শিরোনাম

প্রকাশিত : ২০ মে, ২০২২, ১২:১২ দুপুর
আপডেট : ২০ মে, ২০২২, ১২:১২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নরসিংদীর পলাশে এক ইউনিয়নেই ১৪ ইট ভাটা

নরসিংদীর পলাশে কৃষি জমিতে ইট ভাটা

মাহবুব সৈয়দ, পলাশ: [২] বৈধ ও অবৈধ ১৪ ইট ভাটা রয়েছে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নে। এসব ইট ভাটার কারণে অব্যাহত বায়ু দূষণে এলাকাটি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। নিময়নীতি না মেনে পাশাপাশি ফসলী জমিতে এসব ইটভাটা স্থাপন হলেও নেই প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ। নিয়মনীতি না মেনে ফসলী জমিতে ইটভাটা স্থাপনের দায় নিতে রাজি নয় স্থানীয় কৃষিবিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন।

নরসিংদীর পলাশে কৃষি জমিতে ইট ভাটা

[৩] পরিবেশ অধিদপ্তর নরসিংদী জেলা কার্যালয়ের তথ্য মতে, জেলায় ২৫ অবৈধসহ মোট ইটভাটার সংখ্যা ১৫০। এর মধ্যে পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নে ১৪ ইটভাটার মধ্যে ৯টি বৈধ ও ৫টি অবৈধ। তবে স্থানীয়দের হিসাব মতে এই ইউনিয়নে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা আরও বেশি।

[৪] সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, এক বা দুই ফসলী কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপনের নিয়ম না থাকলেও এখানে প্রায় সব ইটভাটা-ই ফসলি জমির ওপর স্থাপন করা। দীর্ঘ দিন ধরে নিয়মনীতি না মেনে ধানসহ বিভিন্ন ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে কাজৈর, ইসলামপাড়া, গালিমপুর, ভিরিন্দা ও সান্তানপাড়ার ইটভাটায়। ট্রলি দিয়ে দিন ও রাতে সমানতালে মাটি ও ইট পরিবহনের কারণে ভেঙে পড়েছে ইউনিয়নের প্রায় সকল রাস্তাঘাট। 

নরসিংদীর পলাশে কৃষি জমিতে ইট ভাটা

[৫] স্থানীয়রা জানান, ইটভাটার প্রভাবশালী মালিকদের এসব আগ্রাসনের প্রতিবাদ করলে এলাকাবাসী ও কৃষকদের হুমকি দেয়া হয়। রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লে ও রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের জন প্রতিনিধিরাও। কৃষি জমিতে ভাটা স্থাপনের নিয়ম না থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদ ও কৃষি বিভাগের ছাড়পত্র পেয়ে ভাটা স্থাপনের অনুমতি পেয়ে যাচ্ছে ভাটা মালিকরা।

[৬] নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইটভাটা সংলগ্ন বাসিন্দারা বলেন, যে সব জমিতে ভাটা গড়ে তোলা হয়েছে এসব জমিতে ধানসহ কলা ও সবজি চাষ হতো। পরে এসব জমিসহ আশেপাশের নিকটবর্তী জমিগুলোতে গড়ে উঠেছে একাধিক ইটভাটা। ইটভাটার কালো ধোয়া ও ধুলাবালির কারণে আশেপাশের সব জমি এখন আবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কৃষি জমির মাটি কেটে ভাটায় নিয়ে বড় বড় গর্ত করার ফলে আশেপাশের ধানের জমিও ভেঙে পড়ছে। ১৪ ইট ভাটার প্রায় ১০০ ট্রলি চলাচল করে। ট্রলি চলাচলের কারণে প্রায় সব রাস্তাই ভেঙ্গে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া বেশ কিছু সংখ্যক সড়ক ভেঙে যাওয়ায় চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বৃষ্টি হলে পায়ে হেটে ও চলাচল করা দায় হয়ে পড়েছে। প্রতিবাদ করলে হুমকি দেয়া হয়। অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করাসহ নিয়মনীতি না মেনে ইটভাটা স্থাপন করা না হলে এলাকার কৃষি, জীববৈচিত্র, আবাসন ও পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়বে বলে জানান স্থানীয়রা।

[৭] পরিবেশ অধিদপ্তর নরসিংদী জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মুহম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, ফসল হয় না এমন জমিতে কৃষি বিভাগের অনাপত্তিপত্র পেলেই ইটভাটা স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়ে থাকে। কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয় না। তবে আগে যেসব ইটভাটা অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে সেগুলোর ছাড়পত্র বাতিল করে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরে তালিকা পাঠানো হয়েছে।

[৮] কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নরসিংদীর উপ-পরিচালক ছাইদুর রহমান বলেন, কৃষি জমিতে ভাটা স্থাপন যেন না করতে পারে সে জন্য সকল কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া আছে। কোনো কৃষি জমিতে ভাটা করার অনাপত্তিপত্র দেয়া হয় না। কোথাও এর ব্যতয় হয়ে থাকলে সরেজমিন গিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

[৯] নরসিংদীর জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান বলেন, নতুন ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে সার্বক্ষনিক নজর দারি রয়েছে। অনুমতিবিহীন কোনো ইটভাটা নরসিংদী জেলায় চলতে পারবে না। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করাসহ এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়