শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৯ এপ্রিল, ২০২২, ০২:৫৯ রাত
আপডেট : ২৯ এপ্রিল, ২০২২, ০২:৫৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ফসলরক্ষা বাঁধে ফাটল

এখনো আতঙ্কে দিন কাটছে হাওরবাসীর

বণিক বার্তা: উজানের ঢলে সুনামগঞ্জে একের পর এক ভেঙেছে ফসলরক্ষা বাঁধ। এতে হাওরে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে স্বপ্নের সোনালি ফসল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হাওরের হাজারো কৃষক। এছাড়া পাহাড়ি ঢলে পানির চাপে কয়েকটি বাঁধে ধস ও ফাটল দেখা দিয়েছে। এসব ফসলরক্ষা বাঁধ এখন হুমকির মুখে রয়েছে। এর বাইরে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ঝড়। দিন ভালো গেলেও রাতে নেমে আসে ভয়ংকর কালবৈশাখী। এতে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার অধিকাংশ উপজেলায় ঘরবাড়িসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে হাওরবাসীর। এ অবস্থায় ঈদের মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও আনন্দ নেই হাওরে।

হাওরের কৃষকরা জানান, অনেক হাওরে ঢলের পানিতে ধান তলিয়ে গেছে। যে হাওরগুলোয় এখনো পানি ঢোকেনি, সেসব হাওরে কৃষকরা ধান কাটতে শুরু করেছেন। ব্রি ২৮ জাতের ধান কাটা প্রায় শেষের পথে। তবে ব্রি ২৯ জাতের ধান এখনো কাঁচা-আধাপাকা অবস্থায় রয়েছে। এগুলো কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। তবে আশঙ্কা পিছু না ছাড়ায় সব মিলিয়ে হাওরের মানুষের মধ্যে ঈদের কোনো আমেজ নেই।

তারা বলেন, বেশকিছু হাওরের ধান তলিয়ে গেছে। এর বাইরে অনেক হাওর বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে। এ অবস্থায় কৃষকরা ফসল গোলায় তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সামনে ঈদ। অন্য বছর এ সময় কৃষকরা হাসিমুখে ধান গোলায় তুলে ঈদের কেনাকাটা ও আনন্দে মাতোয়ারা হতেন। কিন্তু এবার তার উল্টো। অনেকেই জমির ধান গোলায় তুলতে পারেননি। এদিকে মাঝেমধ্যেই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এতে অনেক জায়গায় বিদ্যুতের লাইনসহ গাছপালা ও ঘরবাড়ি ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাওরপাড়ের মানুষ।

কৃষক ওমর গণি বলেন, হাওরের মানুষের ওপর যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা পড়েছে। একদিকে বাঁধ ভেঙে হাওর তলিয়ে ফসল ডুবেছে। অন্যদিকে কালবৈশাখী ঝড়ে ঘরবাড়ি ও অবশিষ্ট ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেকের ঘরের টিন উড়ে গেছে। সামনে ঈদ। ঈদের আগেই ঘর-দুয়ার ভেঙে গেছে। তিনি আক্ষেপ করেন, ঘর-দুয়ার ঠিক করব না ঈদ করব। কষ্টে আছি আমরা।

হাওরের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, রাত এলেই আশঙ্কায় থাকি ঝড়ের। প্রচণ্ড বাতাস, তার সঙ্গে বৃষ্টি ও শিলা পড়ে। এতে হাওরের কৃষি ফসল, গাছের কাঁচা আমসহ অনেক জাতের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। সব মিলিয়ে কালবৈশাখী ঝড়ে আমরা হাওরবাসী খুব আতঙ্কে আছি, কষ্টে আছি। আমরার কাছে ঈদের খুশি নেই। এবার বাচ্চাদের জন্য ঈদের নতুন জামা-কাপড় কিনতে পারি নাই।

শনির হাওরের কৃষক গোলাম সারওয়ার বলেন, শনির হাওরের ধান দ্রুত কাটা চলছে। এখনো এ হাওরে পানি ঢোকেনি। তবে কালবৈশাখী ঝড়ে কাটা ধানসহ ঘর-বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। বাড়ির বেশ কয়েকটি বড় গাছ ভেঙে গেছে। সব মিলিয়ে আমাদের কষ্ট যেন দূর হচ্ছে না।

বাঁধের ভাঙনে ফসলহানি ও কালবৈশাখীর ক্ষতির প্রভাব দেখা গেছে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন বিপণি বিতানে। খুব একটা জমেনি ঈদের বাজার। শহরের সুরমা মার্কেট, মধ্যবাজারসহ বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা খুব কম। দোকানগুলোতে প্রবাসীদের পরিবার ছাড়া কৃষক পরিবারের লোকজন নেই বললেই চলে।

মধ্যবাজারের নিউ কাকলী ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী রতন রায় বলেন, গত দুই বছর করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারিনি। এবার বড় আশা করে দোকানে নতুন নতুন জামা-কাপড় তুলেছিলাম, কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা খুব কম। হাওর তলিয়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে ঈদ বাজারে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, হাওরের ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। হাওরের ভেতরে এ পর্যন্ত ৯১ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় ১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৪৫ হেক্টর ধান কাটা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৭৬ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো। এমন আবহাওয়া থাকলে আগামী চারদিনের মধ্যে হাওরের নিচু এলাকায় শতভাগ ধান কাটা শেষ হবে। তিনি জানান, ২০ মের ভেতরে পুরো হাওরের ধান কাটা শেষ হবে বলে তিনি আশাবাদী। তবে রাতে কালবৈশাখী ঝড়ে কম-বেশি কিছু ফসল ক্ষতিগ্রস্ত করলেও ঘরবাড়ি ও গাছপালা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়