শিরোনাম
◈ কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনে জাতীয় গ্রিডের টাওয়ার নদীতে বিলীন ◈ ভারতে থাকার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, কোন আইনের বলে ভারতে থাকবেন শেখ হাসিনা? ◈ (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার ◈ স্থিতিশীল ডলারের দর, ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ◈ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘গ্যারান্টিতে’ নগদ টাকার সংকট কাটছে যে ৫ ব্যাংকের ◈ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচার চলছে, জাবিতে কোন কমিটিই নেই : ছাত্রদল ◈ গণপিটুনিতে মৃত্যু: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দুঃখপ্রকাশ, বৈষম্যবিরোধীদের নিন্দা, ফেসবুকে নানা সমালোচনা ◈ ভারতের গোলা যাচ্ছে ইউক্রেনে, ক্ষুব্ধ রাশিয়া ◈ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সুনামগঞ্জে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার গ্রেফতার ◈ মব জাস্টিস শুধু সহিংসতা ও অন্যায় সৃষ্টি করে: সমন্বয়ক হাসনাত

প্রকাশিত : ২৬ এপ্রিল, ২০২২, ০৮:৩৭ রাত
আপডেট : ২৬ এপ্রিল, ২০২২, ০৮:৩৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সুনামগঞ্জে সংবাদ সম্মেলনে পাউবো ও কৃষি বিভাগের তথ্য প্রত্যাখ্যান করেছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন

আল-হেলাল :  [২] সাম্প্রতিক দুর্যোগে ফসলহানী ও পিআইসির কাজে অনিয়মের সঠিক চিত্র তুলে ধরার বিপরীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড পাউবো ও কৃষি বিভাগের দেয়া সকল আজগুবি তথ্য প্রত্যাখ্যান করে সুনামগঞ্জে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। 

[৩] মঙ্গলবার দুপুরে শহরের মোক্তারপাড়া আবাসিক এলাকাধীন হক কনফারেন্স হলে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুনামগঞ্জ হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব বিজন সেন রায়। এসময় হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড চিত্তরঞ্জন তালুকদার,লেখক গবেষক সুখেন্দু কুমার সেন রায়,কবি ইয়াকুব বখত বহলুল,শহীদনুর আহমদ ও কুদরত পাশাসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

[৪] লিখিত বক্তব্যে বিজন সেন রায় বলেন, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরের এবার প্রায় ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর বোরো ধান আবাদের মধ্যে দিয়ে জেলার কৃষকদের মধ্যে আশার আলো সঞ্চারিত হলেও মৌসুমের শুরুতেই একের পর এক হাওর ডুবির ঘটনা ও শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে ফাটল দেখা দেয়ায় গভীর উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে। জেলার অনেক হাওরের কৃষক সর্বস্ব হারিয়ে মানেবতর দিন কাঠছে। 

[৫] সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক মন্ত্রী হাওর পরিদর্শনে এসে অনিয়ম দুর্নীতির স্বপক্ষে বক্তব্য দিয়ে হাওরবাসীকে হতাশ করছেন। হাওরে এখনো অর্ধেকের বেশি কাঁচা ধান থাকলেও কৃষি বিভাগ খাতা কলমে ধান কেটে পার্সেন্টিজ বাড়িয়ে কৃষকের সাথে  মিথ্যাচার করছেন। বাঁধ ভেঙ্গে একের পর এক হাওর তলিয়ে যাওয়ার যে ঘটনা ঘটছে আমাদের সংগঠনে পক্ষ  থেকে প্রতিদিন সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরির্দশন করা হচ্ছে। 

[৬] তিনি বলেন, চলতি মাসের ২ তারিখ তাহিরপুর উপজেলার ২৪ নং পিআসির নজরখালির বাঁধ ভেঙ্গে টাঙ্গুয়ার হাওরের অন্তত ১২০০ হেক্টর কাঁচা ধান তলিয়ে যায়। ৪ এপ্রিল ছাতক উপজেলার গোয়া-পান্ডুয়া,নাগা উন্দা,পুটিয়া ও জল্লার হাওরের ৭১ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। একই দিন শাল্লা উপজেলায় বাঁধ উপচে বাঘার হাওরের ৪২৫ হেক্টর এবং পরদিন ৫ এপ্রিল নদীর পানি উপচে কৈয়ারবনন্দ ও পুটিয়ার হাওরের ৪০ হেক্টর কাচা ধান তলিয়ে যায়। একই দিন জেলার ধর্মপাশা উপজেলার ৭৫,৭৬,৯২,৯৩ নং  পিআইসির চন্দ্রসোনার থালা উপ প্রকল্পের বাঁধ ভেঙ্গে চন্দ্র সোনার থালা হাওরের প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। একই দিন ৫৪ নং পিআইসির সোনামড়ল হাওর উপ প্রকল্পের বাঁধ ভেঙ্গে ফসল তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। 

