শিরোনাম
◈ ব্যবসা করা একটা সংগ্রাম, এ সংগ্রামটা আমরা সহজ করব: ড. ইউনূস ◈ ‌আ.লীগ রাতে কালনাগিনী, দিনের বেলায় ওঝা: মামুনুল হক ◈ ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস, বন্যার শঙ্কা ৮ জেলায় ◈ বরগুনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ককে পেটালো অন্য পক্ষ ◈ সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর মোবাইল ফোন চুরি ◈ বোন পরিচয়ে আল জাজিরায় কথা বলা সেই তরুণী কে, জানালেন উপদেষ্টা নাহিদ ◈ শিক্ষার্থী তাইম হত্যা: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ বিচার দাবিতে  ◈ গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে সেই সভা স্থগিত ◈ ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছাড়া আমাদের গত্যন্তর নাই, তাদেরও গত্যন্তর নাই: ডয়চে ভেলেকে ড. ইউনূস ◈ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মজিবুর বরখাস্ত ও সাইফুল বাধ্যতামূলক অবসরে

প্রকাশিত : ১৯ আগস্ট, ২০২৪, ১২:৩৮ রাত
আপডেট : ১৯ আগস্ট, ২০২৪, ০৩:৫০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সকালে ধরে নিয়ে দুপুরে মালিকানা বদল, একদিনে এস আলমের এসআইবিএল দখল !

সাত বছর আগে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর সকালে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) শীর্ষ তিনজনকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের একদল কর্মকর্তা। সেদিন সকালে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের ৪০৪তম সভা আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন ছিল রাজধানীর মতিঝিলের মতিঝিলের প্রধান কার্যালয়ে। ডিজিএফআই কার্যালয়ে অস্ত্র দেখিয়ে একে একে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কোম্পানি সচিবকে। ঠিক এর পরপরই সেখানে যান এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ, তার ভাই আবদুস সামাদ লাবু ও মাসুদের মেয়ের জামাই বেলাল আহমেদ। সাত বছর পরে এসে বেলাল এখন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদে সমাসীন। সূত্র :  চট্টগ্রাম প্রতিদিন

শেখ হাসিনা সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ এভাবেই মাত্র একদিনে দখল করে নেয় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল)। সব সংবাদমাধ্যমে ওই সময় সংবাদ প্রকাশিত হয়— ‘ব্যাংকটির বিদায়ী চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর রেজাউল হক, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আনিসুল হক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শহীদ হোসেন পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।’

ব্যাংকটির উদ্যোক্তারা সেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জানান, ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর রাজধানীর মতিঝিলের প্রধান কার্যালয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৪০৪তম সভা নির্ধারিত থাকলেও পরে ডিজিএফআইয়ের তত্ত্বাবধানে সেই সভা অনুষ্ঠিত হয় হোটেল ওয়েস্টিনে। ব্যাংকটির পর্ষদের অন্য সদস্যদের এর আগেই ডিজিএফআইয়ের তত্ত্বাবধানে জোর করে বাসা তুলে নিয়ে প্রথমে ডিজিএফআই কার্যালয়ে এবং এরপর হোটেল ওয়েস্টিনে নিয়ে আসা হয়। ওই সময় ডিজিএফআই মহাপরিচালক সাইফুল আবেদীন উদ্যোক্তাদের জানান, ‘ওপরের নির্দেশে এই মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে।’

নতুন নিয়োগ রাতারাতি
জোর করে এভাবে মালিকানা বদলের পরদিনই পুরো পরিচালনা পর্ষদ মুহূর্তেই বদলে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকও যেন ঠিক এর অপেক্ষায় ছিল। তারা এস আলম গ্রুপের মনোনীত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও আইআইইউসির বর্তমান উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম আরিফকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান, সাইফুল আলম মাসুদের মেয়ের জামাই বেলাল আহমেদকে ভাইস চেয়ারম্যান এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে এনে কাজী ওসমান আলীকে এমডি ও সিইও হিসেবে নিয়োগ অনুমোদন দেয়।

রোববার (১৮ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নরের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের তিনজন উদ্যোক্তা— সাবেক চেয়ারম্যান মেজর রেজাউল হক (অব.), নির্বাহী কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিসুল হক এবং নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. আঙ্গুর রহমান মালিকানা বদলের শিকার হওয়া সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

তারা বলেন, এস আলম গ্রুপের হাতে যাওয়ার পর থেকে ব্যাংকটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নেওয়া হয়েছে।

উদ্যোক্তারা অভিযোগ করেন, ২০১৭ সালে একটি গোয়েন্দা সংস্থা অস্ত্রের মুখে ব্যাংকের তৎকালীন নেতৃত্বকে পদত্যাগে বাধ্য করে। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ শুধু টাকা পাচার, ব্যাংক লুটপাট ও তাদের নির্দিষ্ট অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ব্যাংকটি দখল করেছে। গ্রাহকের স্বার্থ ও টাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের লক্ষ্য নয়।

তারা অভিযোগ করেন, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক নতুন করে যে ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, তার বেশিরভাগই নামে–বেনামে তুলে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ ও তাদের সহযোগীরা। সীমাহীন দুর্নীতির কারণে ব্যাংকটি দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। ফলে বর্তমানে গ্রাহক পর্যায়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, অনেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন।

চলছে শেষ মুহূর্তের লুটপাট
উদ্যোক্তাদের চিঠিতে বলা হয়, এস আলম গ্রুপের সীমাহীন দুর্নীতি ও নামে-বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ায় ব্যাংকটি অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। ফলে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলেও বিশেষ ব্যবস্থায় ব্যাংকের টাকা এস আলম গ্রুপ ও তার বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান নামে ও বেনামে উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে, যা দ্রুত বন্ধ করা দরকার। না হলে গ্রাহকের টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দেবে।

ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ব্যাংকের গ্রাহকের আমানত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে পরিশোধ করার প্রক্রিয়া চলমান থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে পরিচালিত চলতি হিসাবে ঘাটতি দিন দিন বাড়ছে।

এছাড়া পটিয়ার লোকজনকে একচেটিয়া নিয়োগ দেওয়ায় ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বলে তারা অভিযোগ তুলেছেন।

খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) ২০২৩ সাল শেষে খেলাপি ছিল ৯ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাড়পত্রের ভিত্তিতে ব্যাংকটির উদ্বৃত্তপত্রে দেখানো হয়েছে এক হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে দেখা গেছে, চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এসআইবিএল সাত হাজার ৯২৪ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ গোপন করেছে। ঋণের বিপরীতে প্রভিশন হিসেবে রাখা হয়েছে মাত্র ১৫৩ কোটি টাকা। অথচ আমানতকারী ও অংশীদারদের স্বার্থ রক্ষায় ৯ হাজার ২৮১ কোটি টাকা রাখার কথা ছিল।

গ্রাহকরা আতঙ্কে
এদিকে জানা গেছে, এসআইবিএল এখনও এসআলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ থাকায় আতঙ্কিত হয়ে বিপুল টাকা তুলে নিচ্ছেন আমানতকারীরা। দিনে একজন গ্রাহক ৩ লাখ টাকার বেশি তুলতে পারবেন না— বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও বেশিরভাগ গ্রাহক ব্যাংকে এসে পে-অর্ডার নিচ্ছেন। রোববার সকাল থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত ৮ কোটি ১৭ লাখ টাকার পে-অর্ডার ইস্যু করেছে ব্যাংকটির বিভিন্ন শাখা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়