শিরোনাম
◈ ব্লু ইকোনমি বাস্তবায়নে এডিবির সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ◈ টেকনাফ সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে রোহিঙ্গা যুবক নিহত ◈ ১৫ জুলাই ঢাকা-বেইজিং সরাসরি ফ্লাইট চালু হচ্ছে  ◈ খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ: ডা. জাহিদ ◈ এইচএসসির দ্বিতীয় দিনে আট বোর্ডে অনুপস্থিত ১০ হাজার ৪৪০ পরীক্ষার্থী ◈ কোটা বাতিলের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ শিক্ষার্থীদের, বুধবার থেকে অবস্থান কর্মসূচি ◈ টানা ভারী বর্ষণে সাজেকে আটকা ৭ শতাধিক পর্যটক ◈ দুদকের মামলায় সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে চার্জশিট ◈ সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসেব দিতে হবে: হাইকোর্ট  ◈ আগস্টে বন্যার আশঙ্কা, মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

প্রকাশিত : ৩০ জুন, ২০২৪, ১১:১৩ রাত
আপডেট : ০১ জুলাই, ২০২৪, ০১:০৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঐশির মৃত্যু: অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে বিএমডিসি

সুজন কৈরী: [২] ঢাকার দিল্লি পাবলিক স্কুলের ও লেভেলের শিক্ষার্থী শ্রেয়সী আহমেদ ঐশীর মৃত্যু ভুল চিকিৎসায় হয়েছে। এমন অভিযোগ ছিল বাবা-মায়ের। 

[৩] এর আগে, ২০২১ সালের ১১ মার্চ বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) অভিযোগ করেছিলেন ঐশির বাবা-মা। প্রথম আলো

[৪] পরীক্ষার বাকি ছিল কয়েক মাস। পড়া মনে থাকছে না বলে কান্নাকাটি করছিল সে। পরে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়। চিকিৎসার একপর্যায়ে মেয়েটি আত্মহত্যা করলে বাবা-মা ভুল চিকিৎসার অভিযোগ করেন। 

[৫] অভিযোগ পাওয়ার তিন বছরের কিছু বেশি সময় পর গত ২৭ জুন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. লিয়াকত হোসেনের সই করা প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিএমডিসি বলেছে, কর্নেল ডা. অধ্যাপক মো. নুরুল আজিমের (অবসরপ্রাপ্ত) বিরুদ্ধে অভিযোগকারী আহমেদ রশীদ ও শর্মিষ্ঠা আহমেদ ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় তাদের একমাত্র মেয়ে শ্রেয়সী আহমেদ ঐশীর মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে কাউন্সিলে অভিযোগ করেছিলেন। কাউন্সিলের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, চিকিৎসক নুরুল আজিম অভিজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অবহেলা করেছেন।

[৬] ওষুধ সেবন শুরুর ১৮ দিনের মাথায় ঐশী আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এতে চিকিৎসক ওষুধের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। আড়াই মাস এভাবে ওষুধ খাওয়ার পর ঐশী আত্মহত্যা করে। দিনটি ছিল ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর।

[৭] বিএমডিসি আরও বলেছে, মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ প্রয়োগে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসক তানজিমা তাজরিন মূলত নুরুল আজিমের তত্ত্বাবধানে কাউন্সেলিংয়ের কাজ করতেন। এ ক্ষেত্রে অদক্ষতা, অপেশাদার আচরণ দেখানোর পাশাপাশি পেশাগত কাঠামো মেনে চলেননি। 

[৮] এ ছাড়া ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে তার ব্যবস্থাপনাবিষয়ক জ্ঞানেও উল্লেখযোগ্য ঘাটতি প্রমাণিত হয়েছে। কাউন্সিলের ২০১০ সালের আইনের আওতায় বিএমডিসি নুরুল আজিমের রেজিস্ট্রেশন পাঁচ বছরের জন্য ও তানজিমা তাজরিনের এক বছরের জন্য স্থগিত করেছে। 

[৯] যা চলতি বছরের ২৮ জুন থেকে কার্যকর হবে। এ সময়ে চিকিৎসক হিসেবে কোথাও চিকিৎসাসেবা দিতে পারবেন না তারা। এমনকি তাঁরা নিজেদের চিকিৎসক হিসেবেও পরিচয় দিতে পারবেন না।

