শিরোনাম
◈ বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নিল সৌদি সরকার  ◈ আজারবাইজানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চান প্রধান উপদেষ্টা ◈ বিদ্যুতের দামে সমতা চায় ডেসকো-ওজোপাডিকো ◈ সারাভারতে বাজছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অসংখ্য ঘৃণাপূর্ণ সঙ্গীত ◈ অপকর্ম বন্ধ না করলে বিএনপিকেও ছুড়ে মারবে জনগণ: মির্জা ফখরুল ◈ বাংলাদেশিকে ধরতে এসে পা ধরে মাফ চাইল বিএসএফ (ভিডিও) ◈ ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে গুজরাটে আটকদের অধিকাংশই ভারতীয় মুসলিম ◈ সারজিস আলমের চ্যালেঞ্জ, কড়া জবাব দিলেন রাশেদ খান ◈ পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ লাভে প্রলোভনে পড়ে প্রতারিত হবেন না: পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ◈ টাই‌ব্রেকা‌রে আবাহনীকে হারিয়ে ফেডা‌রেশন কাপ জিত‌লো বসুন্ধরা কিংস

প্রকাশিত : ০৫ মার্চ, ২০২৩, ১২:৫২ দুপুর
আপডেট : ০৫ মার্চ, ২০২৩, ০১:০৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে গারো পাহাড়

পাহাড়

তপু সরকার, শেরপুর: মেঘালয় রাজ্য সংলগ্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পাহাড়ঘেরা সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার তিন উপজেলা-ঝিনাইগাতি, শ্রীবর্দী ও নালিতাবাড়ী। যদিও মূল গারো পাহাড় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মধ্যে পড়েছে। তবে কিছু অংশ অসম রাজ্যে এবং কিছু অংশ শেরপুর জেলার ওই তিন উপজেলা সীমান্তে যে পাহাড় রয়েছে, তা গারো পাহাড়ের আংশিক এবং নামায় পড়েছে।

ভারতীয় অংশের মূল গারো পাহাড়ের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ফুট উঁচু। আর এর বিস্তৃত দৈর্ঘ্য প্রায় ৮ হাজার বর্গকিলোমিটার এবং বনাঞ্চল রয়েছে প্রায় ২০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে। অন্য দিকে শেরপুর অঞ্চলের পাহাড়ের সর্বোচ্চ উচ্চতা প্রায় ২০০ থেকে ৫০০ ফুট মাত্র। তবে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানবসৃষ্ট বন ধ্বংসের কারণে শেরপুর অঞ্চলের গারো পাহাড় আজ হুমকির মুখে। এদিকে জেলার ৫টি উপজেলার মধ্য ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ীসহ তিনটি উপজেলা নিয়ে সিমান্তবর্তী গাড়ো পাহাড়। 

জানা গেছে, শেরপুর অঞ্চলের এই গারো পাহাড়ের উচ্চতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। প্রতি বছর প্রায় ৩/৪ ইঞ্চি করে মাটি ক্ষয় হয়ে দেবে যাচ্ছে এই গারো পাহাড়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাহাড়ে অনাবৃষ্টি ও খড়ায় বনের গাছ শুকিয়ে মরে যাওয়া, বনের বন্য প্রাণী ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখ-পাখালিও অন্যত্র বাসা বেঁধেছে, আবার অনেক পশু-পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেছে বন থেকে।

