শিরোনাম
◈ খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার বিষয়ে যা বললেন চিকিৎসক জাহিদ ◈ ব্যবসা করা একটা সংগ্রাম, এ সংগ্রামটা আমরা সহজ করব: ড. ইউনূস ◈ ‌আ.লীগ রাতে কালনাগিনী, দিনের বেলায় ওঝা: মামুনুল হক ◈ ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস, বন্যার শঙ্কা ৮ জেলায় ◈ বরগুনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ককে পেটালো অন্য পক্ষ ◈ সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর মোবাইল ফোন চুরি ◈ বোন পরিচয়ে আল জাজিরায় কথা বলা সেই তরুণী কে, জানালেন উপদেষ্টা নাহিদ ◈ শিক্ষার্থী তাইম হত্যা: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ বিচার দাবিতে  ◈ গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে সেই সভা স্থগিত ◈ ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছাড়া আমাদের গত্যন্তর নাই, তাদেরও গত্যন্তর নাই: ডয়চে ভেলেকে ড. ইউনূস

প্রকাশিত : ১৯ আগস্ট, ২০২৪, ১২:৪৩ দুপুর
আপডেট : ২০ আগস্ট, ২০২৪, ০২:৫৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা লোপাট !

অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের উপপরিচালক নুরুল হুদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি  নিশ্চিত করেন সংস্থাটির উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামাল ও তার মেয়ে নাফিসা কামাল এবং তিনজন সাবেক সংসদ সদস্যের (এমপি) নেতৃত্বাধীন চক্র মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সূত্র : জাগোনিউজ

কাশমেরী কামাল ও নাফিসা কামাল ছাড়াও এই চক্রের নেতৃত্বে থাকা অন্য সদস্যরা হলেন ফেনী-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, ফেনী-৩ আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও ঢাকা-২০ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি বেনজীর আহমেদ।

জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সরকার নির্ধারিত ব্যয় ৭৯ হাজার টাকা। তবে শ্রমিকরা খরচ করেছেন পাঁচ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে জনপ্রতি চক্র ফি নেওয়া হয়েছে দেড় লাখ টাকা করে। মাত্র দেড় বছরে প্রায় সাড়ে চার লাখ শ্রমিক মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়। সাবেক ওই এমপিদের নেতৃত্বে দেড় বছরেই চক্রটি প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করে। এর মধ্যে কেবল চক্র ফি বাবদ নিয়েছে প্রায় ছয় হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।

দুদক সূত্রের দাবি, সাবেক এমপিদের মালিকানাধীন রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর তথ্যসহ প্রয়োজনীয় সব তথ্য সংগ্রহে শিগগির বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া হবে। অনুসন্ধান টিম অভিযোগসংশ্লিষ্ট অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি সাবেক এমপি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে খোঁজ নেবে। নির্ধারিত সময়ে অনুসন্ধান শেষে টিম কমিশনে প্রতিবেদন দেবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, চক্রটি চাকরির মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এই অনিয়মে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত থাকতে পারে। শ্রমিকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠলেও ব্যবস্থা নেয়নি মন্ত্রণালয়। বরং সিন্ডিকেট করার রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে।

অনিয়মের হোতারা ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ
বিভিন্ন অনিয়ম ও সিন্ডিকেটের কারণে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেওয়া বন্ধ করেছিল মালয়েশিয়া। ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর ফের বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রমিক নেওয়ার চুক্তি করে দেশটি। তখন শ্রমিক ভিসায় দেশটিতে যেতে সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার ৫৪০ টাকা ফি নির্ধারণ করে সরকার। ২০২২ সালে এক অফিস আদেশে এ খরচ নির্ধারণ করেছিল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশের সঙ্গে মালয়েশিয়া সরকারের চুক্তির আওতায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১০টি নির্ধারিত রিক্রুটিং এজেন্সি দেশটিতে শ্রমিক পাঠাত। তবে পরবর্তীকালে ২০২১ সালে নতুন একটি সমঝোতা স্মারকে সই করে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া। ওই সমঝোতায় রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা বাড়িয়ে ১০০টি করা হয়। ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেট ভেঙে ১০০ এজেন্সিকে দায়িত্ব দেওয়া হলে সেখানেও তৈরি হয় নতুন সিন্ডিকেট। তাদের মধ্যে ২০-২৫টি এজেন্সির একটি সিন্ডিকেটই নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে মালয়েশিয়ার কর্মী পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়াটি।

