আমিনুল ইসলাম: অসাবধানতায় নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার আটঘরিয়া গ্রামের ফসলি মাঠে আগুন লেগে প্রায় ১৫ বিঘা জমির পাকা গম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে প্রায় ১৮ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গত শুক্রবার (২৫ মার্চ) দুপুরে বড়াইগ্রাম উপজেলার আটঘরিয়া এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানায়, শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে জমিতে হঠাৎ আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।
এসময় দ্রুত পাশের জমিগুলোতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে জমিতে থাকা গম পুড়ে ছাই হয়ে যায়। খবর পেয়ে এলাকাবাসী ও বনপাড়া ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নাটোরের উপরিচালক কৃষিবিদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, বিষয়টি আমরা শুনেছি। নাড়া (গমের খড়ের গোড়ার অংশগুলো) পোড়াতে যেয়ে এআগুনের ঘটনা ঘটেছে। এতে কার কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা নিরপনের চেষ্টা চলছে। এদিকে নাটোর জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি নিয়ে আমারা তদন্তে নেমেছি। এটি অসাবধানতা বশত না কি কোন নাশকতা তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শার্মিন সুলতানা জানান, এক কৃষক শুক্রবার সকালে তার জমির পাকা গম কেটে ঘরে তোলেন। দুপুর ১২টার দিকে গমের খড়ের গোড়ার অংশগুলো ধ্বংস করার জন্য তিনি তার ওই জমিতে আগুন দিয়ে বাড়ি চলে আসেন। অসাবধনাতা ও অসতর্কতা বশত এ আগুন দ্রুত পাশের কৃষকের গমের জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে নিমিষেই আগুনে সব পাকা গম পুড়ে যায়। প্রাথমিক তদন্তে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৭ কৃষক। কারও ১০ কাঠা, কারো ৭ কাঠা এভাবে ১২ বিঘা জমির পাকা গম পুড়ে গেছে। আমরা তাদের ক্ষতিপুরন দেয়ার চেষ্টা করছি। এটি প্রাকৃতিক কোন দূর্যোগ নায়, আমরা ঠিক করেছি ক্ষতিগ্রস্থদের প্রনোদনা হিসেবে আউষ ধানের বীজ দেবো।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আশরাফ, সাইফুল, শামসুল, গিয়াস ও শাহজাহান বলেন, পুড়ে যাওয়া ওই সব জমির এক বিঘায় কমপক্ষে ১৫ মণ গম উৎপাদন হয়। সে হিসেবে ৩৬ বিঘা জমিতে আনুমানিক ৫৪০ মণ গম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ আনুমানিক মূল্য প্রায় ১১ লাখ টাকা। আমরা পরিবার নিয়ে কি করে খাবো? গম বিক্রি করে কিছু ঋণ পরিশোধ ও ঈদে পরিবারের কাপড় কিনতে চেয়েছিলাম। সে স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক চাঁদ মিয়া, সাত্তার, মজিদ, কাদের বলেন, সামনে ঈদ। গম বিক্রি করে ছেলে-মেয়েদের জন্য ঈদের জামা-কাপড় কিনে দেবো বলে আশায় ছিলাম। কিন্তু সে স্বপ্ন এখন শেষ। আমরা কৃষকরা অনেক সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে গম চাষ করেছিলাম। সেই স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন সে ঋণের টাকাও পরিশোধ করবো, না পরিবারের মুখে খাবার জোগাবো। এ চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।
এআই/এসএ
আপনার মতামত লিখুন :