শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৮ মার্চ, ২০২৩, ১২:৫৬ দুপুর
আপডেট : ২৮ মার্চ, ২০২৩, ১২:৫৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী কাটাগড়ের মেলা

মেলা

সনতচক্রবর্ত্তী, বোয়ালমারী (ফরিদপুর): জেলার বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড় গ্রামের ধর্মীয় সাধক দেওয়ান শাগের শাহে (রহ.) মাজারের বার্ষিক ওরশ উপলক্ষে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় মেলা। বাংলা সনের ১২ চৈত্র শাগের শাহে মৃত্যু বার্ষিকী ওরসের পাশাপাশি বসে এই মেলা। মেলায় মাজারের ভক্ত নারী পুরুষ ছাড়াও আশপাশের এলাকা থেকে কয়েক লাখ লোকের আনাগোনা হয়।

প্রায় চারশত বছর ধরে অনুষ্ঠিত এ মেলায় প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনদিনের মেলা হলেও এক সপ্তাহ আগে থেকে বসতে শুরু করে এ মেলা। মেলা শেষেও সপ্তাহব্যাপী চলে মেলার আমেজ।

ফকির সন্ন্যাসী আন্দোলনের আধ্যাত্মিক গুরু দেওয়ান সাগের শাহ্ (রহ.) অষ্টাদশ শতকের কোনও একসময় আস্তানা গাড়েন ফরিদপুরের কাটাগড়ে। শাগের শাহ (রহ.) ব্রিটিশ বিরোধী ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলনের অন্যতম নেতা মজনু শাহর আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে পরিচিত হলেও ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ মজনু শাহের শাগরেদ হিসেবে দাবি করলেও তিনি আধ্যাত্মিক শক্তি ও বিভিন্ন অলৌকিক মাজেজার অধিকারী ছিলেন বলে স্বীকার করে নিয়েছেন সব ঐতিহাসিকরা।

উনবিংশ শতকের চল্লিশের দশকের কোনও একবছর ১২ চৈত্র মৃত্যু হয় তার। কারও কারও মতে ওই দিন তিনি নিজেই কবরস্থ হয়ে দেহ বদল করেন। তখন থেকেই এ দিবস উপলক্ষে সারাদেশ থেকে লাখ ভক্ত সমবেত হন কাটাগড়ে। বসে মেলা, ফকির-সন্ন্যাসী ভক্তরা আসর জমান ভক্তিমূলক সংগীতের। নানা স্থান থেকে ভক্তরা আসেন মানত নজরানা নিয়ে। 

মেলা উপলক্ষে মাজারের পাশে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ একর এলাকায় কয়েক হাজার দোকান বসে থাকে। বিনোদনের জন্য রয়েছে পুতুল নাচ, সার্কাস, ভ্যারাইটি শো, যাত্রাপালা, যাদু, নাগরদোলা, মোটরবাইকশো। এছাড়া ফার্নিচার, মিষ্টির দোকান, খেলনার দোকান রয়েছে। পাওয়া যায় সাঁজ বাতাসা, তালের পাখা, মাটি, লোহা ও বাঁশের তৈরি নানাপদের গৃহস্থালি সামগ্রী, থাকে চুড়ি-ফিতা, শরবত, খেলনা, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী থেকে শুরু করে লাখ টাকা দামের খাট। 

এ সময় কাটাগড় গ্রামসহ আশপাশের কলিমাঝি, সূর্যোগ, সহস্রাইল, ভুলবাড়িয়া, শেখর, ভাটপাড়া, মাইটকুমরা, গঙ্গানন্দপুর, ছত্রকান্দা, বন্ডপাশা, বয়রা, বামনগাতি গ্রামগুলোতে ঈদের আমেজ বিরাজ করে। বিশেষ করে আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দেওয়ার রীতি চালু হয়েছে আদিকাল থেকেই। অন্য সময় না এলেও এই এলাকার বিবাহিত মেয়েদের মেলা উপলক্ষে বাপের বাড়ি বেড়ানোর রেওয়াজ রয়েছে প্রতিটি পরিবারে। আর এ এলাকার চাকরিজীবী ও পেশাজীবীরা যারা বাইরে থাকে তারা সারাবছর অপেক্ষায় থাকেন মেলা উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে আসার।

বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়ন বাসিন্দা সুমন বিশ্বাস বলেন, কাটাগড়ের মেলা আমাদের এলাকার ঐতিহ্য। এ মেলাকে ঘিরেই এলাকায় বইছে উৎসবের আমেজ। গ্রামের অনেক মানুষ যারা জীবিকার সন্ধানে এলাকার বাইরে থাকেন ঈদ বা পূজাতে তারা বাড়িতে না এলেও মেলাকে সামনে রেখে বাড়িতে আসেন।

বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল ওহাব বলেন, এটি পুরাতন মেলা। আমরা পুলিশ প্রশাসন থেকে মেলার শৃংঙ্খলা ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সর্বদা তৎপর আছি। সম্পাদনা: ইস্রাফিল ফকির 

প্রতিনিধি/আইএফ/একে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়