শিরোনাম
◈ রাজধানীর শ্যামপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি রনি গ্রেফতার ◈ টাকা না পেয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকে তালা দিলেন গ্রাহকরা ◈ দেখে মনে হয় স্কুল পড়ুয়া কিশোর, বয়স ২২, করেন মাদক ব্যবসা ◈ ৭ কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে যা বললেন শিক্ষা উপদেষ্টা ◈ চার ঘণ্টা করে ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকবে ৭০০ যুবক: উপদেষ্টা আসিফ (ভিডিও) ◈ ‘তোমরা রাস্তা বন্ধ করবা, আমরা কি আঙ্গুল চুষবো’ সাধারণ মানুষের আবেগেরই বহিঃপ্রকাশ (ভিডিও) ◈ শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার বিষয়ে যা বললেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস ◈ অলিম্পিক ক্রিকেট সরে যাচ্ছে নিউ ইয়র্কে ◈ শান্তকে টেস্ট ও ওয়ানডেতে রেখে টি-টোয়েন্টিতে সোহানকে অধিনায়ক করা য়ায়: আশরাফুল ◈ বিদ্যুৎ, পানি এবং অন্যান্য অবকাঠামো প্রকল্পের ক্ষেত্রে দিল্লির সমর্থনের অভাব রয়েছে : ড. ইউনূস

প্রকাশিত : ২৩ মার্চ, ২০২৩, ০৩:৫৪ দুপুর
আপডেট : ২৩ মার্চ, ২০২৩, ০৩:৫৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

লাগামহীন শিক্ষা উপকরণের দাম, বেকায়দায় নিম্ন আয়ের অভিভাবকরা

জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর: শিক্ষা উপকরণের লাগামহীন দামে বেকায়দায় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। প্রতিটি উপকরণের দাম বেড়েছে ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ। শিক্ষার মৌলিক উপকরণ কাগজে আঘাত লেগেছে সব থেকে বেশি। দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্ডার দিয়েও কাগজ পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। শিক্ষার এই মৌলিক উপকরণ কাগজের দাম বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ শতাংশ। লক্ষ্মীপুরের চক বাজার, গেঞ্জিহাটা রোড, পুরাতন পৌরসভা রোড, জে.বি রোড ও রেহান উদ্দিন ভূঁইয়া সড়ক ঘুরে বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক মাসে শুধু কাগজ নয়, প্রতিটি শিক্ষা উপকরণের দাম ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষেরা তাঁদের আয়ের সঙ্গে এই বর্ধিত মূল্যের সমন্বয় করতে হিমশিম খাচ্ছেন।

মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের অভিভাবকরা বলছেন এতোদিন আমরা পরিবারের খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতে হিমশিম খেয়েছি, এখন সন্তানের লেখা-পড়া করাতে আরও বেশি হিমশিম খাচ্ছি। খাওয়া না হয় কম খেয়ে চলা যায় কিন্তু লোখা-পড়া তো আর কম করা যায় না? এই ভাবে চলতে থাকলে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের লোখা-পড়া বন্ধ করে দিতে হবে। 

লক্ষ্মীপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে স্কুল ছুটির পর মেয়েকে নিতে স্কুলের গেটের সামনে এসেছিলেন মনোয়ার রহমান। তিনি বলেন, কয়েক মাস আগেও মেয়ের লেখাপড়ার জন্য এক রিম সাদা কাগজ কিনেছিলেন ২২০ টাকায়। গত সপ্তাহে কাগজ শেষ হলে আবার কাগজ কিনতে লাইব্রেরিতে গিয়ে শুনি, এই কাগজ এখন ৫০০ টাকা। পরে তা যাচাই করতে কয়েকটি দোকানে গেলে একই দাম চান অন্য বিক্রেতারা।

তিনি বলেন, আমরা এখন কি করব, বাজারে সবকিছুর দাম বেড়েছে, তাই বলে ছেলে-মেয়েদের কাগজের দামটাও বাড়বে? এটা মেনে নেওয়া যায় না। পড়াশোনার যে খরচ বাড়লো সে অনুপাতে বেতন তো বাড়লো না। এখন কীভাবে বাড়তি খরচ চালাব, সেটিই চিন্তার বিষয়।  

বাগবাড়ি এলাকার জে.বি রোডের বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, গত কয়েক দিন আগে তিনি বইয়ের দোকানে গিয়ে সবকিছুর দাম শুনে চমকে গেছেন। ছেলের জন্য ক্যালকুলেটর কিনতে গিয়ে শোনেন, ১ হাজার টাকার ক্যালকুলেটর এখন ১ হাজার ৫০০ টাকা। বাঁধাই করা ৪০ টাকার কাগজের খাতা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, জ্যামিতি বক্স যেটির দাম ছিল ৬০ টাকা, সেটি এখন ১২০ টাকা। যে কলমের ডজন ছিল ৪০ টাকা, সেটি এখন ৬০ টাকা, পেনসিল ও রংপেনসিলের দাম গড়ে ৫ টাকা বেড়েছে। 

