ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : [২] কাজে যোগদান ও করোনাকালের বকেয়া বেতনের এই দুইদফা দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো গতকাল শনিবার দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন পরিবার পরিজন নিয়ে খনিশ্রমিকরা।
[৩] গত বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) থেকে খনির অভ্যন্তরে কর্মরত ৪০০ শ্রমিক বাইরের আন্দোলনরত ৭৪৭ জন শ্রমিকের সঙ্গে ভেতরে আন্দোলন শুরু করায় আন্দোলনের নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
[৪] আজ শনিবার কোল ইয়ার্ডের গেটের বাইরে কাজ বন্ধ করে আন্দোলনরত ৪০০ শ্রমিক এবং বাইরে ৭৪৭ জন শ্রমিকের সঙ্গে তাদের এবং ভেতরের শ্রমিকদের স্ত্রী ও সন্তানদের মিছিলে-স্লোগানে খনি এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে।
[৫] ৪৭৪ জন শ্রমিকের দুইদফা দাবির সঙ্গে কর্মরত ভেতরের ৪০০ শ্রমিক সংহতি প্রকাশ করে আন্দোলন করছেন ভেতরে। আর ভেতরের ৪০০ জন শ্রমিকের স্ত্রী ও সন্তানরা আন্দোলন করছেন তাদের ভেতরে বন্দি দশার মতো কর্মরত ৪০০ শ্রমিকের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য।
[৬] আট মাস থেকে ভেতরে অবস্থানকারি খনিশ্রমিক আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী শাহনাজ পারভিন বলেন, আট মাস থেকে স্বামী আব্দুর রাজ্জাক খনির ভেতরে কাজ করছেন। তার সঙ্গে দেখা স্বাক্ষাত নেই। প্রতিবন্ধী মেয়ে আম্বিয়া তার পিতার জন্য অস্থিত হয়ে থাকে। তাকে সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে যায়। খনির কর্মকর্তারা নিজের পরিবারের সঙ্গে থাকবেন। অফিস করবেন। ভেতরে-বাইরে যাতায়াত করবেন তাতে করোনা ধরে না। আর শ্রমিকরা খনির ভেতরে-বাইরে যাতায়াত করলেই করোনা ধরে। কর্মকর্তারা পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ করবেন। আর আমরা একা বাড়ীতে আর স্বামীরা খনির ভেতরে বন্দি জীবন নিয়ে ঈদ করবে। এটা হতে পারে না। আমরা আর নিজের স্বামীদের বন্দি জীবনে রেখে কাজ করাতে চাই না। তাদেরকে মুক্ত করতে আমরা আন্দোলনে নেমেছি।
[৭] একই কথা বলেন, শিরিনা বেগম, আরিফা বেগম, পিয়ারা বেগম, মনিরা পারভিন, পারভীন আক্তার, শিরিন আক্তার ও মারুফা বেগম। তারাও তাদের সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে কোল ইয়ার্ড গেটে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছে স্বামীদের মুক্ত করতে।
[৮] এদিকে সকাল থেকে খনির কোল ইয়ার্ড গেটের ভেতর অংশে ভেতরের ৪০০ শ্রমিক এবং বাইরের অংশে ৭৪৭ জন শ্রমিকসহ তাদের পরিবার পরিজন অবস্থান নিয়ে দুইদফা দাবির অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। সকাল ১১ টার দিকে ভেতর অংশের আন্দোলনরত শ্রমিকদের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাকির হোসেন, ওয়াজেদ আলী ও আল আমিন।
[৯] একইভাবে বাইরের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূর ইসলাম, শ্রমিক নেতা এরশাদ আলী, আবু তাহের, এহসানুল হক সোহাগ প্রমুখ।
[১০] এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ভেতরের শ্রমিকদের স্ত্রীদের মধ্যে শিরিনা বেগম, আরিফা বেগম, শিরিন আক্তার ও মারুফা বেগম প্রমুখ। ভেতর ও বাইরের দুই শ্রমিকদের সমাবেশ থেকেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, দুইদফা দাবি পূরণ এবং বন্দিদশার শ্রমিকদের মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
[১১] বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি শ্রমিক ও কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান বলেন, ৭৪৭ জনকে দীর্ঘ সময় ধরে কাজে নেওয়া হচ্ছে না। ছুটির সময় প্রতিমাসে সাড়ে চার হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু আট মাস থেকে সেই টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে শ্রমিকরা অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছেন। একইভাবে সামনে ঈদ ভেতরে কর্মরত শ্রমিকদের বাড়ীতে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
[১২] বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান খান বলেন, নতুন কোল ফেইসে কয়লা তোলার প্রস্তুতি চলছে। সেটি চালু হলে বাইরের শ্রমিকদের মধ্যে পর্যায়ক্রমে কাজে নেওয়া হবে। ভেতরের শ্রমিকদের আন্দোলন সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা নিজ নিজ বাড়ী থেকে কাজ করতে চায়। সম্পাদনা : জেরিন
আপনার মতামত লিখুন :