[১০] পড়াশোনা মনে রাখতে পারছিল না বলে চিন্তিত ছিল ১৭ বছর বয়সী ঐশী। তাই তাকে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট বা মনোচিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন বাবা-মা। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়িয়ে দিতে পারে, এমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ওষুধগুলোই মেয়েটিকে দিয়েছিলেন চিকিৎসক। ওষুধ সেবন শুরুর ১২ দিনের মাথায় ঐশী আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এতে চিকিৎসক ওষুধের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। আড়াই মাস এভাবে ওষুধ খাওয়ার পর ঐশী আত্মহত্যা করে। 

[১১] গত বৃহস্পতিবার বিএমডিসির চিঠি হাতে পাওয়ার পর ঐশীর বাবা আহমেদ রশীদ ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘ঐশীর জীবনটা মাত্র শুরু হয়েছিল। ও চলে গেল খুব দ্রুত।...ওর এই ছোট্ট জীবনের নিশ্চয় একটা “উপলক্ষ” ছিল। সেটা হতে পারে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা। সুস্থ চিকিৎসার অধিকার আদায় করা আর চিকিৎসাক্ষেত্রে জবাবদিহির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এগুলো বিবেচনা করলে মেয়েটির জীবন হয়তো আমাদের অনেকের চেয়ে বড় ছিল। ঐশী আর কখনোই ফিরবে না। আল্লাহ নিশ্চয়ই ঐশীকে ভালো রাখবেন। কেননা, ঐশী কোনো ভুল করেনি, আত্মহত্যা করেনি। ঐশী মা, ভালো থেকো। বাবা-মা-ভাইজু এতটুকুই করতে পেরেছে। আবার দেখা হবে মা।’

[১২] ঐশীর জীবনটা মাত্র শুরু হয়েছিল। ও চলে গেল খুব দ্রুত।...ওর এই ছোট্ট জীবনের নিশ্চয় একটা ‘উপলক্ষ’ ছিল। সেটা হতে পারে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা। সুস্থ চিকিৎসার অধিকার আদায় করা আর চিকিৎসাক্ষেত্রে জবাবদিহির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

[১৩] বিচার পাওয়ার লড়াই চালিয়ে যাওয়ায় শর্মিষ্ঠা আহমেদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আহমেদ রশীদ বলেন, ‘বিএমডিসিতে ১৬ পৃষ্ঠার অভিযোগ লিখতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। মেয়ের মা পাশে থেকে লিখিয়েছে। এরপর বিএমডিসি ফলোআপ করেছে। মেয়ে মারা যাওয়ার পর শিক্ষকতার চাকরিও ছেড়ে দিয়েছে। বিচার না পাওয়া পর্যন্ত সে কোথাও যাবে না, প্রতিজ্ঞা করেছিল।’

[১৪] ঐশির মা শর্মিষ্ঠা আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা সব সময়ই বলে এসেছি, আমাদের মেয়ে আত্মহত্যা করেনি, আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে ছিল না সে। এ বিষয়ে সে তার বন্ধুদের কাউন্সেলিং করত। মেয়ে প্রথমবার যখন আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিল, তখন হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পথে অবাক হয়ে বারবার জানতে চেয়েছে, সে আসলেই এ কাজ করেছিল কি না। মেয়েটা অনেক শক্ত ছিল বলেই আড়াই মাস সংগ্রাম করে টিকেছিল।

[১৫] আমরা বিচার পেয়েছি। ঐশীর একমাত্র ভাই অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া দ্রাবিড় আহমেদ এত দিন যে যন্ত্রণা বয়ে বেড়িয়েছে, তা থেকে খানিকটা রেহাই পেয়েছে। কিন্তু আমরা কি আমাদের মেয়েকে আর ফিরে পাব? হাতে গোনা কয়েকজন চিকিৎসকের জন্য চিকিৎসা পেশার বদনাম হয়।

[১৬] ঐশির বাবা আহমেদ রশীদ বিএমডিসির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, চিকিৎসাসংক্রান্ত অভিযোগের জন্য দেশে একমাত্র প্রতিষ্ঠান বিএমডিসি। ভুল চিকিৎসার শিকার হলে ভুক্তভোগী পরিবার যেন চিকিৎসকদের গালিগালাজ না করে বিএমডিসিতে অভিযোগ করেন। আর চিকিৎসকেরা যেন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোনো অবহেলা বা অযত্ন না করার আহ্বান জানান তিনি। সম্পাদনা: সমর চক্রবর্তী

এসকে/এসসি/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়