[৭] ৬ এপ্রিল নদীর পানি উপচে শাল্লা উপজেলার গোব্বরহরি হাওরের ৪০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। একই দিন দিরাই উপজেলার দ্বিতীয় বৃহত হাওর চাপতির হাওরে উপ প্রকল্পের ১৬ নং পিআইসির বৈশাখির বাঁধ ভেঙ্গে চাপতির হাওরের প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। এতে দিরাই উপজেলার তাড়ল, জগদল, করিমপুর ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। একই দিন ৬ এপ্রিল দিরাই উপরেজলার টাংনির হাওরের জারালিয়া খেয়াঘাটের বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবশে করে প্রায় হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি মুখে পড়ে। পরবর্তিতে কৃষকরা বাঁধটি মেরামত করেন। 

[৮] ৮ এপ্রিল  তাহিরপুর উপজেলার ফল্লিয়ারদাইড় আফার দিয়ে পানি প্রবেশ করে এরালিয়া হাওরের ১৬০০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। এবং দিন মধ্যনগর উপজেলার পাওধোয়া বাঁধ ভেঙ্গে মুক্তারখলা হাওরের ৯৬৫ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। ১৭ এপ্রিল গুরমার বর্ধিত অংশ উপপ্রকল্পের ২৭নং পিআইসির বাঁধ ভেঙ্গে গুরমার হাওরের ২ হাজার হেক্টর ধান তলিয়ে যায়। একই দিন দিরাই উপজেলার হুরামন্দিরা উপ-প্রকল্প ৪২ নং পিআইসির বাঁধ ভেঙ্গে হুরামন্দির বাঁধ ভেঙ্গে ১২০০ হেক্টর তলিয়ে যায়। এছাড়া শান্তিগঞ্জ উপজেলার আইডরা বিল, পুরাইডরা, নউল্লা, বইশমারা, বারকুল, সিলাইন, ডাবরবিল, মরা ডাবরের ৪৮৫ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। এছাড়া এইদিন নদীর পানি উপচে জগন্নাথপুর উপজেলার গলাকাটা হাওর ও শেওরারবন হাওর ৩২৫ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে যায়। ২০ এপ্রিল মধ্যনগরের ইন্দরপুর বাঙ্গালভিটার বাঁধ ভেঙ্গে রাঙ্গামাটির হাওরের ১০০ হেক্টর, জগন্নাথপুর হাপাতির হাওরের ১০০ হেক্টর, জগন্নাথপুর আহমদাবাঁধ হুন্দাবিললের ৭৫ হেক্টর ধান তলিয়ে যায়।

[৯] ২১ এপ্রিল কোন্দানাল ব্রিজের পুটিয়ার হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে ছাতক ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ৫০০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। সর্বশেষ ২৪ এপ্রিল শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওর উপ প্রকল্পের ৮১ নং বাঁধ ভেঙ্গে প্রায় ২০০০ হাজার ধান তলিয়ে গেছে। গত ২ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙ্গে ও নদীর পান উপচে ছোট বড় ৩১টি হাওরের ১৭ হাজার ৪৭৬ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে।  এই বিপুল সংখ্যক পরিমাণ ধান তলিয়ে গেলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি সম্প্রশাসরন অধিদপ্তর রহস্যজনক কারনে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য তুলে ধরছেন না। এছাড়াও এখনো হাওরে ৫০% ধান কাটা না হলেও খাতাকলমে ধান কাটছে তারা। ছায়ার হাওরের মোট আবাদের ৪০ ভাগ ধান তলিয়ে গেলেও কৃষি বিভাগ বলছে ৯৫ ভাগ ধান কেটেছে । আমরা তাদের এমন তথ্য প্রত্যাখান করছি। 

[১০] বিজন সেন রায় আরোও বলেন,আমরা বাঁধ নির্মাণের শুরু থেকেই বলে আসছিলাম কাজে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি আর লুটপাট হচ্ছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাঁধ ভাগিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বাঁধের কাজে অনিয়ম দুর্নীতির কারনে পাহাড়ি ঢলে দুর্বল বাঁধ ভেঙ্গে কৃষকের সলিল সমাধি হয়েছে। যেসব বাঁধ ভেঙ্গে ফসল তলিয়ে গেছে তদন্ত করে পিআইসিসহ সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনার দাবি করছি। 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়