে পড়ে বলেই আমি মনে করি। তবে যেহেতু ডেড বডির কথা উল্লেখ নেই, সেহেতু ৩৭৬ অথবা ৩৭৭ ধারায় ‘মৃতদেহ’ শব্দটি সংযোজন করে একটি শাস্তির বিধান করলেই এসব ঘটনার ক্ষেত্রে বিচারে আর বাধা থাকবে না।”

আইন ও শালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক পান্না বলেন, “এটা তো মানসিক সমস্যা, নরমাল মানুষ হলে তো ডেডবডি দেখলে এমনিতেই দৌড় দেওয়ার কথা। পাশাপাশি এসবের ক্ষেত্রে মানসিক চিকিৎসার দিকেও নজর দিতে হবে।

“হাসপাতালগুলোতে একাধিক ফিজিশিয়ান থাকে কিন্তু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নেই, যেটা আমাদের দেশে খুব বেশি দরকার। জেলেও দরকার, বাইরেও দরকার। প্রত্যেকটা স্কুল-কলেজে দরকার। সমাজে কিশোর অপরাধ বেড়ে চলেছে, এটাও তো একটা মানসিক সমস্যা। স্কুল কলেজে যদি মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা ক্লাস নেন, তাহলে আমার ধারণা এসব কমে যাবে।”

শুধু শাস্তি দিয়েই অপরাধ কমানো যাবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফউজিয়া মুসলিমও।

তিনি বলেন, “মৃতদেহ ধর্ষণের বিষয়ে আমরা নারী পক্ষের অংশীজনদের সাথে মিটিং করেছি। সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কীভাবে এটাকে শাস্তির আওতায় আনা যায়। আমরা তো ধর্ষণ আইন নিয়ে কাজ করছি। পুরো ধর্ষণ আইনটাই সংশোধনের চেষ্টা করছি।

“শুধু শাস্তি দিয়ে তো অপরাধ কমানো যাবে না। সমাজের মধ্যে কেন এমন মানসিক বিকৃতি ঘটছে তা মাথায় নিয়ে আইন সংশোধন করতে হবে। আমাদের ধর্ষণ আইন সংশোধনের কাজ চলছে কীভাবে আইনটাকে সংশোধন করা যায় এবং এই বিষয়টা যুক্ত করা যায়।”

সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এম এ মতিন মনে করেন ‘মৃতদেহ ধর্ষণের’ বিচার ৩৭৭ ধারাতেই করা সম্ভব।

“যদি এতে কভার না করে তাহলে একটা উপায় আছে, সেটা হলো অ্যাপিলেট ডিভিশন যদি একটা রায় দিয়ে দেয় এই বিষয়ে, তাহলে এটা কভার করবে। আর সুপ্রিম কোর্টের কোনো ইন্টারপ্রিটেশনে যদি এই বিষয়টা না থাকে, তাহলে এর জন্য আইন করতে হবে বা আইনে তা সংযোজন করতে হবে।”

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়