সাম্প্রতিক জেলা নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাওঁ ইউনিয়ন পোড়াগাওঁ মৌজা বাতকুচি গ্রাম এর ২২ টি পরিবার  প্রায় ৩৫ বছরের দখলীয় পাহাড়ী ঢিলাঁ জমি সাব ক্রয় এর বায়নাকৃত বসত বাড়ীর ১০ একর বিশ শতাংশ ভূমি জবর দখল করে এবং পার্শ্বে জবরদখল কারীরা আরেকটি ঢিঁলা ক্রয়ের কথা বলে বেকু দিয়ে পাহাড়ী ঢিলাকেটে সমতল করে তাদের বাড়ী করার জন্য কি করে রেজিষ্ট্রি করে দেবে বলে উচ্ছেদ করেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় ভুক্তভুগিরা বলেন আমরা ২২ টি পরিবারের ৩৫ বছর যাবৎ বসত বাড়ি ঘর করে নানা প্রজাতির গাছগাছরা রোপন করে এবং নিন্ম তফসিল বর্নিত জমিতে বিদ্যমান ছিলাম। 

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কতৃর্ক সরকারী বা আধা-সরকারী বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করা যাবে না। বর্তমান সময়ে পাহাড় কাটার মহোৎসব লেগেছে।
 
পাহাড় ও টিলা অর্থ প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট পার্শ্ববর্তী সমতল ভূ-পৃষ্ট হতে উঁচু মাটি অথবা মাটি ও পাথর অথবা পাথর অথবা মাটি ও কাঁকড় অথবা অন্য কোন কঠিন পদার্থ সমন্বয়ে গঠিত স্তুপ বা স্থান এবং সরকারি রেকর্ডপত্রে পাহাড় বা টিলা হিসাবে উল্লিখিত ভূমি। সেখানে পাহাড় কাটা সম্পর্কে বাধা-নিষেধ। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কতৃর্ক সরকারী বা আধা-সরকারী বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন করা যাবে না। এ ছাড়া পাহাড়ের বিভিন্ন ছড়ায় পানি না থাকায় মাছসহ অন্যান্য প্রাণীর খাবার পানি সংকট দেখা দেওয়ায় বন থেকে ইতিমধ্যে অনেক প্রাণী ও পাখি বিলুপ্ত হওয়ার কারণ হিসেবে দেখছেন পশু-পাখিবিশেষজ্ঞরা।

এদিকে ঝিনাইগাতী, শ্রিবর্দী ও নালিতাবাড়ী তিনটি উপজেলায় রয়েছে স্বাধীনতার অন উওর সেখানে রয়েছে লক্ষাদিক রিফুজি যাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বন-পাহাড়ে এসে ওইসব ভূমিহীনরা বসতি স্থাপন করে অরণ্যকে করে ফেলেছে লোকালয়। বাংলাদেশে পাহাড়ি ভূমি কাটা-ছাঁটা নিষিদ্ধ। এই কথাটা আইনে সহজ ভাষায় লেখা থাকলেও আইনের প্রয়োগ কতটা দৃশ্যমান?

শেরপুর জেলার ৩টি রেঞ্জের সীমানা দূরত্ব প্রায় ৩৬ কিলোমিটার। এই ৩৬ কিলোমিটার দূরত্বের পাহাড় ও বনাঞ্চল দেখাশোনার জন্য কর্মকর্তা ও বনরক্ষীসহ লোকবল থাকলেও এ অঞ্চলে চোখ বুলালে হতাশার প্রমাণ মিলবে সহজেই। চারদিকে পাহাড় কাটা-ছাঁটা-খোঁড়ার যেন মহোৎসব চলছে। বর্ষা আসার আগেভাগে শুষ্ক মৌসুমে বাতকুঁচি বুরুংঙ্গা কালাপানি, এলাকায় পাহাড়ী বনের সম্পওি ১২ একর ৯৪ শতাংশ জমি নিয়ে রির্সোটের নামে কিনে নিয়ে পার্শ্বে থাকা ২০/২৫ পরিবার কে বনের ভিতর ঢিলা কেটে সমতল করে তাদের নামে লিখে দেয়া এবং পাহাড়ের ভিতর কৃষি ফসলি জমি ভরাট করে দখল নেয়া মনে হয় সেখানে তারা নিজেরাই সরকার। তারাও স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বনে বাগান করা উপকার ভোগী নামে বনরক্ষী ও বন কর্মকর্তারা তাদের যোগসাযোগে চলছে বনের গাছ ও বনের ভুমি দখলদারিত্বর নামে বন পাহারা দেওয়া।

