ফরিদপুর প্রতিনিধি: [২] ফরিদপুরে হোসেন প্রামাণিক নামের এক যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে গাছের সাথে বেঁধে বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে তারই আপন ভাইয়েরা। ঠেকাতে যেয়ে তার স্ত্রী ও কলেজপড়ুয়া মেয়েকেও মাটিতে ফেলে মারপিট করা হয়েছে। এরপর ৯৯৯ নম্বরে খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি দল তাদের উদ্ধার করে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরে তাদের হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে।
[৩] মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) বিকালে কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুজন বিশ্বাস এসব তথ্য জানিয়েছেন।
[৪] এর আগে সোমবার (০১ এপ্রিল) সকালে জেলা সদরের ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর পূর্ব মল্লিকপাড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
[৫] নির্যাতনের শিকার হোসেন প্রামাণিক রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, 'সোমবার সকাল ৬টার দিকে তিনি বাজারে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তার ভাই কাদের, লতিফ, আজিজুল, মাইনুদ্দিন, মুরশিদ সহ ৭ থেকে ৮ জন তাকে দেখে ধাওয়া করে। তিনি দৌঁড়ে একটি বাড়ির দিকে যেতে চাইলে চারজন তাকে ঘিরে ধরে। তাকে গলায় গামছা দিয়ে টেনেহিঁচড়ে চ্যাংদোলা করে বাড়ির মধ্যে টেনে নিয়ে রান্নাঘরের সামনে লিচু গাছের সাথে বেধে বর্বর নির্যাতন করা হয়। এরপর লতিফ হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও প্লাস দিয়ে আহত করে। আব্দুল, আজিজুল ও মুরশিদ বাঁশ ও লাঠি দিয়ে পেটায়। দুজন নারীও হামলার সময় তাদের সাথে ছিলো। তার পা ভেঙ্গে গেছে। সারা শরীরে থেতলে যাওয়া আঘাতের চিহ্ন।'
[৬] এদিকে হোসেন প্রামাণিকের উপর নির্যাতনের খবর পেয়ে তার স্ত্রী নাজমা বেগম (৪৫) ও তার মেয়ে নুপুর (২০) ও ফাতেমা (২২) তাকে বাঁচাতে এলে তাদেরকেও মারধর করা হয়। নাজমা বেগম বলেন, আশেপাশের বাড়ির লোকদের জানালে তারা কেউ তার স্বামীকে রক্ষায় এগিয়ে আসেনি। এরপর তিনি তার মেয়েরা স্বামীকে উদ্ধার করতে গেলে তাকে বিবস্ত্র করে পেটাতে থাকে। তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। আঘাতে তার পা ভেঙ্গে গেছে। এরপর ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে।
[৭] কোতোয়ালি থানার এসআই সুজন বিশ্বাস বলেন, জরুরি নম্বরে কল পেয়ে হোসেন প্রামাণিক ও তার স্ত্রীকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তবে সেসময়ে হামলার সাথে জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, কদিন আগে হোসেন প্রামাণিকের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের মামলায় জামিনে এসে উচিত শিক্ষা দিতে তার উপর এ হামলা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। আহতদের প্রথমে চিকিৎসা নিয়ে তারপর মামলা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
[৮] জানা গেছে, তার পিতা মৃত ওয়াহেদ প্রামাণিক ৪ একর ৩৬ শতাংশ জমি বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) ও খাজা মাইনুদ্দিন চিশতি (রহ.) এর নামে ওয়াকফ করে যান। ওই জমির মোতয়াল্লী ছিলো বড় সন্তান আব্দুল কাদের ও মেজো সন্তান মাইনুদ্দিন প্রামাণিক। ওয়াকফকৃত সম্পত্তির ফসলাদি, ফলফলাদি ও গাছপালার সম্পদ তারাই ভোগদখল করতো। এরপর ২০২২ সালের আগস্টে ওয়াকফ এস্টেট হোসেন প্রামাণিককে মোতয়াল্লী নিযুক্ত করে। এনিয়ে তখন থেকেই হোসেন প্রামাণিকের উপরে ভাইয়েরা রুষ্ট।
[৯] হোসেন প্রামাণিক বলেন, প্রায় একবছর আগে ভাইয়েরা তাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। ওই ঘটনায় একটি মামলা চলমান রয়েছে। এরপর গত ২০ মার্চ ও ২৭ মার্চ রাতে পরপর দুবার তার বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। তিনি থানায় একটি মামলা করেন। এরপর আবার এ হামলা করে।
প্রতিনিধি/একে
আপনার মতামত লিখুন :