সিন্ডিকেট করে সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল ও তার পরিবার এবং সাবেক ওই তিন এমপি ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরসহ আওয়ামীপন্থি ব্যক্তিদের মালিকানাধীন নতুন অনেক প্রতিষ্ঠান বিপুলসংখ্যক কর্মী পাঠিয়েছে।

মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর দুর্নীতি নিয়ে চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি ‘মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি শ্রমিকের রক্ত চুষছে এজেন্সি, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাগো নিউজ। সেখানে উঠে আসে এই অনিয়মের খবর।

দুদকের উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশ কর্মী পাঠায়। তবে বাংলাদেশ ছাড়া কোনো দেশে এমন চক্র-ব্যবস্থা নেই। চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও জড়িত। চক্রে থাকা এজেন্সিগুলো বসে বসে প্রতি কর্মীর বিপরীতে অন্তত দেড় লাখ টাকা ‘চক্র ফি’ পাচ্ছে।

জানা গেছে, এজেন্সির মধ্যে অন্যতম হলো স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড লাইসেন্স, ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল, অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ, আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল, ঐশী ইন্টারন্যাশনাল, নিউ এজ ইন্টারন্যাশনাল, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, বিএনএস ওভারসিজ লিমিটেড, পিআর ওভারসিজ, সাদিয়া ইন্টারন্যাশনাল, ইম্পেরিয়াল ওভারসিজ, বিএম ট্রাভেলস লিমিটেড এবং অপূর্ব রিক্রুটিং এজেন্সি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী বিদেশে কর্মী পাঠাতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নেন। তার মালিকানাধীন স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড লাইসেন্স নেওয়ার সাড়ে তিন বছরে ১০০ কর্মী বিদেশ পাঠায়। অথচ এই সিন্ডিকেটে যোগ দেওয়ার পর গত দেড় বছরে দেশটিতে প্রায় আট হাজার কর্মী পাঠায় প্রতিষ্ঠানটি।

আরেক সাবেক এমপি মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ২০১৫ সালে ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সি খুলেন। মালয়েশিয়ায় এককভাবে শ্রমিক পাঠানোর শীর্ষে রয়েছে তার ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি মধ্যপ্রাচ্যে আড়াই হাজারের মতো কর্মী পাঠিয়েছে। তবে মালয়েশিয়া চক্রে ঢুকে এই এজেন্সি একাই ছাড়পত্র নিয়েছে ৮ হাজার ৫৯২ কর্মীর।

এদিকে সাবেক এমপি বেনজীর আহমেদের প্রতিষ্ঠান আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর দিক দিয়ে পঞ্চম অবস্থান রয়েছে। মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার খোলার আগে তাদের তেমন কোনো কার্যক্রম ছিল না। বিদেশে পাঠিয়েছিল মাত্র ২৩৮ কর্মী। তবে মালয়েশিয়া চক্রে ঢুকে তারা শীর্ষ তালিকায় চলে যায়। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় গেছেন সাত হাজার ৮৪৯ কর্মী। চক্র গঠনের সময় বেনজীর ছিলেন রিক্রটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার সভাপতি।

আর সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামালের অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ ও মেয়ে নাফিসা কামালের অরবিটালস ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় গেছেন মোট ৯ হাজার ৮৬১ জন। চক্র গঠনের সময় আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে অভিযুক্ত সবাই আত্মগোপনে থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়