সমচচুড়া, দাউধরা, বাতকুচি, মধুটিলা অঞ্চলের প্রায় সর্বত্র ভূমিদস্যুরা পাহাড়-টিলা কেটে-ছেঁটে-খুঁড়ে ছিন্নভিন্ন অবস্থায় ফেলে রাখে। বৃষ্টিপাত যখন শুরু হয় সেসব কাটা-ভঙ্গুর পাহাড় টিলার ভেতরে বৃষ্টির পানি ঢোকে। তখন একেকটি পাহাড়-টিলা ও ঢালুতে ভয়াবহ ধস নামতে পারে। এভাবে পাহাড়ের সর্বনাশ ঘটিয়ে সারি সারি বাড়িঘর, অবৈধ স্থাপনা গজিয়ে উঠছে ব্যাঙের ছাতার মতো।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নামে মাফিয়া যার দখলে রয়েছে শত একর ভুমি প্রভাবশালী মহল এবং রাজনৈতিক নেতা এবং পূর্বে ও বর্তমানের এক শ্রেণির অসাধু বনকর্মী। বাধা দিলেই উল্টো দখলকারীরা এক হয়ে হামলা-মামলা ও আন্দোলন করে। বনের জমি নিয়ে আদিবাসী, বাঙালি ও বন বিভাগের একে অপরের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাড়ছে। আবার সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে দখলকারীদের সঙ্গে আপোষ করারও বিস্তর অভিযোগ আছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে আগামী দশকে এটাকে আর বনভূমি বলা যাবে না। কোনো গাছপালা থাকবে না, ছোট ছোট টিলা হয়ে যাবে গ্রাম ও শহর। ফলে গারো পাহাড় হয়ে যাবে পাহাড়ি নগর কিংবা লোকালয় গ্রাম।

রাংটিয়া দায়িত্বরত কর্মকর্তা বলেন, মকরোল বলেন হলদীগ্রাম, গাড়োকোণা, গোমরায় সবজি চাষ হচ্ছে এটা শুনেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। ইতিমধ্যে রাংটিয়া বিটের গান্ধিগাঁও গ্রামের দুটি অবৈধ দখলদারের নির্মাণাধীন ঘর উচ্ছেদ করেছি। উচ্ছেদ অভিযান চলবে।

পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতাদের সাথে কথা হলো তারা বলেন গারো পাহাড়ের গহীন অরণ্যে অবৈধভাবে সবজি ও লেবু আবাদের ফলে পাহাড়ের গঠন এবং ভূমি ক্ষয়সহ প্রাকৃতিক বন নষ্ট হচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভূমি ধস ঠেকাতে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম ওয়ারেজ নাঈম বলেন, দখলদারদের অত্যাচারে পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এই দখলদারদের বিরুদ্ধে সরকারের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত এবং আমি নিজেও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।

জেলা প্রশাসক মোমিনুর রশীদ বলেন, সবজি চাষ কিংবা বাড়ি-ঘর নির্মাণের নামে কাউকে বনের জায়গা দখল করতে দেওয়া হবে না। তবে পূর্বে যেসব বাড়ি-ঘর নির্মাণ হয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে সরকার চিন্তা করবে।

প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসেন চৌধুরী জানায়, অবৈধ দখলদারদের তালিকা আমাদের কাছে রয়েছে। আমরা সুনির্দিষ্ট অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করছি। প্রতি বছর কী পরিমাণ জমি দখল হচ্ছে, সেটাও আমরা পর্যবেক্ষণ করছি এবং সে অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করছি। শেরপুরের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়েই দখল হয়ে যাওয়া বনভূমি উদ্ধার করতে হবে। সম্পাদনা: অনিক কর্মকার

প্রতিনিধি/একে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়