আবদুর রহমান বলেন, বাঁধা বেতন দিয়ে চলতে হয় আমাদের। এর মধ্যে সংসারের খরচ আবার বাচ্চাদের পড়াশোনার খরচ। সেই খরচ বেড়ে গেলে সংসারে টান পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। এখন হয় কম খেতে হবে, নয়তো বাচ্চাদের কম লেখা-পড়া করতে বলতে হবে। যেকোনো একটা বেছে নিতে হবে।
 
কথা হয় পৌর শহীদ স্মৃতি একাডেমীর তসলিমুর রহমান নামে এক অভিভাবকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার তিন ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়ে। প্রতি মাসে কম করে এক হাজার টাকার পণ্য কিনতে হয়। কিন্তু এখন যে অবস্থা কুলাতে পারছি না। দশটা খাতা কিনলাম ৩৫ টাকা করে। এই খাতা কয়েক মাস আগেও কিনেছি ২৫ টাকা করে। আর বছরের শুরুতে দাম ছিল ২০ টাকা। 

চকবাজার এলাকার কুন্ড টাওয়ারের এক্সিল্যান্ট প্রিন্টার্স এন্ড স্টেশনারীর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ শরিফ হোসাইন বলেন, সব ধরনের পড়াশোনার উপকরণের দাম ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কাগজের দাম। আগে এক রিম কাগজের দাম ছিল ১৮০ টাকা, সেটি এখন ৪৫০টাকা। ২২০ টাকারটা, এখন ৫০০ টাকা আর ৩৫০ টাকারটা, এখন ৭৫০ টাকা। এক দিস্তা আগে বিক্রি করেছি ১৫-২০ টাকা। এখন ২৫ থেকে ৪৫ টাকা। তিনি আরও বলেন, দাম বাড়ার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। যেসব মানুষ আগে দুই দিস্তা কাগজ কিনতেন, তাঁরা এখন এক দিস্তায় কাগজে চালাচ্ছেন। কম দামের কাগজ খুঁজছেন। আর তাতে তাদের ব্যবসাও খারাপ যাচ্ছে। 

অন্যদিকে শিক্ষা উপকরণের সাথে সংশ্লিষ্ট স্কুলব্যাগ কিনতেও বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে অভিভাবকদের। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর শহরের কয়েকটি ব্যাগের দোকান ঘুরে সন্তানকে নিয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন এনামুল হক। এসেছিলেন স্কুলব্যাগ কিনতে। তবে পছন্দের সঙ্গে মেলেনি সাধ্য।  

এনামুল হক বলেন, সাড়ে এগারোশ টাকার একটি ব্যাগ ছেলে পছন্দ করেছিল। এরছেয়ে কিছুটা কমের মধ্যে পছন্দের ব্যাগ পাবো মনে করে ঘুর ছিলাম। স্কুলব্যাগের এত দাম হয়েছে সেটা জানা ছিল না।

গত কয়েক মাসে দেশে বেড়েছে প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম। এর প্রভাব পড়েছে স্কুলব্যাগসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণেও। বই-খাতা, কাগজ-কলম-পেন্সিলসহ প্রায় সব ধরনের শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। স্কুলব্যাগের দাম বেড়েছে মানভেদে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। এতে অভিভাবকদের নিতে হচ্ছে বাড়তি চাপ।

লক্ষ্মীপুর শহরের কয়েকটি ব্যাগের দোকানের মালিকরা বলেন, ‘জিন কাই জিন’ স্কুলব্যাগের জন্য চায়নার একটি পরিচিত ব্র্যান্ড। গত মৌসুমেও এ ব্র্যান্ডের সাধারণ মানের একটি ব্যাগের দাম ছিল এক হাজার টাকার মধ্যে। এ মৌসুমে সেটা ১৪‘শ টাকা। একই ধরনের দেশে তৈরি অন্যান্য রেপ্লিকা ব্যাগ এখন ৭‘শ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে এক হাজার টাকা। এর মধ্যে আবার আগামী মাস থেকে ব্যাগের দাম আরও একশো/দেড়শো টাকা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। চাইলেও চকবাজার থেকে কম দামে আর ব্যাগ কেনা যাচ্ছে না।

এখন সবচেয়ে কম দামের দেশে তৈরি স্কুলব্যাগ কিনতে হলেও গুনতে হবে ৭‘শ টাকা। যেগুলো গত বছর ছিল সাড়ে ৪‘শ টাকা। মাঝারি মানের ব্যাগ ৮‘শ থেকে বেড়ে এখন এক হাজার থেকে ১২‘শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা ভালোমানের ব্যাগ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে বেড়ে তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায়। দামের কারণে এখন ব্যাগের বেচাকেনাও কম। আগে যে ক্রেতা খুব ভালো কোয়ালিটির নিতেন, এখন তিনি মধ্যমমানের ব্যাগ কেনেন। অনেকেই পুরোনোটা দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছে।

এদিকে নিত্যপণ্যের দামে লাগাম না টানতে পারলেও শিক্ষা উপকরণের দামে লাগাম টানতে অচিরেই সরকারের কার্যকারী প্রদেক্ষেপ চান অভিভাবকরা।

প্রতিনিধি/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়